২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলন

ট্রাইব্যুনালে মামলা শিগগিরই : আসামি হতে পারেন হাসিনাও

-


বিডিআর বিদ্রোহের সময় ঢাকার পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার চাইতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাবেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। তারা সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচারের দাবিতে ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শেখ হাসিনাকেও বিচারের মুখোমুখি আনা সম্ভব। তাকেও আসামি করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালী রাওয়া ক্লাবে ‘পিলখানায় ৫৭ অফিসারসহ ৭৪ জনের হত্যার বিচার এবং শহীদ সেনা দিবস ঘোষণার দাবিতে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানানো হয়।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ কর্নেল কুদরত এলাহীর সন্তান অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনসহ পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করবেন। ইতোমধ্যে মামলার প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে।
প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা বিডিআর বিদ্রোহের মামলাটি আপিল ডিভিশনে থাকলেও সর্বশেষ পরিস্থিতি শহীদ পরিবারের সদস্যদের জানা নেই উল্লেখ করে সাকিব রহমান বলেন, মামলা চলাকালীন এই দীর্ঘ সময়টাতে আমাদের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা যারা ভুক্তভোগী তারাই মামলার পরিস্থিতি জানি না, দেশের মানুষ কিভাবে জানবে? এ ছাড়া গত সরকারের সময় যারা ক্ষমতায় ছিল তারাই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারী মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, আমাদের প্ল্যান অব অ্যাকশন হচ্ছে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কমপ্লেইন ফাইল করব।

অ্যাডভোকেট সাকিব বলেন, বর্তমান সরকারের এত দিনেও আমাদেরকে দেয়ার জন্য পাঁচ মিনিট সময় হয়নি, এখন যারা কমপ্লেইন ফাইল করব সেসব শহীদ পরিবারকে সরকার নিরাপত্তা দিবে আশা করছি। কারণ আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব তারা গত সরকারের সময় ক্ষমতায় ছিল। শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। আন্তর্জাতিক আইনের ডকট্রিন অব কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকেও বিচারের মুখোমুখি আনা সম্ভব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে তিনিও দায় এড়াতে পারেন না। তার বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ করব। এ ছাড়া, তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা, বিশেষ করে ডিজিএফআই কর্মকর্তা যারা ছিলেন। তখনকার সময় কিছু সাংবাদিক যারা ভুল ন্যারেটিভ (বিবরণী) সৃষ্টি করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ আনব।
সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকীন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকার চাইবে না গুম-খুনের বিচার হোক। যেহেতু এখন বাধা নেই, তাই বিডিআর সদস্য হত্যার তদন্ত দ্রুত শেষ করে জড়িতদের আইনের মাধ্যমে সাজা দেয়া হোক। জড়িতদের সাজা দিলে দেশের সব মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াবে। হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়ায় যাদের চাকরি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তাদের সুনির্দিষ্ট একটি ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম আইনজীবী হত্যার বিচার ও সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে গাড়ি চাপা দিয়ে যদি হত্যাচেষ্টা হয়ে থাকে তাহলে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিও জানান তিনি।

শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো তুলে ধরেন শহীদ কর্নেল মজিবুল হকের স্ত্রী নাহরীন ফেরদৌসী। তিনি বলেন, গেজেটের মাধ্যমে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করে সেদিন দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার দাবি জানান তিনি। প্রস্তাবিত ইনকোয়ারি কমিশনের অগ্রগতি আমাদের জানানো হোক। ইতঃপূর্বের সব তদন্তের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক। অফিসিয়াল গেজেটে নিহত ৫৭ জন বীর সেনানীকে শহীদের মর্যাদা দেয়া ও পিলখানা ট্র্যাজেডিকে উপযুক্তভাবে স্কুলের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা এবং দ্রুত বিচার শেষ করে আটককৃত নির্দোষ সবাইকে দ্রুত ন্যায়বিচার দেয়ার দাবি জানান তিনি। একইসাথে ঘটনার দ্রুত বিচার শেষ করে আটককৃত নির্দোষ সব মানুষকে দ্রুত ন্যায়বিচার দেয়ার দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফুর রহমান খানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা। এসময় আরো বক্তব্য দেন শহীদ লে. কর্নেল কাজী রবি রহমানের স্ত্রী ডা: ফৌজিয়া রশিদ ও তার ভাই কাজী ওলি রহমান, শহীদ কর্নেল এরশাদের ভাই ডা: মামুন, শহীদ কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান, শহীদ কর্নেল কুদরত এলাহির স্ত্রী লবী রহমান প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement