ইসকন-চট্টগ্রামের ঘটনা হাইকোর্টের নজরে : আজ পদক্ষেপ জানাবে রাষ্ট্রপক্ষ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৮
চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সাথে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষের সময় আইনজীবী হত্যার ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যম আসা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে এক আইনজীবী আদালতের স্বপ্রণোদিত আদেশ প্রার্থনা করেন। গতকাল বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই আরজি জানান আইনজীবী মো: মনির উদ্দিন।
এ সময় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামানের বক্তব্যও শোনেন। অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেন, আপনারা পর্যবেক্ষণ করুন সরকার কী করে। দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, এটা কোনো রেজিস্টার্ড সংগঠন নয়, কোনো রাজনৈতিক দলও নয়। তারা একটি মৌলবাদী সংগঠন। এটা সরকারের প্রধান এজেন্ডা। জাতীয় ঐক্য সংহতির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
এরপর আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে আজ বৃহস্পতিবার অগ্রগতি জানতে বলেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবী মনির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ইসকন নিষিদ্ধ করা এবং চট্টগ্রাম, দিনাজপুর ও রংপুরে আপাতত ১৪৪ ধারা জারির আরজি জানিয়েছেন তিনি। পরে এ বিষয়ে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বলেন, ইসকন নিয়ে আজ একজন আইনজীবী দু’টি পত্রিকায় আসা প্রতিবেদন আদালতের দৃষ্টিতে আনেন। স্বপ্রণোদিত রুল ইস্যুর প্রার্থনা করেন। তার প্রার্থনার মূল প্রতিপাদ্য ছিল ইসকনকে যেন নিষিদ্ধ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যাতে নির্দেশ দেয়া হয়, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ ঘটনা তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হয়। ইমার্জেন্সি ঘোষণা করা, অন্তত আগামী দুই সপ্তাহ।
এ পরিস্থিতিতে আদালত আইনজীবীকে ডেকে পাঠান জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালতের সামনে তিনি বলেন, ইসকনের ইস্যুটা দুর্ভাগ্যজনক। যে আইনজীবী এটা এনেছেন, তার হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, এই রক্তক্ষরণ বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ের। এটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। এ ঘটনা ফৌজদারি অপরাধ। সরকার গুরুত্বসহকারে এ ঘটনাকে দেখছে, যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বলেন, এই সংগঠন রেজিস্টার্ড (নিবন্ধিত) কি না, এই সংগঠন নিষিদ্ধ হবে কি না, কী কী ব্যবস্থা নেয়া হবে এগুলো সরকারের পলিসি ডিসিশন (নীতিগত সিদ্ধান্ত)। সরকার এটার খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ আইনিভাবে দেখবে। সবকিছু আদালতের সামনে এসে সুয়োমোটো নিষিদ্ধ করতে হবে, এই প্রক্রিয়ার সাথে আপনাদের (আদালতের) জুডিশিয়াল রিভিউর অ্যাকশন যাওয়া উচিত নয় বলে মনে করি। এটা সাংবিধানিক আইনের সাথে কতটুকু যাবে, তা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। এ কারণে এটা প্রয়োজন মনে করছি না। এটা প্রিম্যাচিউর। দেখেন, সরকার কী করছে। সরকার কিভাবে হ্যান্ডেল করছে। সব পর্যালোচনা করে তারপর যদি হয়, তখন প্রোপার ওয়েতে এলে দেখা যেতে পারে। আদালত বলছেন, কতটুকু প্রোগ্রেস আছে, কাল (আজ) সকালে জানাতে। আমি জানাব।
ইসকন নিষিদ্ধ চেয়ে ১০ আইনজীবীর লিগ্যাল নোটিশ : ইসকনকে আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে সংগঠনটি নিষিদ্ধ ও চট্টগ্রামে রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট সাইফুল হত্যায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন ১০ আইনজীবী। গতকাল ১০ আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আল মামুন রাসেল এই নোটিশ পাঠান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশকারী ১০ আইনজীবী হলেন- মজিবুর রহমান মোস্তাফিজ, নিজাম উদ্দিন, আব্দুল হান্নান ভূঁঞা হৃদয়, তৌহিদুল ইসলাম শান্ত, তাকিুল ইসলাম, মো: মাসুম বিল্লাহ, মো: রাসেল মাহমুদ, মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাহফুজুর রহমান এবং আল নোমান।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, ইসকন একটি উগ্রপন্থী সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে উসকানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা, যার উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি। সংগঠনটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অধিকাংশ মৌলিক বিষয় স্বীকার করে না।
দেশে সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পরিকল্পনা নিয়েই চিন্ময় কৃষ্ণ কাজ করছিলেন এবং এ ধরনের সন্ত্রাসী সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি করে আসছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা