২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ইসকনের হাতে আইনজীবী হত্যা

চট্টগ্রামের ৭৪ আদালতে কর্মবিরতি বিক্ষোভ

-

উগ্রবাদী ইসকনের সন্ত্রাসীদের হামলায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার ঘটনায় এখনো থমথমে চট্টগ্রাম। নিজেদের সহকর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেন আইনজীবীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বন্ধ ছিল চট্টগ্রামের ৭৪টি আদালতের কার্যক্রম। এ দিন সকাল থেকে আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে বিক্ষোভে শামিল হন আইনজীবীরা। এ সময় তারা একদিকে ছিলেন শোকে বিহ্বল, অন্যদিকে চোখে মুখে ছিল ক্ষোভের আগুন। চট্টগ্রাম আদালতের ইতিহাসে নজিরবিহীন এই ঘটনার ক্ষোভ যেন থামার নয়। ক্ষুব্ধ সতীর্থদের অন্যতম দাবি উগ্রবাদী সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধ করা এবং আলিফের খুনি ও নির্দেশদাতাদের গ্রেফতার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা।

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে বিক্ষোভে জেলা আইনজীবী সমিতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, নিপীড়নবিরোধী আইনজীবী সমাজসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা যোগ দেন। এর আগে দুপুর পৌনে ১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নগরীর লালদিঘীর পাড়, কোতোয়ালি মোড় ঘুরে আদালত এলাকায় এসে আইনজীবীরা সমাবেশ করেন। এ সময় বক্তব্য দেন ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট চট্টগ্রামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট চট্টগ্রামের কো-কনভেনার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শামসুল আলম প্রমুখ।

সমাবেশে আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্যে আছি। চট্টগ্রামের আদালত অঙ্গন ও আশপাশে এ ধরনের ঘটনা আগে হয়নি। গত পরশু ইসকনের এক সন্ত্রাসী নেতাকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলার পর আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন এবং প্রিজন ভ্যানে তোলা হলো। আমরা পরবর্তীতে দেখলাম তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম। ওই প্রিজন ভ্যানে তোলার পর ইসকন সমর্থিত সন্ত্রাসীরা ভ্যান ঘেরাও করে আদালত অঙ্গনে উল্লাস করেছে। এ ঘটনার পেছনে পুলিশের ইন্ধন আছে বলে আমরা মনে করি।’ পুলিশ প্রিজন ভ্যান ফেলে সেখান থেকে চলে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি পত্রিকায় দেখেছি এই চিন্ময় দাস প্রিজন ভ্যান থেকে হ্যান্ডমাইক দিয়ে বক্তব্য দিয়েছে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি অনুরোধ করবো যতগুলো মামলা হবে এই চিন্ময় দাসকে যেন এক নম্বর আসামি করা হয়। যদি তাকে আসামি না করা হয় আমরা মানবো না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য দেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আন্দোলনের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, চিন্ময় দাসের হাতে হ্যান্ডমাইক কিভাবে গেল এর জবাব দিতে হবে। না হলে পুলিশ কমিশনার চট্টগ্রামে থাকতে পারবেন না। আমরা এই পুলিশ কমিশনারকে চাই না। জুলাই ৩৬-এ অনেক রক্ত গিয়েছে। অনেকে শহীদ হয়েছে। তাদের রক্তের সাথে বেঈমানি করা যাবে না।
কোন ধারায় চিন্ময়কে ডিভিশন দেয়া হয়েছে জানতে চেয়ে আইনজীবী নেতা নাজিম উদ্দীন বলেন, আমরা জানতে পেরেছি চিন্ময় দাসকে ডিভিশন দেয়া হয়েছে। জেল কোডের নিয়ম এবং আইনের কোন ধারা অনুযায়ী আপনি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামিকে ডিভিশন দিয়েছেন? জেল সুপার এবং সিনিয়র জেল সুপারকে অনুরোধ করবো আপনারা ডিভিশন প্রত্যাহার করবেন। তাকে সাধারণ কয়েদির সাথে রাখবেন।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহাদ মুস্তফা বলেন, ‘কেন প্রশাসন ওই দিন নিশ্চুপ ছিল আমি জানি না। কেন আমার ভাইকে সে দিন টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে একটা সন্ত্রাসী দলের জন্য আমি জানি না।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাফর ইকবাল বলেন, আমরা আমাদের ভাইকে হারিয়েছি। চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের ১৮৬ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা এটি। আমরা মানুষকে ইনসাফ দিই, অথচ আমরা আজ বে-ইনসাফের শিকার হয়েছি। সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। জঙ্গি সংগঠন ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পাশাপাশি হত্যাকারীদের পক্ষে আমরা যেন কেউ ওকালতনামা না দিই আমি সেই অনুরোধ করবো সবাইকে।
মানববন্ধনের একপর্যায়ে উপস্থিত আইনজীবীরা আগামী ৩ ডিসেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে হওয়া মামলার শুনানি না করার দাবি জানান। আইনজীবী নেতৃবৃন্দও এই দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম আদালতের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো মামলার শুনানি হচ্ছে না।
এ দিকে, সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ছাড়াও সকালে জেলা আইনজীবী সমিতির পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এ ছাড়া বাদ জোহর কোর্ট হিল জামে মসজিদে অ্যাডভোকেট আলিফ স্মরণে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয় এবং অবকাশকালীন প্রীতি সমাবেশ বাতিল করা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement