ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২০
- ৬০ দিনের মধ্যে সেনা প্রত্যাহার করবে ইসরাইল
- সীমান্তসংলগ্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেবে লেবানিজ সেনারা
- ঘরে ফিরছেন দক্ষিণ লেবাননের মানুষ
যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত মঙ্গলবার ঘোষণা দেন, উভয়পক্ষই এ যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিয়েছে। এরপর গতকাল বুধবার ভোর থেকে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর মধ্য দিয়ে লেবানন সীমান্তে ১৪ মাস ধরে চলা লড়াই অবসানের একটি পথ তৈরি হলো, যে লড়াইয়ে হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে, যার সূচনা হয়েছিল গত বছরের গাজা যুদ্ধের জেরে। রয়টার্স।
ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা মঙ্গলবার ১০-১ ভোটে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদনের পরপরই হোয়াইট হাউজে বক্তৃতা দিতে আসেন বাইডেন। তিনি বলেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির সাথে তার কথা হয়েছে, স্থানীয় সময় ভোর ৪টায় যুদ্ধবিরতি শুরু করতে তারা দু’জনেই সম্মত হয়েছেন। “বৈরিতার স্থায়ী অবসানের লক্ষ্য নিয়ে এ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পরিকল্পনা করা হয়েছে। হিজবুল্লাহ এবং অন্যান্য প্রতিরোধ সংগঠনের যা অবশিষ্ট আছে, তাদের আর ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে দেয়া হবে না।”
চুক্তি অনুযায়ী, ইসরাইল আগামী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে পর্যায়ক্রমে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে। একই সময়ে লেবাননের সেনাবাহিনী ইসরাইল সীমান্তসংলগ্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেবে, যাতে হিজবুল্লাহ সেখানে আবার কোনো অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ না করতে পারে। এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে হিজবুল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তাদের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হাসান ফাদলুল্লাহ লেবাননের আল জাদেদ টিভিকে বলেছেন, এ চুক্তি লেবাননের রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সম্প্রসারণকে সমর্থন করলেও হিজবুল্লাহ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
‘হাজারো মানুষ আমাদের প্রতিরোধে যোগ দেবে। আমাদের নিরস্ত্র করার যে প্রস্তাব ইসরাইলি দিয়েছিল, সেটা নস্যাৎ হয়ে গেছে।’ হিজবুল্লাহকে সমর্থন দিয়ে আসা ইরান, ফিলিস্তিনের হামাস কিংবা ইয়েমেন থেকে ইসরাইলে হামলা চালিয়ে আসা হাউছি বিদ্রোহীরা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন এক এক্স পোস্টে লিখেছে, “এ চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় ইসরাইলি ও লেবানিজ কর্তৃপক্ষের সাথে বহু মাস ধরে চলা আলোচনার চূড়ান্ত পরিণতি।”
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী মিকাতি এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বো হাবিব বলেছেন, ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের সাথে সাথে লেবানিজ সেনাবাহিনীর কমপক্ষে পাঁচ হাজার সদস্যকে দক্ষিণ লেবাননে মোতায়েন করা হবে। ইসরাইলের নেতা নেতানিয়াহু বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তিনি প্রস্তুত। কিন্তু হিজবুল্লাহ চুক্তি লঙ্ঘন করলে তার ‘কঠোর জবাব’ ইসরাইল দেবে।
তার ভাষায়, এই যুদ্ধবিরতি ইসরাইলকে এখন ইরানের হুমকির বিষয়ে আরো মনোযোগ দেয়ার সুযোগ করে দেবে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর বিশ্রাম, রসদের সরবরাহ বাড়ানো এবং ফিলিস্তিনের হামাসকে বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।
ঘরে ফিরছেন মানুষ : অন্য দিকে যুদ্ধবিরতি কর্যকরের খবরে দক্ষিণ লেবাননের টাইর বন্দরে গাড়ি ও ভ্যানে করে স্থানীয়দের বাড়ি অভিমুখে ফিরতে দেখা যায়। গাড়িগুলো গদি, স্যুটকেস ও আসবাবপত্রে বোঝাই ছিল। লেবাননের পতাকা উড়তেও দেখা যায় কয়েকটি গাড়িতে। যেসব গ্রামে মানুষ ফিরে যাচ্ছেন, সেগুলোর অধিকাংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবুও বিকল্প বাসস্থানে বাড়িভাড়ার চাপে অনেক পরিবার আর্থিক কষ্টে পড়েছিল। ব্যয় এড়াতে বরং বিধ্বস্ত বাড়িতে ফিরে যাওয়া তাদের কাছে শ্রেয়।
তবে ফিরে যেতে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত ও দক্ষিণ সীমান্তবর্তী গ্রামের মাইস আল-জাবালের বাসিন্দা হুসাম আরউত জানান, পৈতৃক ভিটায় ফিরে যাওয়ার জন্য তিনি অধীর হয়ে আছেন। তিনি বলেছেন, ইসরাইলিরা পুরোপুরি সরে যায়নি। তারা এখনো সীমান্তে রয়েছে। তাই আমরা সেনাবাহিনীর ঘোষণার অপেক্ষা করছি। তারা নিশ্চয়তা দিলেই আমরা গাড়ি চালিয়ে গ্রামে ফিরে যাবো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা