২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দ্য হিন্দুকে ড. ইজাজ

বাংলাদেশেও চাপে পড়তে পারেন আদানি

-

ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার হাইকোর্ট আদানি গ্রুপের সাথে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এর এক দিন পর গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। অন্য দিকে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো গত বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে আদানির সাথে এক চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন। বহির্বিশ্বের এ পরিস্থিতি বাংলাদেশেও আদানি গ্রুপকে চাপে ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, আদানি এবং শেখ হাসিনা সরকারের মধ্যে জ্বালানি চুক্তিটি শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল। কারণ, হাসিনার শাসনামলে অন্যান্য জ্বালানি চুক্তির মতো এই চুক্তিটি টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে করা হয়নি। তা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তী সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে এবং সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মার্কিন অভিযোগের পর সংলাপের সেই স্থান সঙ্কুচিত হতে পারে। কারণ, গ্রুপটি মূল্য নির্ধারণে আপস করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বৃহত্তর চাপের সম্মুখীন হতে পারে।
বাংলাদেশে আদানি পাওয়ার নিয়ে চলমান অনিশ্চয়তার বিষয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে দ্য হিন্দু। কিন্তু তারা কোনো মন্তব্য করেনি। তবে কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ভারত জি টু জি চুক্তির অধীনে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে এবং প্রয়োজন না হলে একটি বেসরকারি কোম্পানির সাথে করা চুক্তির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা থেকে বাংলাদেশে প্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। এই কেন্দ্রটি বানানো হয়েছে শুধু বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য।
ড. ইজাজ হোসেন বলেন, আদানি একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল, যা শুরুতে আকর্ষণীয় বলে মনে হয়েছিল। কারণ, এটি বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বড় কয়লা চালান পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের অভাব ছিল। তাই আদানির প্রস্তাবটি ছিল গ্রহণ করার মতো। তবে সমালোচকরা বলতে শুরু করেছেন যে, আদানি ভারত সরকারের ভর্তুকি পেয়েছে। সেই সুবিধা বাংলাদেশের সাথে ভাগাভাগি করেনি।
এ দিকে কেনিয়ার চুক্তি বাতিলও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মানসিকভাবে আদানিকে চাপে রাখবে। কেনিয়ার বাতিল করা দু’টি চুক্তির মধ্যে একটির অর্থমূল্য প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। এ টাকা দিয়ে কেনিয়ার জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের কথা ছিল আদানির। তা ছাড়া ৩০ বছর মেয়াদি লিজের আওতায় বিমানবন্দরের যাত্রী টার্মিনালও উন্নত করার কথা ছিল।

এ ছাড়া আদানির সাথে ৩০ বছর মেয়াদি ৭৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের সরকারি-বেসরকারি খাতের একটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) চুক্তিও বাতিল করার কথা জানিয়েছেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট রুটো। কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তিনি পরিবহন এবং জ্বালানি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে আদানির সাথে চুক্তি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তকারী সংস্থা ও অংশীদার দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ দিকে ভারতের মুম্বাই থেকে পিটিআই জানিয়েছে, গৌতম আদানির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবর প্রচার হওয়ার সাথে সাথে মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে আদানি গ্রুপের শেয়ারের দামও তলানিতে পৌঁছেছে।
আদানি এক সময় বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি ছিলেন। পরিবারটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ মিত্র। সমালোচকরা দীর্ঘ দিন ধরে মোদির কাছ থেকে অনুচিতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য আদানিকে দোষারোপ করে আসছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement