অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বিএনপির কোনো মতপার্থক্য নেই
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২০
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি মনে করে, সংস্কারকার্যক্রম নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে বিএনপির কোনো মতপার্থক্য নেই। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন যারা এমন প্রশ্ন তুলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চান তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন। বিএনপি মনে করে, সংস্কারকার্যক্রম শেষ হওয়ার বিষয় নয়। একজন সংস্কারকার্যক্রম শুরু করলে আরেকজন এগিয়ে নিয়ে যায়। কারণ সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাজনীতির গুণগত উত্তরণ ছাড়া প্রথাগত সংস্কার অর্থহীন। সংস্কারকার্যক্রমের পাশাপাশি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান অবশ্যই প্রয়োজন।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সাধারণ সভায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান আরো বলেন, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি জনগণের ভোটের রায়ের মধ্য দিয়ে বিদায় করতে হবে। ভোটের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলেই জনগণ গণহত্যাকারী, খুনি, লুটেরা এবং তাদের দোসরদেরকে রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় করে দিতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচার ও তার দোসররা যাতে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত না হতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করাও আমাদের কর্তব্য। সেজন্য যথাযথ আইনগত এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। তাদেরকে একদিকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন। অপরদিকে অবশ্যই জনগণের আদালতে বিচারে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরিস্থিতিও ফেলতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একটি নির্বাচনের জন্যই গণ-অভ্যুত্থান হয়নি। এটা যেমন বাস্তবতা। অপরদিকে আরেকটি নির্মম বাস্তবতা ছিল, জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন রেখে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বারবার সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকার কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিল। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই নির্বাচন একটি মুখ্য বিষয়।
তিনি বলেন, একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানকে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্য হিসেবে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করলে সেটি কোনো বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক চিন্তা নয়। বরং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের রাজনৈতিক অধিকার চর্চার সুযোগ পায়। ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের সাথে রাষ্ট্রের মালিকানার সম্পর্ক তৈরি হয়।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আর স্বাধীনতা একসাথে যায় না। আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একে অপরের শত্রু। অপরদিকে বিএনপির কাছে গণতন্ত্র, বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিরাপদ।
গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তিকে সতর্ক থাকতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে চলমান যাত্রা তাকে বাধাগ্রস্ত করতে এরই মধ্যে নানারকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তাদের দোসরচক্র মাথাচাড়া দেয়ার অপচেষ্টা শুরু করেছে। অপশক্তি দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত হয়েছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিগত পলাতক স্বৈরাচারের সময় গণমাধ্যমের অধিকাংশ শাখায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী কিংবা যেকোনো মানুষের মধ্যেই যে কোন বিষয়ে যে কোনো ইস্যুতে দ্বিমত ভিন্নমত থাকতেই পারে। এটিই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সৌন্দর্য। ভিন্নমতকে শত্রুতা কিংবা নির্লজ্জ দলাদলিতে পরিণত করলে কী পরিণতি হতে পারে তা গত দেড় দশকে জনগণ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গণতন্ত্র ও আওয়ামী লীগ একসাথে যায় না। তারা বাকশাল কায়েম করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নির্বিচারে গুলি করে দুই হাজার ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ৪০ হাজার মানুষকে আহত করেছে। আমি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। আহতদের সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকরা হলো সভ্যতার ব্যারোমিটার। কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিবাদের শাসনকালে সব রাষ্ট্রযন্ত্রের মতো সংবাদপত্রকেও ধ্বংস করেছে।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, গণতন্ত্রের পথে অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি। এখন হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি। একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসবে নির্বাচিত সরকার। নির্বাচনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে চিরকালের জন্য রাজনৈতিক ভাবে পরাজিত করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ৫ আগস্ট দুপুর ১২টার আগে সংবাদমাধ্যমের কী ভূমিকা ছিল আপনারা দেখতে পাবেন। আওয়ামী লীগের শাসনকালে সাংবাদিকরা দলবাজি করেছে। মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে সাংবাদিকদের কাজ করা দরকার। সাগর রুনির হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবকে গণতন্ত্রকামী মানুষের আশ্রয়ের জায়গা মনে করতাম। ক্রমান্বয়ে যখন ফ্যাসিবাদের থাবা ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল তখন প্রেস ক্লাবও যেন সেই থাবার হাত থেকে বাঁচতে পারল না। এই প্রেস ক্লাব থেকে আমাদের দলের মহাসচিবকে আটক করা হয়েছিল। তার আটকের পেছনে একজন সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরীর হাত ছিল। তিনি যে ন্যক্কারজনক কাজ করলেন মনে হচ্ছে পুলিশকে ডেকে নিয়ে এসে মহাসচিবকে ধরিয়ে দিলেন। তবে অনেক সাংবাদিক ন্যায়ের পথে ছিল। গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে ছিল।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নির্যাতন করে কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করে বহু মানুষকে নির্যাতন নিপীড়ন করেছে। এ আইন অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানাই। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন ফ্যাসিস্ট মুক্ত করতে হবে। ফ্যাসিবাদমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে হবে। বেকার সাংবাদিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন তৈরি করতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং দিদারুল আলম, সাঈদ খান ও খন্দকার আলমগীর হোসেনের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তৃতা করেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ, বর্তমান মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ডিইউজের সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু ও কবি আবদুল হাই শিকদার, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, সহ-সভাপতি রাশেদুল হক প্রমুখ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সভায় সাংবাদিকদের অবিসংবাদিত নেতা বিএফইউজের সভাপতি মরহুম রুহুল আমিন গাজীর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা ও তার রূহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। সভায় গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক ও ছাত্র-জনতার রূহের মাগফিরাত ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করে দোয়া করা হয়।
দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন দৈনিক সংগ্রামের বার্তা সম্পাদক সাদাত হোসাইন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা