শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ চুক্তি খতিয়ে দেখায় দুশ্চিন্তায় আদানি
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৫
আদানি গোষ্ঠীর সাথে বিদ্যুৎ চুক্তি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিলো দ্বীপরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত বাম সরকার। সিলোন ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের মুখপাত্র ধনুষ্কা পরাক্রমসিঙ্ঘে জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার আগের সরকারের সাথে আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎসংক্রান্ত এ চুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে শ্রীলঙ্কার নবগঠিত মন্ত্রিসভা। আদানি গোষ্ঠীর ওই বিদ্যুৎ প্রকল্পে খরচ কতটা হবে, সেটি পরিবেশের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, এই সব কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে শ্রীলঙ্কার মান্নার ও পুনেরিনে বায়ুশক্তি কেন্দ্রগুলো তৈরি করা হচ্ছিল। চুক্তি বাতিল না-হলেও আপাতত এটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরাকুমার দিশানায়েকে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দি প্রিন্ট বিষয়টি বিশ্লেষণ করে বলছে, কেনিয়ার পর এখন বাংলাদেশ আদানি গ্রুপের সাথে বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা করবে। শেখ হাসিনার আমলে আদানি গোষ্ঠীর সাথে চুক্তিটি খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও।
অন্য দিকে, শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় আদানি গোষ্ঠীর মালিকানাধীন একটি বন্দরকে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে আমেরিকার সরকারি সংস্থা ‘ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি)। তারা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখছে। গত নভেম্বরেই সংস্থাটি বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থসাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস হাসিনার শাসনামলে স্বাক্ষরিত অন্তত ৭টি বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনায় সহায়তা করার জন্য একটি ‘স্বনামধন্য আইন ও তদন্তকারী ফার্ম’ নিয়োগের সুপারিশ করেছেন। এসব চুক্তি হয় ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালে। মার্কিন বিচার বিভাগ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) কথিত ঘুষ প্রকল্পের জন্য গৌতম আদানিসহ ভারতীয় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করার কয়েক দিন পরই এই খবর আসে। আদানির সাথে চুক্তি ছাড়াও ঢাকায় স্ক্যানারের আওতায় থাকা অন্যান্য প্ল্যান্টগুলোর মধ্যে একটি চীনা কোম্পানির নির্মিত এবং অন্যটি শেখ হাসিনার সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা সংস্থাগুলোর নির্মিত।
ইউনূসের কার্যালয় থেকে বিবৃতিটি এসেছে মাত্র কয়েক দিন পর গৌতম আদানি, সাগর আদানি এবং অ্যাজুর পাওয়ার লিমিটেডের একজন নির্বাহী সিরিল ক্যাবানেসের বিরুদ্ধে আড়াই শ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দেয়ার অভিযোগে আদানিকে অভিযুক্ত করার পর। ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের বাজারের চেয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য শত মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ঘুষ দেয়া বা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের এ অভিযোগের পর কেনিয়াতে আদানির প্রায় ৩ বিলিয়ন মূল্যের চুক্তি দেশটির সরকার বাতিল করে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশে আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্পটি পর্যালোচনা করে দেখার ঘোষণা দেয়।
এই মাসের শুরুর দিকে, আদানি পাওয়ার পেমেন্ট নিয়ে বিরোধের কারণে বাংলাদেশে তার সরবরাহ ৬০ শতাংশের বেশি কমিয়ে দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকারের কাছে কোম্পানিটির প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মূল্যের পাওনা থাকলেও ঢাকা আদানির পেমেন্ট ত্বরান্বিত করতে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট লেটার খুলেছে। আদানি গ্রুপের সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদার ১০ শতাংশেরও কম। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল দক্ষিণাঞ্চলের তুলনায় গোড্ডা পাওয়ার প্লান্টের বিদ্যুতের উপর বেশি নির্ভরশীল। প্ল্যান্টটি ভারতে একচেটিয়াভাবে বিদ্যুৎ রফতানির জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেও তা সংশোধন করা হয়েছে। তবে আরো কিছু সংশোধন না করা পর্যন্ত ভারতের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারছে না আদানি। ভারতীয় মিডিয়াগুলো বলছে আদানির বিদ্যুৎ ভারতের সরকারি মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে কেনার কোনো আগ্রহ নেই দেশটির সরকারের।
একই সাথে বাংলাদেশ আদানির সাথে বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনার ঘোষণার ঠিক পরে, প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের পরে চীনা বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছেন। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন চীনা বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি খোলা চিঠিতে চীনের কোম্পানিগুলোর বিপক্ষে আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে শুল্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনার সম্মুখীন হওয়ায় বাংলাদেশে বিনিয়োগের দিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা