২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পাচারের অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে
-

আমদানি রফতানির আড়ালে দেশ থেকে বেশির ভাগ অর্থ পাচার হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হয়েছে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি, নেতাকর্মী থেকে শুরু করে দলীয় ব্যবসায়ীরা দেদার অর্থ পাচার করেছে। আওয়ামী লীগের এক মন্ত্রীই পাচারকৃত অর্থ দিয়ে বিদেশে তিন শতাধিক বাড়ি করেছেন। নামে বেনামে ঋণের নামে দেশের সুনামধর্মী ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। এখন ডজনখানেক ব্যাংক গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। ব্যাংক খেকো এস আলমের কমপক্ষে ডজনখানেক দেশে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। তেমনিভাবে নাসার নজরুল ইসলাম মজুমদার, বেক্সিমকোর সালমান এফ রহমান, সামিটের আজিজ খানসহ ৩৪৩ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ৬০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এর মধ্যে থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ৩০ জন কর্মকর্তাকে মনোনীত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঘুষ দুর্নীতি যেমন ওপেন সিক্রেট ছিল। বেপরোয়া হয়ে পড়েছিলেন মন্ত্রী এমপিরা। দুর্নীতি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছিল। স্বাধীনতার ইতিহাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পালানোর ঘটনা কখনো ঘটেনি। পতিত সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর পরই পলাতক রয়েছেন। লুটেরাদের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন টাকা পাচারের সিঁড়ি হিসেবে পরিণত হয়েছিল। দাম্ভিকভাবে এস আলমের সহযোগী আকিজ উদ্দীন গং নিজেদের সুপারিশে গভর্নর নিয়োগ দেয়ার গল্প প্রচার করতেন। আর এভাবে ব্যাংকগুলো থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল।

গতকাল স্বয়ং বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দীন এক সেমিনারে বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে শিল্প কারখানায় গ্যাসসংযোগ পেতে ২০ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ‘শিল্প কারখানায় বিনিয়োগের পর গ্যাস পেতে নিজের টাকায় ৪০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করতে হয়েছে। এই পাইপলাইন নির্মাণে শুধু রোড কাটিং বাবদ আমি ২০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছি। আর এই ঘুষ দেয়ার জন্যও আমাকে ঘুষ দিতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক পাচারকারীদের শনাক্ত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউ ইতোমধ্যে দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে পাচারের অর্থের গন্তব্য বের করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাভেদ ও এস আলমের অর্থ পাচারের গন্তব্য শনাক্ত করা হয়েছে। জাভেদের দেশ বিদেশে স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এস আলমেরও চূড়ান্ত প্রতিবেদন বিএফআইইউ থেকে ইতোমধ্যে দুদক, সিআইডিসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে। অন্য আরো ৩৪১ জনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে ২০টি বড় গ্রুপের বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যদের বিষয়েও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এ দিকে ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬০ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পাচারকৃত অর্থ কিভাবে শনাক্ত করা হবে এবং কিভাবে তাদের সম্পদ জব্দ করবে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে থেকে ৩০ জন উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তাদেরকে নিয়ে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে একটি চৌকস টিম গঠন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এর বাইরে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এফবিআইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement