২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মাহফুজ আলমের ব্রিফিং

জনগণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা রুখে দিয়েছে

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা হানাস : নয়া দিগন্ত -


ব্যক্তির দায় সংগঠনের ওপর চাপানো উচিত নয়। তাই কোনো সংগঠনের নিষিদ্ধের আলোচনা এখন পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদে হয়নি বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ইসকন নিষিদ্ধ হচ্ছে কি না- সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। তার মতে, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনরা মিলে রুখে দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক এবং সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সরকারের আরেকজন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বক্তব্য রাখেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন। তাদের মতে, আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধান হচ্ছে। ফলে রাজপথে নামার আগে সরকারের সাথে আলোচনা করা উচিত।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ‘আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সঙ্ঘের (ইসকন)’ সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরপর ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি আসছে। বিষয়টি আদালতে একজন আইনজীবী রিট আবেদন করলে কোনো আদেশ দিতে অস্বীকার করেছে হাইকোর্ট। বিষয়টি সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি দেশে ব্যাপক আলোচিত ইস্যু।
ইসকন নিষিদ্ধ হচ্ছে কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, কোনো সংস্থা নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো আলোচনা সরকারের মধ্যে হয়নি। দাবি অনেক উঠতে পারে। এর সপক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচিও আসতে পারে। কিন্তু ব্যক্তির অপরাধের সাথে সংস্থার অপরাধকে জড়িয়ে ফেলছি না। একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। এতে তিনি অভিযুক্ত হতেও পারেন, আবার নাও হতে পারেন। এটি আদালত বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, আজকেও পত্রিকাতে দেখলাম ইসকনের পক্ষ থেকে একটি সম্মেলনে বলা হয়েছে, যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার সাথে ইসকনের কোনো সম্পর্ক নেই।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, কিছু হলেই দেশে একটা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এটি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি, সবকিছুই তো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হচ্ছে। ফলে প্রথমে রাজপথে না গিয়ে সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করলে মানুষের মনে আশার জায়গা সঙ্কুচিত হবে না। আমরা ছাত্রদের নিয়ে কথা বলেছি। শিক্ষার্থীদের এতবড় আত্মত্যাগকে ভিত্তি করে আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি। সংস্কার, বৈষম্য দূর করা এবং গণতন্ত্র সুগম করার কথা বলছি। ফলে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছি, তাদের প্রতি মানুষের আস্থা ধরে রাখতে হবে। ছোট ছোট বিরোধ নিয়ে এমন কিছু করার উচিত নয়, যা আমাদের জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রাখার লড়াই প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো বারবার আমরা সম্প্রীতির কথা বলেছি। এই সম্প্রীতিকে আমরা মূল্যবোধ হিসেবে ধারণ করি। গত বুধবার দেশের পরিস্থিতি যে শান্ত ছিল, এটি তার প্রমাণ। অনেক উসকানি আসতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সহসা এতে প্ররোচিত হবে না। সাধারণ মানুষের এই অবস্থান, সরকারেও অবস্থান। অপরাধের বিচারের সাথে আমরা সম্প্রীতিকে মিলিয়ে ফেলব না।

দেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার সচেতন এবং চেষ্টা করছে। তবে কবে নির্বাচন হবে, তা সংস্কার কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করছে। রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের জন্য ৬টি কমিশন হয়েছে। তাদেরকে সময় দেয়া হয়েছে ডিসেম্বর পর্যন্ত। সংস্কার প্রস্তাবগুলো এলে বলা যাবে, সংস্কার শেষ করতে কত দিন লাগবে। কারণ তাদের প্রস্তাবগুলো নিয়ে জনগণ কথা বলবে। এরপর চূড়ান্ত প্রস্তাব আসার পর নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কথা হবে। তবে বারবারই বলা হচ্ছে, যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে দেয়া হবে।
সমন্বয়কদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি সরকার হালকা করে দেখছে না। সমন্বয়করা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার যেভাবে চেষ্টা করছেন, তা অনেকেরই স্বার্থে আঘাত লাগবে। ফলে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তোলা হয়েছে। তবে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো তদন্ত করছে। আদালতের নিরাপত্তা ব্যাপারে তিনি বলেন, সবাইকে সংযত থাকতে হবে। কারো বিরোধিতা থাকলে হিংসাত্মক প্রক্রিয়ায় প্রকাশ করলে ভালো ফলাফল মিলবে না।

চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানান, আরো মামলা হওয়ার কথা রয়েছে। যারা এর সাথে জড়িত কেউ ছাড় না পায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরির যে অপচেষ্টা ছিল বাংলাদেশের জনগণ, সব রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় কমিউনিটি সবাই মিলে রুখে দিয়েছে। এই বাস্তবতায় গতকাল বিএনপির নেতৃবৃন্দ প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করেছেন, আজকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ দেখা করেছেন। দুটো দল থেকেই বক্তব্য হলো সামগ্রিক ঐক্য। বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে জাতীয় স্বার্থে সবাইকে এক্যবদ্ধ থেকে কিভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়। যেকোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং উগ্রতা কিভাবে রুখে দেয়া যায় সে ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দু’টি দলই তাকে বিভিন্ন ইতিবাচক প্রস্তাব দিয়েছে, কী কী করা গেলে সরকার আরো ভালো করতে পারে। তারা আগের মতোই সরকারকে সহযোগিতা করতে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র ইসকনের ইস্যুই নয়। মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটা সরকারের নজরে আছে। ক্ষতিপূরণসহ এ বিষয়ে আমাদের নজরে থাকবে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে যে ধরনের উত্তেজনা, উন্মত্ততা চলছে সবগুলো দল এবং সব স্টেকহোল্ডারদের সাথে বসে সমাধান করতে পারব আশা করি। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমেরও সহযোগিতা কামনা করেন উপদেষ্টা।
বিএনপি-জামায়াতের এ বিষয়ে প্রস্তাবনা জানতে চাওয়া হলে মাহফুজ আলম বলেন, উনাদের প্রস্তাবনা আছে সব স্টেকহোল্ডারের সাথে বসার জন্য যাতে কোনো ধরনের কমিউনিকেশন গ্যাপ না থাকে।

 


আরো সংবাদ



premium cement