২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
প্রধান বিচারপতির সংস্কার প্রতিবেদন

পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় স্থাপনে দ্বৈত শাসনের অবসান হবে

-

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার আলোকে সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবিত পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা, ছুটি ইত্যাদির বিষয়ে প্রচলিত দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটবে। বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে প্রধান বিচারপতির ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এ বিষয়ে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি তাঁর ঘোষিত বিচারবিভাগীয় রোডম্যাপের বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে গত ২৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট হতে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনসংক্রান্ত প্রস্তাব আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। ওই প্রস্তাবে সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান এবং নিয়ন্ত্রণ যথাযথরূপে পালনের উদ্দেশ্যে স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অধ্যাদেশের খসড়া, প্রস্তাবিত সচিবালয়ের অর্গানোগ্রাম এবং রুলস অব বিজনেস ও অ্যালোকেশন অব বিজনেসের সম্ভাব্য সংস্কার সম্পর্কে পরিপূর্ণ প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়। উল্লেখ্য, সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া, সংবিধানের ৪র্থ তফসিলের অন্তর্গত ‘অন্তর্বর্তীকালীন ও সাময়িক বিধানাবলি’র দফা ৬(৬) অনুযায়ী অধস্তন আদালত সম্পর্কিত সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের বিধানাবলি যথাশীঘ্র বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার আলোকে সুপ্রিম কোর্ট প্রস্তাবিত পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হলে বিভিন্ন বিষয়ে প্রচলিত দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটবে এবং বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ১১ আগস্ট ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের উদ্দেশে অভিষেক বক্তৃতায় রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন তিনি। প্রধান বিচারপতি তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, সারা দেশের ডিস্ট্রিক্ট জুডিসিয়ারিগুলো বিচার বিভাগের বিস্তৃত ক্ষেত্র। এ কারণে স্বচ্ছ, স্বাধীন ও জবাবদিহিতামূলক বিচার বিভাগ গড়ার প্রত্যয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ইনার কোর্ট ইয়ার্ডে দেশের বিচারকদের উপস্থিতিতে রোডম্যাপ ঘোষণা করেন।
গতকাল সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো: শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি তার ঘোষিত বিচারবিভাগীয় রোডম্যাপের বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে গত ২৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট হতে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাব আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবে সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে হাইকোর্ট বিভাগ, অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ যথাযথরূপে পালনের উদ্দেশে একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অধ্যাদেশের খসড়া, প্রস্তাবিত সচিবালয়ের অর্গানোগ্রাম এবং সম্ভাব্য সংস্কার সম্পর্কে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়।

প্রধান বিচারপতি ঘোষিত রোডম্যাপে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলছে। বদলি ও পদায়ন নীতিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে তা সম্পর্কে সারা দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের মতামত আহ্বান করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি পত্র সব জেলা ও দায়রা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চিফ মেট্রোপলিটন আদালতসহ সব ট্রাইব্যুনালে ৩ নভেম্বর পাঠানো হয়েছে। খসড়া নীতিমালা সম্পর্কে অধস্তন আদালতের বিচারকণেদর মতামত গত ৭ নভেম্বর পর্যন্ত গ্রহণ করা হয় এবং মতামত গ্রহণের সুবিধার্থে খসড়া নীতিমালাটি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা হয়। গত ৭ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা ও দায়রা জজ আদালত হতে মোট ৫২টি মতামত পাওয়া গেছে। এগুলো যাচাই-বাছাইক্রম করে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে অচিরেই আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
রোডম্যাপের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে দেশের উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে শুরু করে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে যেসব প্রক্রিয়া অনুসৃত হয় তা বিশ্লেষণ করে এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এই খসড়া সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের মতামত গ্রহণের জন্য ১৪ নভেম্বর প্রেরণ করা হয়েছে। প্রস্তুতকৃত খসড়ায় উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের জন্য একটি জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। গত রোববার পর্যন্ত প্রস্তাবিত জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল সম্পর্কে বিচারপতিদের ১৮টি লিখিত মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির সার্বিক তত্ত্বাবধানে মতামতগুলো নিরীক্ষাপূর্বক খসড়া অধ্যাদেশটি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর কারণে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের পরিবর্তে সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ কর্তৃক ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষিত হলেও এ সংক্রান্ত রিভিউ দরখাস্তটি অনিষ্পন্ন ছিল। গত ২০ অক্টোবর আপিল বিভাগ কর্তৃক ওই রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হলে বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত হয়। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্য বিশিষ্ট সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতি রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে পদত্যাগ করা ইচ্ছা পোষণ করলে বিগত ১৯ নভেম্বর তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement