২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইসকন নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার

-


বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র, ইসকনের সংগঠক ও চট্টগ্রামের পুণ্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি প্রধান) রেজাউল করিম মল্লিক ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে। সে অনুযায়ী তাকে নির্ধারিত থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর বেশি কিছু জানাননি ডিবি প্রধান। জানা গেছে, ইসকন নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার উদ্দেশে বিমানবন্দরে যান। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গত ৫ আগস্টের পর দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীর নামে কয়েক দফা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেসব সমাবেশে চিন্ময়কৃষ্ণ দাস বর্তমান সরকারের উদ্দেশে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে বক্তব্য দেন। এর আগে থেকে তিনি আলোচনায় থাকলেও গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সমাবেশের পর বেশি আলোচনায় আসেন। সমাবেশে এই চিন্ময়কৃষ্ণ দাস বাংলাদেশের হিন্দুদের মন্দিরে হামলা ও বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ নানা অভিযোগ করেন। অথচ তার বিরুদ্ধেই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন।
চিন্ময়কৃষ্ণ দাস আলোচিত হিন্দু সংগঠন ইসকনের অন্যতম সংগঠক। তিনি সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তিনি চিন্ময় প্রভু নামে পরিচিত। উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) আলোচিত সংগঠক চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। ওই ঘটনায় রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়। চট্টগ্রামের সচেতন মহলের ধারণা, চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে ইসকন মন্দিরের আওতাধীন মন্দির ও মঠগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত করতে দেশে নতুন করে আন্দোলনে পারদ ঢালার অপচেষ্টা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময় নতুন নতুন ঘটনার জন্ম দিয়েছে তারা।

গরম পানি কাণ্ড : গত ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার মোমিন রোড এলাকায় প্রতিমাবাহী একটি ভ্যানগাড়িকে লক্ষ্য করে পাশের ভবন থেকে গরম পানি এবং ইট ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। এ সময় দুই ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে সেদিন গভীর রাতেই তাৎক্ষণিক চেরাগি পাহাড় মোড়ে বিক্ষোভ হয়। এতে শত শত মানুষ যোগ দেয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সে সময় চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর একটি অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি। পরে প্রশাসনের তদন্তে বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। দেখা যায়, ঘটনাটি পুরোটাই পরিকল্পিত সাজানো নাটক ছিল। এ ঘটনার পরিকল্পনায় ছিল চিন্ময় দাস ও তার দুই সহযোগী। একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের।
হাজারী গলির ঘটনা : গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় ওসমান আলী নামক একজন ব্যক্তির ইসকনবিরোধী ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাজারী লেনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং আনুমানিক ৫০০ থেকে ৬০০ জন দুষ্কৃতকারী হাজারী লেনে ওসমান আলী ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। যৌথবাহিনীর কর্মকর্তারা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও একপর্যায়ে উগ্র বিশৃঙ্খলাকারী ব্যক্তিরা আরো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। কয়েকজন সন্ত্রাসী এ সময় যৌথ বাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে জুয়েলারির কাজে ব্যবহৃত অ্যাসিড হামলা চালায়। ভারী ইটপাটকেলসহ ভাঙা কাচের বোতল ছোড়ে। এতে সেনাবাহিনীর ৫ সদস্যসহ ১২ পুলিশ সদস্য আহত হয়। সেনাবাহিনীর পাঁচ সদস্যকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, চট্টগ্রামে চিকিৎসা দেয়া হয়। সন্ত্রাসীরা ইট ছুড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের উইন্ডশিল্ড ভেঙে ফেলে। কয়েক দিন পর সেনাবাহিনীর ওপর অ্যাসিড হামলায় জড়িত বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এই স্পর্শকতার ঘটনার পেছনেও ইসকন নেতা চিন্ময় দাস জড়িত বলে অভিযোগ আছে।
১৫ আগস্টকে ঘিরে বিশৃঙ্খলা : এ ছাড়া ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ১০ আগস্ট নানা ইস্যুতে চট্টগ্রামে বড় সমাবেশ করে সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা। সেখানে শত শত ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করে। সমাবেশে স্থানীয় কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমন ও জহুরলাল হাজারীর কর্মীরা সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এসব ঘটনার পরিকল্পনায়ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী জড়িত বলে জানা গেছে।
১৫ আগস্টকে ঘিরে সনাতনী কার্ড খেলে নানা অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালায় তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কতার কারণে তা হালে পানি পায়নি। চট্টগ্রামের সচেতন মহল বলছেন, রাজনৈতিক বিষয়টিকে ধর্মীয় রূপ দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টিতে ইসকন নেতা চিন্ময়ের জুড়ি মেলা ভার।


আরো সংবাদ



premium cement