মিয়ানমারের জেনারেল মিন অংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাইলেন আইসিসির প্রসিকিউটর
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২০
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম আহমেদ খান রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নিপীড়নের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের সামরিক নেতা মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বাংলাদেশের একটি শরণার্থী শিবির থেকে, আদালতের শীর্ষ প্রসিকিউটর করিম খান এক বিবৃতিতে বলেছেন যে তিনি শিগগিরই মিয়ানমারের নেতাদের জন্য আরো ওয়ারেন্টের অনুরোধ করতে চান।
রয়টার্সের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে বলেছে, তিনজন বিচারকের একটি প্যানেল এখন সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা মিয়ানমার ও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের নির্বাসন ও নিপীড়নের জন্য জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে অপরাধমূলক দায় বহন করার কোনো ‘যুক্তিসঙ্গত কারণ’ আছে কি না। তাদের সিদ্ধান্তের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, তবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার জন্য সাধারণত তিন মাস সময় লাগে।
মিয়ানমারের শাসক জান্তার একজন মুখপাত্র এ বিষয়ে রয়টার্সের কলের জবাব দেননি। রয়টার্স ই-মেইলের মাধ্যমে সামরিক সরকারের কাছে মন্তব্যের অনুরোধ করেছে। আইসিসি প্রসিকিউটরের এই পদক্ষেপটি এসেছে যখন তার অফিস ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষা প্রধান ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে ওয়াশিংটন থেকে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছে।
প্রসিকিউটরের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে যে তারা ব্যাপক, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের পর পরোয়ানা চাচ্ছে। এতে বলা হয়, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার জন্য আরো আবেদন করা হবে।
ব্রিটিশ ব্যারিস্টার করিম আহমেদ খান বলেন, ‘মিয়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মাধ্যমে, আমরা আমাদের অংশীদারদের দেখাতে চাই যে, রোহিঙ্গাদের ভুলে যাওয়া হয়নি। তারাও, সারা বিশ্বের সব মানুষের মতো, আইনের সুরক্ষার অধিকারী।’
মিয়ানমার চুক্তিভিত্তিক আইসিসির সদস্য নয়, তবে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের রায়ে বিচারকরা বলেছেন যে আংশিকভাবে প্রতিবেশী আইসিসি সদস্য বাংলাদেশে সংঘটিত কথিত আন্তঃসীমান্ত অপরাধের বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার রয়েছে এবং বলেছেন প্রসিকিউটররা একটি আনুষ্ঠানিক তদন্ত করতে পারে। আইসিসির প্রসিকিউটরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি মিয়ানমার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার জন্য প্রথম আবেদন যা আমার অফিস দাখিল করছে। আরও উদ্যোগ নেয়া হবে। মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং, ২০২১ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেন। তিনি রোহিঙ্গাদের নির্বাসন ও নিপীড়নের জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতন, তাদের বাড়িঘর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ফলে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। রোহিঙ্গা নারীদের গণধর্ষণ, হত্যা এবং অকথ্য নির্যাতনের বিষয়টি বিশ্বে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে বিবেচিত।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন শুরু করে। মিয়ানমার ডিফেন্স সার্ভিসেসের প্রধান হ্লাইং দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশ দেন রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের জন্য। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের সামরিক অভিযান, যা তাতমাদাও নামে পরিচিত, সেই সাথে দেশটির পুলিশকে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা করার নির্দেশ দেয়া হয়। মিয়ানমারে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয় এবং পরে একাধিক ফ্রন্টে সশস্ত্র বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি আইসিসি প্রসিকিউটর করিম আহমেদ খান বাংলাদেশ সফরে এসে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সাথে দেখা করেন। মিয়ানমার বৈশ্বিক আদালতের অন্তর্ভুক্ত নয়, কিন্তু বাংলাদেশ ওই আদালতের সদস্য। ২০১৮ সালে আদালতের বিচারকরা রায় দিয়েছিলেন যে প্রসিকিউটর সদস্য রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে হওয়া অপরাধগুলো দেখতে পারে, যেমন জোরপূর্বক নির্বাসন।
২০১৯ সালে, খানের পূর্বসূরি, ফাতু বেনসুদা, আনুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির তদন্ত শুরু করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন এবং বিচারকরা কমপক্ষে আংশিকভাবে বাংলাদেশ বা অন্য আদালতের সদস্য রাষ্ট্রে সংঘটিত ‘যেকোনো অপরাধ, ভবিষ্যতের অপরাধসহ’ তদন্তের জন্য ইতিবাচক সাড়া দেন। এই পদক্ষেপটি করিম আহমেদ খানের জন্য সীমান্তে পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের জোরপূর্বক এবং শরণার্থী শিবিরের বাইরে অপরাধের বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেয়ার পথ প্রশস্ত করে। ২০২২ সালে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ আদালত, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি পৃথক মামলা করে। গাম্বিয়া এ মামলায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ মিয়ানমারকে দায়ী করে অভিযোগ করেছে। পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ এবং কানাডা আদালতকে মামলায় গাম্বিয়াকে সমর্থন করতে বলে।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। জাতিসঙ্ঘের তদন্তকারীরা বলেছিল যে মিয়ানমারের সামরিক অভিযান রোহিঙ্গাদের ‘গণহত্যার অভিপ্রায়ে’ পরিচালিত হয়েছিল। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে এবং সব সময় বলে যে তারা বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য করে নয়, তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়েছে।
আইসিসি প্রায় পাঁচ বছর ধরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্তের চেষ্টা করলেও কেবল দেশটিতে প্রবেশাধিকারের অভাবের কারণেই তা বাধাগ্রস্ত হয়। এর পরও তদন্তকারীরা সাক্ষীর সাক্ষ্য থেকে বিস্তৃত প্রমাণের মধ্যে বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ সাক্ষী, ডকুমেন্টারি প্রমাণ এবং প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক, ফটোগ্রাফিক এবং ভিডিও সামগ্রী সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিনিয়র ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস কাউন্সিলর মারিয়া এলেনা ভিগনোলি বলেছেন, ‘সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে পরোয়ানা চাওয়ার ব্যাপারে আইসিসি প্রসিকিউটরের সিদ্ধান্ত এসেছে রোহিঙ্গা বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে নতুন করে নৃশংসতার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত এসেছে। যা সাত বছর আগে শুরু হয়েছিল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা