ব্যাটারির অটোরিকশা চলতে পারবে ঢাকা মহানগরে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৬
ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে হাইকোর্টের দেয়া আদেশের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থায় জারি করেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। গতকাল সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো: রেজাউল হকের আদালত এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে এ বিষয়ে জারি করা রুল হাইকোর্ট বিভাগকে এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এইচ এম সানজিদ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার তাহসিনা তাসনিম মৃদু। সাধারণ নাগরিকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
আদেশের পর ব্যারিস্টার এইচ এম সানজিদ সিদ্দিকী বলেন, সরকার পক্ষ চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। চেম্বার আদালত শুনানি শেষে হাইকোর্টের রায়ে এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। একই সাথে এ বিষয়ে জারি করা রুল হাইকোর্ট বিভাগকে এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন।
এই আদেশের ফলে ঢাকার রাস্তায় যেসব ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে, সেগুলো চলাচল করতে আইনগত কোনো বাধা নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা দেখছি ঢাকা শহরে যত্রতত্র ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। এই রিকশাগুলোর কোনো নিবন্ধন নেই। ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই এবং চালকদের কোনো লাইসেন্স নেই। আমরা বলেছি তারা সড়কে চললে এটা অবৈধ ও বেআইনি হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা সড়কে চলাচলে দুর্ঘটনা ঘটছে। জনগণের নিরাপদ সড়কের আকাক্সক্ষা ব্যাহত হচ্ছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরাও বলেছেন, চেম্বার আদালতের আদেশের ফলে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে কোনো বাধা নেই। এর আগে ১৯ নভেম্বর এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দেয়া হয়।
এই আদেশ স্থগিত চেয়ে সরকারপক্ষ গত রোববার আপিল বিভাগে আবেদনটি করে। আবেদনটি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গতকাল শুনানির জন্য আসে।
ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে গত ২৭ অক্টোবর রিট করা হয়। বৃহত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশন রিকশা মালিক জোটের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো: মোমিন আলী আবেদনকারী হয়ে এই রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ ওই নির্দেশ দেন। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রুলে ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধে বা বিধিনিষেধ আরোপে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এসব অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জের জন্য অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, রুলে তা-ও জানতে চাওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এ দিকে গতকাল সোমবার সকালে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিকদের সাথে বৈঠকে বসেছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো: সাজ্জাত আলী। রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল ও সংশ্লিষ্টদের দাবি দাওয়া শুনলেও কোনো সিদ্ধান্ত দেননি তিনি। কমিশনার বলেছেন, অটোরিকশা চলাচলের এখনই কোনো নির্দেশনা নয়। চেম্বার আদালতে রায় দেয়ার পর কথা বলতে হবে। অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ইজিবাইক চালক এবং ইউনিয়নের নেতাদের একটা লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করতে হবে। তাদের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আবারো বসব।
কমিশনার আরো বলেন, রিকশাচালক ও সংগঠনের নেতারা চাঁদাবাজি, কার্ডবাণিজ্য ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। রিকশা-ভ্যানে কোনো চাঁদাবাজি হবে না। গরিবদের কষ্টার্জিত অর্থ কেউ নিতে পারবে না। স্থানীয় লোকাল মাস্তানরা চাঁদাবাজির টাকা ভাগ করে খায়। যদি পুলিশের কোনো লোক চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকে তাহলে আর রক্ষা নেই। গরিবের কষ্টার্জিত টাকা কেউ নিলেই ব্যবস্থা। রিকশাচালকরা থানার ওসিকে নিয়ে কমিটি করেন। কমিটি চাঁদাবাজি বন্ধে কাজ করবে। চাঁদাবাজির টাকায় এসি ঘরে ঘুমানোর দিন শেষ।
আগারগাঁওয়ে ফের রিকশাচালকদের বিক্ষোভ : গত কয়েক দিনের মতো সোমবারও বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন রিকশাচালকরা। এসময় রাস্তা আটকে দিয়ে মিছিল করে আন্দোলনরত রিকশাচালকরা। তারা বলেন, আমাদের রিকশা চলতে না দিলে ঢাকাতে কোনো গাড়ি চলবে না। কোনো গাড়ি চলতে দিবো না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও থানা পুলিশ কাজ করে। বেলা ১টার দিকে রিকশাচালকরা সড়ক ছেড়ে দেন।
এ বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইয়াসিনা ফেরদৌস বলেন, আগারগাঁও এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা রাস্তা অবরোধ করে। তাদের রাস্তা অবরোধের কারণে যান চলাচল ব্যাহত হয়। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে যানবাহন অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে।
রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালুসহ ১২ দফা দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আসছিলেন রিকশা চালকরা। গত শুক্রবারও জুরাইনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছোড়া হয় টিয়ার শেল।
অভিজ্ঞ মহলের অভিমত : এ দিকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের আন্দোলন ও রাজধানীতে অটোরিকশার ঝুঁকি এখন রাজধানীবাসীর মুখে মুখে। বাসিন্দাদের বক্তব্য রাজধানীকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মুক্তকরণ একটি জটিল বিষয়। কারণ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ইতোমধ্যে এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পক্ষান্তরে এই রিকশা শহরে চলাচলে নানা বিপত্তি তৈরি হচ্ছে। বাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকার যেসব সড়কে চলছে সেখানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। এক্ষেত্রে ছোট গলিতে বা এলাকাভিত্তিক রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল সীমিত রাখলে ভালো ফল দেবে। এছাড়া যেসব সড়কে বাসরুট রয়েছে ওইসব রুটে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। বিশেষ করে ভিআইপি সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
গত রোববার সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে অটোরিকশা চালকরা। এতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একই দিন মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সড়ক, তিন রাস্তার মোড়, যাত্রাবাড়ী মোড় ও কামরাঙ্গীরচরে শত শত রিকশাচালক অবস্থান নেন। এতে ওইসব সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অফিস ও কর্মস্থলগামী মানুষ বিপাকে পড়েন। পরে আলোচনায় সমাধানের আশ্বাসে দুপুরের পর তারা কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ডিএমপি কমিনারের সাথে বৈঠক হয় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা মালিক ও চালকদের।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা