ঘোষণা দিয়ে মোল্লা কলেজে পাল্টা হামলা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২২
- ভুল চিকিৎসায় ছাত্র মৃত্যুর অভিযোগে হামলার সূত্রপাত
- প্রথম হামলায় ৮ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা
- মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে ফের হামলার পরিকল্পনা
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা ‘রহস্যজনক’
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে তাণ্ডবের পর ঘোষণা দিয়ে পাল্টা হামলা চালিয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর ১২ টায় তিন কলেজের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় রণক্ষেত্র পরিণত হয়। সংঘর্ষে আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। আহতদের মধ্যে ৩৫ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন গুরুতর হওয়ায় তাদের ভর্তি করা হয়েছে। হামলার সময় বিভিন্ন সামগ্রী ও সরঞ্জাম লুটপাট করায় কলেজটির প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন কর্তৃপক্ষ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে অভিযোগ করে বলেন, একদিন আগে ঘোষণা দিয়ে এই হামলার পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা ‘রহস্যজনক’। গতকাল দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে ফের হামলার পরিকল্পনা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ দিকে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকায় রণক্ষেত্র পরিণত হওয়ার পর ছয় প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিয়ন্ত্রণে নেয়।
হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় আট হাজার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জনিয়েছে পুলিশের ওয়ারি বিভাগ।
এর আগে ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের জেরে গত রোববার পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ ও এর আশপাশের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এই সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এর পরে ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা করে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে গতকাল সোমবার ডিএমআরসি কলেজে হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট করেছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইজাজ মাহমুদ সাজিদ নামে এক শিক্ষার্থী জানান, গত রোববার ডিএমআরসি কলেজের শিক্ষার্থীরা কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এর প্রতিবাদে তারা দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ডিএমআরসি কলেজে যায়। তখন সেখানকার শিক্ষার্থীরা ও স্থানীয়রা তাদের ওপড়ে হামলা করে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো: ফারুক জানান, যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে বিভিন্ন কলেজের প্রায় ৩৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে এসেছে। এদের বেশির ভাগই মাথায় আঘাত রয়েছে। এদের মধ্যে শাকির, জুবায়ের ও নাফিকে হাসপাতালে ভর্তি দেয়া হয়েছে।
এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নের ঝড় উঠছে, একদিন আগে ঘোষণার পরও পুলিশ কেন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিলো না। পুলিশ আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে ঘটনা এতদূর গড়াত না। এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘শত চেষ্টা ও বসে সমাধান করার আহ্বান জানানোর পরও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে জড়ানো থেকে আটকানো গেলো না। শিক্ষার্থীদের অ্যাগ্রেসিভনেস ও প্রস্তুতি দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও স্ট্রিক্ট অ্যাকশনে যায়নি। কোনো প্রকার অ্যাকশনে গেলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ ও রক্তপাত হতো।’ এ দিকে এসব হামলা-সংঘর্ষের পেছনে কারো ইন্ধন থাকলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের সংঘর্ষে না জড়িয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
ঘটনাস্থলে দেখা যায়, শুরুতে হামলাকারী শিক্ষার্থীরা কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়েননি। বেলা ১টার কিছু আগে তাদের ধাওয়া দেয় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। তখন সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ে।
ডিএমআরসি কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর সাংবাদিকদের জানান, গতকাল দুপুরের দিকে কলেজে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। এতে কয়েক কোটি টাকার ওপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কত ক্ষতি হয়েছে তা নিজের চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। পুলিশের কাছে কোনো সহায়তা চেয়েছিলেন কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত রোববার রাতে কলেজের প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যান পুলিশের কাছে সহযোগিতা চান। কিন্তু পুলিশ আমাদের আশানুরূপ সহযোগিতা করেননি। যদি প্রশাসন সহযোগিতা করত তাহলে এই ভয়াবহ অবস্থা হতো না। হতাহতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের ছেলের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে আহত হয় শতাধিক। এ বিষয়ে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ঘোষণার পর থেকে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে।
গত রোববার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পুরান ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরাও ছিল অভিযোগ তুলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সেন্ট গ্রেগরিতে হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম। তবে কারা হামলা চালিয়েছে তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সোহরাওয়ার্দী কলেজের একদল শিক্ষার্থী ওই হামলা চালায়।
এ দিকে মোল্লা কলেজে হামলার ঘটনায় জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে উল্লেখ করেছেন ওয়ারি বিভাগের উপ- কমিশনার ছালেহ উদ্দিন। গতকাল মোল্লা কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের সংঘর্ষের পর স্পট ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, কলেজে কলেজে এই সংঘর্ষ কোনোভাবে বরদাস্ত করা যায় না। যারা এই হামলা ঘটিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করছে আমরা তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। তিনি আরো বলেন, আমি এটিকে দুর্ঘটনা বলব না। একটি অবৈধ সমাবেশের মাধ্যমে কয়েক হাজার ছাত্রবেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যারা এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চায়, তারা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা করেছে। আমরা সীমিত পুলিশ সদস্য প্রথমে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় তাদের আটকে দেয়ার চেষ্টা করেছি। তারা আমাদের প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে লাঠিসোটা নিয়ে, সাথে জনতা একত্রিত হয়ে এই মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা করেছে। কলেজের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কলেজের ভেতরে প্রবেশ করেছি। আমরা বিভিন্ন তলার বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেছি। এখানে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এখানে কোটি কোটি টাকার সম্পদ লোপাট হয়েছে। যেটা খুবই ন্যক্কারজনক। একটি স্বার্থন্বেষী মহল এই ঘটনার সাথে জড়িত বলে আমরা মনে করি। সংঘর্ষের পর ড. মাহবুবুরর রহমান মোল্লা কলেজের অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, কলেজের প্রায় ৭০-৮০ কোটি টাকার ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন।
আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা : সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজে হামলা, ভাঙচুর ও গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের মোট আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। গতকাল পুলিশের উপ-পরিদর্শক এ কে এম হাসান মাহমুদুল কবীর বাদি হয়ে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় এই মামলা করেন। এদিন মামলার এজাহার আদালতে আসে। ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত তা গ্রহণ করেন। আগামী ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। সূত্রাপুর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখার সাব-ইন্সপেক্টর অনুপ দাস এ তথ্য জানান।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২৪ নভেম্বর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের সাত-আট হাজার শিক্ষার্থী বেআইনি জনতাবদ্ধে মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রসহ দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে। সরকারি অস্ত্রের (পিস্তল) গুলিভর্তি ম্যাগজিন চুরি, সরকারি ডিউটিতে ব্যবহৃত সাঁজোয়া যান বা এপিসি (আর্মার পার্সনেল ক্যারিয়ার) ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করা, জীবননাশের হুমকি দেয়া এবং ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে। এছাড়া পুলিশের এপিসি কার ও ডিউটিরত পুলিশের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. (অব:) ডা: ইফফাত আরা বলেন, ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে বলে শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগ করছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা কলেজ শিক্ষার্থী ও মৃত শিক্ষার্থীর পরিবারের সাথে বসেছি। একটি তদন্ত কমিটিও গঠন হয়েছে। তারা সেটি না মেনে নির্বিচারে হামলা চালায়।
কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ কিভাবে জড়াল এই প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা জানি না তারা কিভাবে এলো। আমরা তাদের কোনো হেল্প (সাহায্য) চাইনি। আসতেও বলিনি।
ডিএমপির বিবৃতি : গতকাল ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, গত ১৬ নভেম্বর ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরবর্তীতে গত ১৮ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়। ওই দিন রাতে তার পরিবার ও কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে অভিযোগে হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। ২০ নভেম্বর ফের ডিএমআরএম কলেজের ৫০০-৬০০ শিক্ষার্থী হাসপাতালে এসে ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। একপর্যায়ে তারা শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর এবং লুটপাট চালায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের প্রায় ১২-১৫ হাজার শিক্ষার্থী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও বাহাদুর শাহ পার্কে জমায়েত হয়ে আনুমানিক বেলা ১১ ঘটিকার সময় ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। আগে থেকে পুলিশ ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে অবস্থান করে। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল ও মারমুখী শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা প্রতিহত করে লাঠিসোঠাসহ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে দিকে অগ্রসর হলে যাত্রাবাড়ী মোড়ে পুলিশ পুনরায় বাধা প্রদান করলেও তারা বাধা অতিক্রম করে উক্ত কলেজে পৌঁছে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
জানা যায়, ৩৫টি বিভিন্ন কলেজ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ (ইউসিবি) নামে একটি ফোরাম গঠিত হয়। অপরপক্ষে রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ ও সরকারি কবি নজরুল কলেজ মিলে সাত কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি জোট রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ৩৫ কলেজের ফোরাম ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও পরস্পরের প্রতি ঘৃণার মনোভাব সৃষ্টি হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য গতকাল ২৫ সকাল ৭ ঘটিকা হতে রাজধানীর সূত্রাপুর ও ডেমরা এলাকায় পর্যাপ্ত জনবল মোতায়েন করা হয়। মোতায়েনকৃত পুলিশ সদস্যরা অত্যান্ত ধৈর্য্যরে সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এরপরও উচ্ছৃঙ্খল ও মারমুখী শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হয়ে ব্যাপক হামলা চালায়। পুলিশ যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য অতিরিক্ত বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে। পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এরপরও উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং হামলা ও লুটতরাজে জড়িয়ে পড়ে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টাধাওয়া এবং সংঘর্ষের জেরে প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুইজন নিহত হয়েছেন বলে অনেকেই অপপ্রচার চালাচ্ছেন। যা মোটেই সঠিক নয়।
এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় তিন কলেজের সংঘর্ষে ড. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাফি (১৭) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। নাফিজকে কে বা কারা গুলি করেছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নাফিজের পেটে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ।
কিভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র এলো, কারা সেই অস্ত্র দিলো, কিংবা যদি শিক্ষার্থীদের কেউ গুলি না করে থাকে তাহলে কে গুলি করল এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, যাত্রাবাড়ী এলাকায় শিক্ষার্থীরা এত বড় সংঘর্ষে জড়ালেও পুলিশের সক্রিয় কোনো ভূমিকা ছিল না। তারা শিক্ষার্থীদের দমাতে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি; টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট বা গুলি কিছুই ছোড়েনি। পুলিশের ধারণা, শিক্ষার্থীদের এ সংঘর্ষে ঢুকে বহিরাগত কোনো অপরাধী গুলি করে থাকতে পারে। গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী নাফি মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। ডেমরার বামৈল বাজার এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে তিনি। চিকিৎসকরা জানান, নাফির পেটে গুলি ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা