২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি

-

মিয়ানমারের রাখাইনে ২০১৭ সালের গণহত্যার পাশাপাশি ২০২৪ সালে চলমান হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়েছে রোহিঙ্গারা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উখিয়ার ক্যাম্পে সফররত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের সাথে বৈঠককালে রোহিঙ্গা কমিউনিটি লিডাররা এ দাবি জানান।
কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং ১ নম্বর ক্যাম্পে রোহিঙ্গা কমিউনিটি লিডারদের সাথে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় রোহিঙ্গাদের সাথে সংঘটিত গণহত্যার বিষয়ে তিনি কথা বলেন।
রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার সামরিক জান্তা যে রকম গণহত্যা চালিয়েছে বর্তমানে ২০২৪ সালে একই রকম গণহত্যা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি ও সামরিক জান্তা বাহিনী। আইসিসির প্রধান কৌঁসুলিকে তারা চলমান গণহত্যার বিষয়ে জানিয়েছে।
এর আগে সকালে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন আইসিসি প্রধান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি ১ নম্বর ক্যাম্পে পৌঁছান। এরপর ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তার সাথে রয়েছে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো: মিজানুর রহমান জানান, আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর সোমবার কক্সবাজার পৌঁছান। মঙ্গলবার সকালে তিনি উখিয়া উপজেলায় অবস্থিত ১ ও ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও কমিউনিটি লিডারদের সাথে কথা বলেন।

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়নে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে আইসিসির তদন্তের বিষয়ে খোঁজ নিতে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে করিম এ এ খানের এটি তৃতীয় বাংলাদেশ সফর।
২০১৭ সালের আগস্টের পর রাখাইন থেকে মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে কি না, সেটির তদন্ত করছে আইসিসি। সেটির জবাবদিহি নিশ্চিত করতে যুক্ত হয়েছে আইসিসি। তদন্তের কাজে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন আইসিসির এই প্রধান।
রোম সনদের অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্তে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশে কাজ করার বিষয়ে একটি সমঝোতা সই করেছে আন্তর্জাতিক এই আদালত। তবে রোম সনদে সই করেনি মিয়ানমার।
জানা গেছে, কক্সবাজার সফর শেষে ঢাকায় ফিরে করিম খান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ও অগ্রাধিকারবিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের সাথে আলোচনা করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের আগস্টের পর রাখাইন থেকে মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে কি না, সেটির জবাবদিহি নিশ্চিত করতে যুক্ত হয়েছে আইসিসি। এ তদন্তের জন্য সাক্ষী সুরক্ষাবিষয়ক প্রটোকল সইয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। করিম খানের এবারের সফরে এ বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১২ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে।
অতিসম্প্রতি রোহিঙ্গা সঙ্কটের টেকসই সমাধানে নির্দিষ্ট সময়সীমাভিত্তিক পরিকল্পনা করতে সব অংশীজনের সমন্বয়ে ২০২৫ সালে একটি উচ্চপর্যায়ের কনফারেন্স আয়োজনে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেপ্টেম্বরে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উচ্চর্যায়ের সভা চলাকালে এই উচ্চপর্যায়ের কনফারেন্স আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement