শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আইইউটির ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
- শ্রীপুর (গাজীপুর) সংবাদদাতা
- ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫০
গাজীপুরের শ্রীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) পিকনিকের দোতলা বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তিন শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের ডোমবাড়ী চালা মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হয়েছেন আরো ১৫ জন। এদের মধ্যে দুইজন এখন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আইইউটির শিক্ষার্থীরা বিআরটিসির ছয়টি ডাবল ডেকার বাসে শ্রীপুুরের ওই গ্রামের ‘মাটির মায়া’ নামক রিসোর্টে যাওয়ার পথে ৪৪০ ভোল্ট বিদ্যুৎ লাইনের সাথে একটি বাসের স্পর্শ লাগে। এতে বাসটি বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। এ সময় বিদ্যুৎ স্পর্শে মেকানিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হোসেন নাঈম (২৪), মোস্তাকিম রহমান মাহিন (২২) ও জোবায়ের আলম সাকিব (২২) মারা যান।
তিন শিক্ষারীর মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: জাকিরুল ইসলাম। বেলা ৩টায় আইইউটির প্রোভিসি এসে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেন।
স্থানীয়রা জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামের মাটির মায়া রিসোর্টে ছয়টি দোতলা বাস যাচ্ছিল। পাশের ডুমবাড়িচালা মোড়ে একটি বাসের বিদ্যুৎ লাইনে স্পর্শ লাগে। এতে পুরো বাসের যাত্রীরা চিৎকার দিয়ে উঠে। বাস থেকে ছাত্ররা লাফিয়ে পড়তে থাকে। এতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। ঘটনা স্থলে দুইটি লাশ দেখা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডোমবাড়ী চালা গ্রামের সঙ্কীর্ণ সংযোগ সড়কে গাছপালার ভেতর দিয়ে গেছে ওই বাসগুলো। ঘটনাস্থলে বিদ্যুতের ৪৪০ ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে পাঁচটি বাস চলে যায়। বিআরটিসির বাস নং-ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৫৪৯৯-এ বিদ্যুৎস্পর্শে হতাহতের ঘটনা ঘটে। বাসে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ, জুতাসহ ব্যবহার্য জিনিসপত্র পড়ে আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আরাফাত ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাফজি জানান, আইইউটির বোর্ডবাজার ক্যাম্পাস থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছয়টি ডাবল ডেকার বাস ও তিনটি মাইক্রো যোগে শিক্ষকসহ ৪৬০ জন শিক্ষার্থী বনভোজনে আসেন। ঘটনাস্থলে একটি বাসে বিদ্যুতের তারে স্পর্শ লাগে। তাদের চারটি বাস নিরাপদে চলে আসে। পেছনের বাসে এ ঘটনা ঘটে। এ দিকে পরে ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে মাটির মায়া রিসোর্টে সংবাদকর্মীরা গেলে শিক্ষার্থীরা তাদের লাঞ্ছিত করেন।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা: জাকিরুল ইসলাম জানান, দুই শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়।
শ্রীপুর থানার ওসি মো: জয়নাল আবেদিন মণ্ডল জানান, বনভোজনের বাসে বিদ্যুৎস্পর্শে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। পরে জানা যাবে মোট কত জন হতাহত হয়েছে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছালমা খাতুন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রতিনিধিসহ উপজেলার নির্বাহী অফিসার ব্যারিস্টার সজিব আহমেদ, ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ মাওনার ডিজিএম এবং শ্রীপুর থানার ওসি মো: জয়নাল আবেদীন মণ্ডলকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিট গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে কারো গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি মো: রাকিবুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, বনভোজনে এসে একটি বাস দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে শিক্ষার্থী হতাহতের ঘটনা ঘটে। আমরা তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি। এ বিষয় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। নিহতদের অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তর
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, বাসে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) তিন শিক্ষার্থীর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ স্বজন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো: সফিকুল ইসলাম খান জানান, ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছে আবেদন করে। তারই প্রেক্ষিতে লাশগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে।
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বার্ষিক বনভোজন ছিল। শ্রীপুরে একটি রিসোর্টে যাওয়ার পথে উদয়খালী এলাকায় দ্বিতল একটি বাস বিদ্যুতায়িত হয়। বাসের দরজার দিকে থাকা তিনজন বিদ্যুতায়িত হয়ে গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত তিন শিক্ষার্থী হলেন ফেনীর মাস্টারপাড়া এলাকার মোতাহার হোসেনের ছেলে মীর মোজাম্মেল (২৩), রাজশাহীর রাজপাড়া ডিঙ্গাবো এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে জোবায়ের আলম (২২) ও রংপুর সদর উপজেলার ইমতিয়াজুর রহমানের ছেলে মুবতাছিন রহমান (২২)। তারা সবাই মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
আহত ঢাকার মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকার কাবিদুল ইসলাম (২২) ও ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার নাফিজ আলম খান (২২) ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তাদের আহছানিয়া মিশন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা