কঠোর হস্তে পরিস্থিতির মোকাবেলা চায় বিএনপি
- মঈন উদ্দিন খান
- ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০২
অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর হস্তে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে না বলে মনে করছে বিএনপি। দলটি দেশে গত কয়েক দিন ধরে যে অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, অবিলম্বে সেটির উন্নতি চায়।
দলের দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, স্বৈরাচারের পতন হলেও তাদের দোসররা এখনো প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারাই এই ধরনের চক্রান্তের সাথে জড়িত। দলটি আরো মনে করছে, পতিত ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে এলে অন্তরবর্তী সরকারসহ গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল ও জনগণের জন্য তা শুভ হবে না। বিএনপি চায় না এই সরকার ব্যর্থ হোক। তাই দেশ যে সঠিকভাবে চলছে না এবং বিদ্যমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে তারা যে উদ্বিগ্ন, সেটি অবহিত করতে শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করবে। এ ছাড়া পতিত ফ্যাসিবাদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে শিগগিরই কর্মসূচি দেয়ারও চিন্তা করছে বিএনপি। এ ইস্যুতে ঢাকায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ দিতে পারে দলটি।
গত সোমবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নানা দাবি নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন রাজধানীতে প্রায় দিনই মিছিল, সমাবেশ ও বিক্ষোভ করছে। এর মধ্যে সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। ঢাকা মহানগরের সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করার ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিক্ষোভ করেন তারা। অবশ্য পরে হাইকোর্টের ওই আদেশের ওপর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা দেয়ায় ঢাকা মহানগরের সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা আপাতত চলতে পারবে। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে সংঘর্ষে জড়ায় রাজধানীর কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজে ভাঙচুরের প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠান দু’টির শিক্ষার্থীরা গত সোমবার যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে এক পক্ষ অন্য পক্ষের ওপর চড়াও হয়। ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের জেরে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চালানো হয় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট। এর বাইরে বেতনভাতা নিয়ে বিভিন্ন গার্মেন্টেও বিরাজ করছে অস্থিরতা। গত সোমবার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আট দফা দাবিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ। বিদ্যমান এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে গত সোমবার রাতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ ১৯টি ছাত্র সংগঠনের সাথে জরুরি বৈঠক করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
ছাত্র সংগঠনগুলো মনে করছে, নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে পতিত আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসতে চাইছে। এখন ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য প্রয়োজন। বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার থেকে এক সপ্তাহ ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি’ পালন করছে ছাত্র সংগঠনগুলো। এর আওতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একতা ও সংহতির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে তারা।
জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিরাজমান এই অরাজক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। নেতাদের অভিমত, অন্তরবর্তী সরকারের মেয়াদ ইতোমধ্যে সাড়ে তিন মাসের বেশি হয়েছে। কিন্তু তারা এখনো প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরকে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত করতে পারেনি। প্রশাসনে রদবদল করা হলেও ঘুরে-ফিরে আওয়ামী আশীর্বাদপুষ্টরাই চলে আসছে। অর্থাৎ সব জায়গায় আওয়ামী লীগের ক্রীড়নকরা রয়ে যাচ্ছে। দেশ ও সরকারকে অস্থিতিশীল করতে তারাই নানান ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে লিপ্ত।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, প্রশাসনে যে আওয়ামী লীগের ক্রীড়নক রয়ে গেছে, সেটার শুদ্ধি অভিযান সরকার ঠিকমতো চালাতে পারছে না। যে কারণে দেশে নানান ধরনের ঘটনা ঘটছে। তারা দেখতে চান, বর্তমান সরকার আরো শক্তিশালীভাবে, কঠোরহস্তে তাদের সব ষড়যন্ত্র-নৈরাজ্য দমন করুক। কিন্তু সেটা হচ্ছে না বলে মনে করে দলটি। কেন হচ্ছে না, সেটাই এখন প্রশ্ন বিএনপির। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত নানান ঘটনায় বিএনপি যে উদ্বিগ্ন, সেটা অন্তরবর্তী সরকারকে অবহিত করতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করবে। এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আগে সেখানে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সাথে বৈঠক করে দলটি। বৈঠকে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ছিলেন। অন্য দিকে মঞ্চের পক্ষে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, জেএসডির শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূম ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সেখানেও দেশের বিদ্যমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। নেতারা মনে করেন, অন্তরবর্তী সরকার পুরোপুরি আমলানির্ভর হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ আমলা পতিত ফ্যাসিবাদের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় সরকার জনআকাক্সক্ষা অনুযায়ী কাজ করতে পারছে না। এসব আমলারাই সরকারকে অস্থিতিশীল করতে দেশের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র করছে। সরকারের উচিত, শক্ত হাতে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা, প্রশাসনকে আওয়ামী দোসরমুক্ত করা। নইলে পতিত ফ্যাসিবাদ আবার পুনর্বাসিত হতে পারে, যেটা কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।
এ দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়। সে আলোকে গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, একই ব্যক্তির পরপর দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারা, উপরাষ্ট্রপতি ও উপপ্রধানমন্ত্রী পদ সৃজনসহ ৬২টি সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে বিএনপি। আজ-কালের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রস্তাবও জমা দিবে দলটি। সংবিধানসহ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে অন্তরবর্তী সরকার গঠিত ১৫টি সংস্কার কমিশনের আলোকে বিএনপিও সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিটি করে। এর মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিটির প্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব:) হাফিজউদ্দিন আহমদ তার প্রতিবেদন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জমা দিয়েছেন। বাকি কমিটিগুলোর রিপোর্টও চূড়ান্ত পর্যায়ে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা