তিন মাস পার হলেই সব ঋণ খেলাপি
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২০
খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ঋণ পরিশোধের শেষ দিন পার হলেই মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। আর তিন মাস পার হলেই সব ঋণ খেলাপি হয়ে যাবে। আগে কৃষি, এসএমই ও মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ছাড় ছিল। অর্থাৎ এসব ঋণ খেলাপি হতে ছয় মাস সময় পেত। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে এক মাস্টার সার্কুলার জারি করা হয়েছে। গতকালই তা ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে ঋণ পরিশোধ আরো বেড়ে যাবে। অন্যথায় বাড়বে খেলাপি ঋণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা আগামী বছরের এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফের প্রতিনিধি দল আগামী ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসবে। এর আগেই তাদের পরামর্শে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হলো। ঋণের কিস্তি ছাড় পাওয়ার শর্ত হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান অর্থনীতির সহায়ক শক্তি হিসেবে একটি শক্তিশালী আর্থিক খাতের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর্থিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে খেলাপিকৃত ঋণের হার হ্রাস করার বিষয়ে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ব্যাংক খাত সংস্কার করার জন্য ইতোমধ্যে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ওই পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার আলোকে আলোচ্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকের সম্পদের প্রকৃত গুণমান নিরূপণ করা সম্ভব হবে।
যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারটি ১ এপ্রিল ২০২৫ সাল থেকে কার্যকর হবে সেহেতু ব্যাংকগুলো এই নীতিমালার পরিপালনের ক্ষেত্রে প্রস্তুতি গ্রহণের পর্যাপ্ত সময় পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে সবধরনের ঋণের ক্ষেত্রে কিস্তি পরিশোধের শেষদিন অর্থ পরিশোধ না করলেই পরদিন থেকে ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ দেখাতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সাথে মেয়াদোত্তীর্ণের সময়সীমা তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে হলে নিম্নমান, ছয় থেকে ১২ মাসের মধ্যে সন্দেহজনক ও ১২ মাস বা এর অধিক হলে মন্দ বা ক্ষতিজনক মানে খেলাপি হিসেবে দেখাতে হবে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবৃদ্ধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঋণ খেলাপিকরণ ও প্রভিশনিং নীতিমালা আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। এ জন্য ১২ বছর পর বিআরপিডি মাস্টার সার্কুলার নং-১৫ জারি করা হয়েছে। এই সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিংবিষয়ক একীভূত নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধ বা সমন্বয়ের জন্য নির্ধারিত দিনের পরবর্তী দিন হতে তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য হবে। আর মেয়াদোত্তীর্ণের সময়সীমা ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে হলে নিম্নমান, ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে সন্দেহজনক ও ১২ মাস বা এর অধিক হলে মন্দ বা ক্ষতিজনক মানে খেলাপি করতে হবে। একই সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড ঋণের ক্ষেত্রে ঋণস্থিতির ১ শতাংশ, স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে ঋণস্থিতির ৫ শতাংশ জেনারেল প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া খেলাপিকৃত ঋণের ক্ষেত্রে নিম্নমান হলে প্রভিশনের ভিত্তির ওপর ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক হলে প্রভিশনের ভিত্তির ওপর ৫০ শতাংশ ও মন্দ বা ক্ষতিজনক হলে প্রভিশনের ভিত্তির ওপর ১০০ শতাংশ স্পেসিফিক প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যদি কোনো ঋণ বা অগ্রিম সাব-স্টান্ডার্ড এবং ডিএফ মানে খেলাপি করা হয়, তাহলে ওই ঋণের ওপর অর্জিত সুদ আয় অ্যাকাউন্টে জমা করার পরিবর্তে সুদের সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে। কোনো ঋণ বা অগ্রিম ক্ষতিজনক মানে খেলাপি করা হলে একই অ্যাকাউন্টে সুদের চার্জ করা বন্ধ হয়ে যাবে। অন্য কোনো বিশেষ কারণে কোনো ক্ষতিজনক মানে ঋণ অ্যাকাউন্টে কোনো সুদ চার্জ করা হলে সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে তা সংরক্ষণ করা হবে। পুনর্নির্ধারিত ঋণের ক্ষেত্রে অবাস্তব সুদ সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আয় অ্যাকাউন্টে জমা করা যাবে না। একই সাথে এ ধরনের ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ফাইল করা পর্যন্ত সময়ের জন্য সুদ ও মূল পরিমাণের জন্য একই ফাইল করার জন্য ঋণ অ্যাকাউন্টে মামলা চার্জ করা যেতে পারে। কিন্তু এভাবে লোন অ্যাকাউন্টে ধার্যকৃত সুদ সুদের মধ্যে সংরক্ষণ করতে হবে সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট। এ ছাড়া যদি খেলাপি ঋণ বা এর কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করা হয় অর্থাৎ ঋণ অ্যাকাউন্টে প্রকৃত আমানত কার্যকর করা হয় তাহলে প্রথমে সুদ উল্লিখিত আমানত থেকে আদায় করতে হবে এবং পরে ঋণ সমন্বয় করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা