২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ব্যাটারদের ব্যর্থতায় হার বাংলাদেশের

-

১৮১ রানে পিছিয়ে থাকার পরও ইনিংস ঘোষণা করেছিল মিরাজ বাহিনী। সেটির মাজেজা পাওয়া গেছে চতুর্থ দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির খুব কাছে যাওয়া মিকাইল লুইসকে দ্রুতই ফিরিয়ে শুরুটা করলেন তাসকিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ ব্যাটার হিসেবে কেমার রোচকেও ফিরিয়েছেন ডান হাতি এই পেসার। শুরু ও শেষের মাঝে তাসকিন নিয়েছেন আরো ৪ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট নেয়া পেসার তাসকিন নিয়েছেন ৬ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেটের স্বাদ পাওয়া দিনটা পুরোপুরি তার হওয়ার কথা ছিল। তবে এমন স্বপ্ন ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ওপেনারদের লাগাতার ব্যার্থতায় গতকাল শেষ দিনে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩২ রানই করতে পারে মিরাজ বাহিনী। তাতে ২০১ রানে জিতে সিরিজ ১-০ তে এগিয়ে রইল ক্যারিবীয়রা। জ্যামাইকায় পরের টেস্ট শুরু ৩০ নভেম্বর।
এ নিয়ে টানা পঞ্চম টেস্টে হারল লিটন-মিরাজরা। ভারতে দু’টি টেস্ট, তিনটি টি-২০ হেরে দেশের মাটিতে ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছেও দুই টেস্টে ধবলধোলাই হয় বাংলাদেশ। ক্যারিবীয় ভূখণ্ডে গিয়েও তারা সেই ধারাই অব্যাহত রাখল। অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশের সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পুঁজি ছিল ৩৩৩ রানের। বিপরীতে ব্যাটিং ব্যর্থতায় টাইগারদের দৌড় শেষ হয় মাত্র ১৩২ রানে। অ্যান্টিগা টেস্টের চতুর্থ দিন শেষেই বোঝা যাচ্ছিল বাংলাদেশের হারটা কেবল সময়ের ব্যাপার। হলোও তাই। গতকাল টেস্টের পঞ্চম দিনে প্রথম সেশনে মাত্র ৭ ওভার টিকল বাংলাদেশ। শেষ ৩ উইকেটে যোগ হয়েছে মাত্র ২৩ রান। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস থেমেছে মাত্র ১৩২ রানে। হারের ব্যবধান হয়তো আরো একটু কমতে পারত। শরিফুল রিটায়ার্ড হার্ট হলে শেষ হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস।

অ্যান্টিগায় ৩৩৪ রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের প্রথম ওভারেই জাকির হাসানের উইকেট হারিয়েছে সফরকারীরা। কেমার রোচের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন। প্রথম ইনিংসে ১৫ রান করা জাকির এবার থেমেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। সিলসের বলে আউট সাইড এজ হয়ে স্লিপে থাকা জাস্টিন গ্রিভসকে ক্যাচ দিয়েছেন ৬ রান করে।
শান্তর চোটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের টেস্ট দলে জায়গা শাহাদাত হোসেন দিপু সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে ১৮ রান করা ডান হাতি ব্যাটার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন মাত্র ৪ রানে। ফিরতে পারতেন মুমিনুল হকও। তবে শামার জোসেফের বলে ক্যাচ ছেড়ে বাঁ হাতি ব্যাটারকে দু’বার জীবন দিয়েছেন উইকেটকিপার জশুয়া দা সিলভা ও চতুর্থ স্লিপে থাকা মিকাইল লুইস। জীবন পেয়েও রোচকে তার বলে তারই হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন মাত্র ১১।
জোসেফের আগের ওভারে স্লিপে অ্যাথানাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছিলেন মিরাজ। একই ওভারে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে জেইডেনকে ক্যাচ দিয়েছিলেন লিটন দাস। তবে দু’জনের কেউই তাদের ক্যাচ নিতে পারেননি। পরের ওভারে ঠিকই লিটনকে (২২) ফিরিয়েছেন জোসেফ। বাকিদের ব্যর্থতায় শুরু থেকেই ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করছিলেন মিরাজ। চার-ছক্কায় রানও বের করেছিলেন। দলের রান এক শ’ হওয়ার পর হাফ সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল বাংলাদেশের অধিনায়কের সামনে। তবে মিরাজকে হাফ সেঞ্চুরি করতে দেননি জেইডেন। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। মিরাজকে ফিরতে হয় ৪৫ রানে। একটু পর আউট তাইজুল ইসলামও। ৭ উইকেটে ১০৯ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ।

জাকের আলী ও হাসান মাহমুদ শুরু করেন পঞ্চম দিন। দিনের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে হাসান ফেরেন শূন্য রানে। এরপর জাকেরকে সঙ্গ দেন বল হাতে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট পাওয়া তাসকিন। নবম উইকেটে যোগ হয় ১৬ রান। জাকের ব্যক্তিগত ৩১ রানে ফিরলে জুটি ভাঙে। শেষ উইকেটে তাসকিন-শরিফুল জুটিতে আসে তিন রান। ইনিংসের ৩৮তম ওভারের শেষ বলে দৌড়ে রান নেয়ার সময় প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের থ্রোতে পিঠে বল লাগে শরিফুলের। এরপর আর ব্যাট করতে পারেননি তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংস : এর আগে সফরকারীদের চেয়ে ১৮১ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাসকিনের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেছিলেন লুইস। আবেদন না হওয়ায় বেঁচে যান ১ রান করা লুইস। যদিও কয়েক ওভার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের তাকে ফিরিয়েছেন তাসকিনই। প্রথম ইনিংসে ৯৭ রান করা লুইস ফিরেছেন মাত্র ৮ রানে। তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি কেসি কার্টি। তাসকিনের অফ স্টাম্পে পড়ে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে খেলতে গিয়ে স্লিপে থাকা মাহমুদুল হাসান জয়কে ক্যাচ দিয়েছেন। পরের ওভারে আউট হয়েছেন ব্রাথওয়েটও। লাঞ্চ থেকে ফেরার কয়েক ওভার পর কাভেমকে (১৫) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাসকিন। পরের ওভারে আথানাজকে (৪২) নিজের শিকার বানান মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান এক শ’ হওয়ার আগে ফিরেছেন জাস্টিন গ্রিভসও। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা ব্যাটারকে এবার ২ রানে ফিরিয়েছেন তাসকিন। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় থাকা জশুয়া দা সিলভাকে (২২) ফিরিয়ে সফরকারীদের অস্বস্তি আরো বাড়িয়ে দেন তাইজুল ইসলাম। আলজারি (১৭) ও রোচকে পথের কাঁটা হতে দেননি মিরাজ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরের দুই উইকেটই নিয়েছেন তাসকিন। শামার জোসেফকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেটের দেখা পান তিনি। শেষ ব্যাটার হিসেবে স্লোয়ার ডেলিভারিতে রোচকেও ফিরিয়েছেন তিনি। তবে সেখানে অবিশ্বাস্য ক্যাচ ধরা মিরাজের অবদানই হয়তো বেশি। তাসকিনের ৬ উইকেটে ১৫২ রানে অল আউট হয়েছে ক্যারিবীয়রা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস : ৪৫০/৯ ও ১৫২/১০ (ব্র্যাথওয়েট ২৩, লুইস ৮, কার্টি ০*, হজ ৪*, তাসকিন ৬/৬৪, শরিফুল ১/৩)।
বাংলাদেশ ইনিংস : ২৬৯/৯ ও ১৩২/৯ (৩৮ ওভার) (জাকির ০, জয় ৬, মুমিনুল ১১, দিপু ৪, লিটন ২২, মিরাজ ৪৫, লিটন ২২, জাকের ৩১, তাইজুল ৪, তাসকিন ৪*, শরিফুল ১* (রি, হা), রোচ ৩/২০, সিলস ৩/৪৫, আলজারি ২/৩২)।
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০১ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : জাস্টিন গ্রিভস।


আরো সংবাদ



premium cement