২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদ

নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কার দাবি

-

জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবি জানিয়েছে জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদ। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সেমিনারে এ দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন : কার্যকর ও টেকসই সংস্কার শীর্ষক এ সেমিনারে
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক অধ্যাপক ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল লতিফ মাসুম সভাপতিত্ব করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: নজরুল ইসলাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীনর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির সূচনা হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মো: নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বলে দেয়, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ এর যথাক্রমে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন তার জ্বলন্ত প্রমাণ। তার ভাষ্য, মূলত দলীয় সরকারের অধীনে সরকার এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাইলেও এবং নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার পরও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরো নির্বাচনটি পরিচালনা করে সরকারের নির্বাহী বিভাগের লোকেরা-আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীরা। নির্বাচন কমিশন সেখানে কেবল লজিস্টিক সাপোর্টস এবং গাইডিং প্রিন্সিপালস সরবরাহ করে মাত্র। তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি প্রশাসনের সদস্যরাই এ সংক্রান্ত নির্বাহী কার্যক্রম সম্পন্ন করে। তা ছাড়া বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা আরো বলে যে, ক্ষমতাসীন সরকার ও দল ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনে পরাজয় বরণ করতে একদম নারাজ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তারা পরাজয় মেনে নিতে অনিচ্ছুক। নিকট ভবিষ্যতেও এর কোনো ব্যত্যয় হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। কাজেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দলীয় সরকার নয়, বরং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, এর বিকল্প নেই। অতএব, নির্বাচনী সংস্কারের প্রধান ক্ষেত্র নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ত্রুটিগুলো দূর করতে এবং বাংলাদেশে নির্বাচনকে সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে হলে সংস্কারের বেশ কিছু ক্ষেত্র বিবেচনা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, আইনি সংস্কার এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য পদ্ধতিগত পরিবর্তন।

জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের মতো পাতানো নির্বাচনে মানুষ ভোটাধিকার হারিয়েছে, ইসিকে সেই অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতার এই বিপ্লব রক্তের নদী বইয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালানোর পর ফ্যাসিস্ট নির্বাচনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করার জন্য তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনকে এ পরিবর্তন করতে হবে। সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক ফজল, ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চেয়ারম্যান মেজবাহ উল-আজম সওদাগর ও সাবেক সচিব শেখ মোতাহার হোসেন।
সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ জিয়া হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক স ম আলী রেজা, অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম ও শাহ আবদুল হালিম প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement