২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ফলোঅন স্বস্তির পর বাংলাদেশের ইনিংস ঘোষণা

-

অ্যান্টিগা টেস্টের তৃতীয় দিনে ফলোঅন থেকে বেঁচে গেছে বাংলাদেশ। ২৩ রানে মেহেদী হাসান মিরাজ যখন বিদায় নেন ফলোঅন এড়াতে তখনো প্রয়োজন ছিল ৮৫ রান। জাকের আলী অনিক ৫৩ ও তাইজুল ইসলামের ২৫ রানে ভর করে শেষ পর্যন্ত ফলোঅন এড়াতে পেরেছে বাংলাদেশ। মিরাজ বাহিনী টেস্টের তৃতীয় দিন শেষ করেছে ৯ উইকেটে ২৬৯ রানে। প্রথম দুই সেশনে ৮৫ ও ৬০ রানের পর তৃতীয় সেশনে ১০৪ রান করেছে টাইগাররা। প্রথম ইনিংসে ১৮১ রানে পিছিয়ে ফিল সিমন্সের শিষ্যরা। তাসকিন ১১ ও শরিফুল পাঁচ রানে অপরাজিত ছিলেন। গতকাল চতুর্থ দিনে তাদের সামনে ছিল লিড কমানোর সুযোগ। অথচ তাদের দু’জনকে ব্যাটিংয়ে না পাঠিয়ে ইনিংস ঘোষণা করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৮১ রানে এগিয়ে থেকে আবারো ব্যাটিংয়ে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাঞ্চ বিরতির আগে ২৫ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৬১ রান। কাভেম হজ ৪৪ বলে দুই চারে দুই চারে ১০ রানে এবং আথানেজ ৩৮ বলে দুই বাউন্ডারিতে ১৬ রানে অপরাজিত আছেন। স্বাগতিকদের লিড ২৪২ রানের। তাসকিন দু’টি ও শরিফুল একটি উইকেট নিয়েছেন।

ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারাতে পারতো স্বাগতিকরা। তাসকিন আহমেদের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে এজ হয়ে সিøপে ক্যাচ দিয়েছিলেন ক্রেইগ ব্রাথওয়েট। তবে সহজ ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি শাহাদাত হোসেন দিপু। পরের বলে মিকাইল লুইসকেও ফেরানোর সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। তাসকিনের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেছিলেন লুইস। বল প্যাডে আঘাত করায় ডানহাতি পেসার আবেদন করলেও খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না। আম্পায়ারও বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া দেননি। তাসকিন আত্মবিশ্বাসী না হওয়ায় রিভিউও নেয়নি সফরকারীরা। তবে একটু পর টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় রিভিউ নিলে আউট হতেন এক রান করা লুইস। যদিও কয়েক ওভার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ওপেনারকে ফিরিয়েছেন তাসকিনই। বাংলাদেশের পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ৯৭ রান করা লুইস এবার ফিরেছেন মাত্র ৮ রানে।
স্টাম্প বরাবর ভালো লেংথের বল করলেন তাসকিন আহমেদ, পুরস্কারও পেলেন হাতে নাতে। কিসি কার্টিকে তৃতীয় সিøপে মাহমুদুল হাসান জয়ের ক্যাচ বানালেন বাংলাদেশের পেসার। ৩৫ রানে দুই উইকেট হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৩ বলে তিন রানে থামলেন কার্টি। ১০ রানের ব্যবধানে তাসকিনের শিকার দুই উইকেট। শরিফুলও কম গেলেন না। তার করা ৩.২ ওভারে ওপেনার ব্রার্থওয়েট সিøপে জয়কে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরালেন ৩৫ বলে এক চারে ২৩ রান করে। ৩৯ রানে তিন উইকেট হারাল স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : তৃতীয় দিনে উইকেটে সেট হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি বাংলাদেশের কেউ-ই। শাহাদাত হোসেন দিপুকে নিয়ে ভালোভাবেই দেখেশোনে খেলছিলেন মুমিনুল হক। স্কোরবোর্ডে আরো ২৬ রান যোগ করে ৪৫ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। এরপর শাহাদাতের বিদায়ে ভাঙে জুটি। কেমার রোচের অব স্টাম্পের সামান্য বাইরে রাখা বলে খেলতে গেলে বথ্যাটের কানায় গেলে সিøপে দাঁড়ানো কেভাম হজের তালুবন্দী হয়ে ৭১ বলে ১৮ রানে বিদায় নেন তিনি।

শাহাদাতের বিদায়ের পর লিটনকে নিয়ে হাল ধরেন মুমিনুল। দারুণ ব্যাটিংয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন এ দুই ব্যাটার। কিন্তু ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। লাঞ্চের পর ৫০ পূর্ণ করেই জেডেন সিলসের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে লাইন মিস করে এলবিডাব্লিউ হন। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি। ১১৬ বলে তিনটি চারে কাটায় কাটায় ৫০ রান করে বিদায় নিলে ভাঙে ৬২ রানের জুটি। বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে লাল বলের ক্রিকেটে ১০ হাজার রান পূরণ করেন মুমিনুল। এ দিনের ফিফটিতে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তার মোট রান ১০ হাজার পাঁচ রান। এই রান করতে ১৫২ ম্যাচে ২৬৭ ইনিংস খেলেছেন তিনি। ৩৯.৭ গড়ে ২৯টি সেঞ্চুরির সাথে হাফসেঞ্চুরি করেছেন ৪৬টি। এরপর অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের সাথে দলের হাল ধরেন লিটন। শামার যোসেফের অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট বল পুল করতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হন তিনি। ৭৬ বলে তিনটি চারের সাহায্যে ৪০ রান করেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। জাকের আলী নামার পর স্কোরবোর্ডে ২১ রান যোগ করে আলজারি জোসেফের বাউন্সারে ৬৭ বলে তিনটি চারে ২৩ রান করে আউট হন মিরাজ।
আটে নামা তাইজুল জাকের আলীর সাথে ৬৮ রানের কার্যকরী জুটি গড়েন। মূলত এই জুটিতে ভর করেই ফলোঅন এড়াতে পারে দলটি। এরপর যোসেফের বলে বোল্ড হওয়ার আগে তিনটি চারে করেন ২৫ রান। তবে অপর প্রান্তে ব্যক্তিগত ৫০ পূরণ করেন জাকের। এরপর গ্রিভসের বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ দেয়ার আগে ৮৯ বলে চারটি চারে করেন ৫৩ রান। এরপর গ্রিভসের দ্বিতীয় শিকার হয়ে বিদায় নেন হাসান মাহমুদ। তবে শরিফুল ইসলামকে নিয়ে শেষ দিকে প্রতিরোধ গড়ে দিন শেষ করেছেন তাসকিন আহমেদ। যদিও আলোকসল্পতায় আগেই খেলা শেষ হয়ে যায়। ৬৯ রানে তিনটি উইকেট নেন যোসেফ। দু’টি করে শিকার সিলস ও গ্রিভসের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : (চতুর্থ দিন চলমান)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস : ৪৫০/৯ ও ৪০/৩ (১৪ ওভার চলমান) (ব্র্যাথওয়েট ২৩, লুইস ৮, কার্টি ০*, হজ ৪*, তাসকিন ২/৫৬, শরিফুল ১/৩)।
বাংলাদেশ ইনিংস : ৯৮ ওভারে ২৬৯/৯ (মাহমুদুল জয় ৫, জাকির হাসান ১৫, মুমিনুল ৫০, শাহাদাত হোসেন ১৮, লিটন দাস ৪০, মিরাজ ২৩, জাকের আলী ৫৩, তাইজুল ২৫, হাসান মাহমুদ ৮, তাসকিন ১১*, শরিফুল ৫*, রোচ ১৩০, সিলস ২/৪২, আলজারি ৩/৬৯, শামার ১/৫৫, গ্রিভস ২/৩৪)।

 


আরো সংবাদ



premium cement