২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের দাবি

এলডিসি দেশের জন্য ২০০ বিলিয়ন ডলার চায় বাংলাদেশ
-


বাকুতে চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৯) বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলোর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা কপ-২৯ সমঝোতা থেকে নতুন জলবায়ু অর্থায়নের ওপর সুস্পষ্ট কর্মকাঠামো এবং ধনী দেশগুলোর প্রতি ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের জলবায়ু অর্থায়নের দাবি করেছেন। এর পাশাপাশি তারা জলবায়ু সঙ্কটের আলোচনাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করার জন্য জি-২০ নেতাদের অভিযুক্ত করেছেন। কারণ এবারের কপ-২৯ সম্মেলনে তাদের বার্তা ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। এতে বিস্তারিত বিবরণীর যথেষ্ট ঘাটতি ছিল, আলোচনায় গভীরতার যে প্রত্যাশা ছিল তার সলিল সমাধি ঘটেছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
আজারবাইজানের বাকুতে কপ-২৯ ভেনুতে ‘এলডিসি এবং এমভিসিভুক্ত দেশগুলোর প্রত্যাশা এবং কপ-২৯’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক দক্ষিণ এশিয়া (কানসা) থেকে শৈলেন্দ্র যশবন্ত খারাত, পাকিস্তান থেকে এসডিপিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আবিদ সুলেরি, নেপাল থেকে অর্জুন কারকি, বাংলাদেশ থেকে শরীফ জামিলসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশের ইক্যুইটিবিডি এর আমিনুল হক।

সঞ্চালনায় আমিনুল হক তার আলোচনায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে ব্যর্থ হওয়ায় উন্নত দেশগুলোর নেতাদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, তারা এলডিসি, এমভিসি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থপূর্ণ আর্থিক সহায়তা না দিয়ে প্রতারণা করেছে। বিদ্যমান আর্থিক প্রতিশ্রুতির বেশির ভাগই ঋণভিত্তিক এবং বেসরকারি খাতকে তাদের মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। তিনি বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে ২০২৫ সালের আগে নতুন এনডিসি তৈরির প্রতিশ্রুতি দাবি করেন এবং সংশোধিত ঘোষণার মাধ্যমে জলবায়ু সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ন্যূনতম আর্থিক প্রয়োজন হিসাবে ১.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দের দাবি করেন।

শৈলেন্দ্র যশবন্ত খারাতও তার বক্তব্যে এই ব্যর্থতার জন্য জি-২০ নেতাদের অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন ছাড়াই তাদের অলঙ্কারপূর্ণ বক্তব্য কপ-২৯ আলোচনার জন্য মোটেই সহায়ক ছিল না, যেখানে আমরা অব্যাহতভাবে জলবায়ু অর্থায়নের অচলাবস্থাই দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন, বাকুতে বৈশ্বিক উত্তরের জন্য আর কোনো অজুহাত নেই। যেহেতু আমরা কপ-২৯ এর আলোচনার একদমই দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছি তাই সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই উচ্চাকাক্সক্ষী পদক্ষেপ নিতে হবে। এবং এই দশকের অবশিষ্ট সময়ের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু সংক্রান্ত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সক্ষমতা অর্জনে প্রয়োজনীয় জলবায়ু তহবিল প্রদান করতে হবে।
ড. আবিদ সুলেরি বক্তব্যে বলেন, আমরা প্রশমনের উচ্চাকাক্সক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট কাজের কর্মসূচিতে খুব কমই অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি যে বিনিয়োগের সুযোগের নামে শর্ত আরোপ করার যেকোনো চেষ্টা বর্তমান এনডিসিকে দুর্বল করে দেবে। আমরা আইপিসিসি বিশেষজ্ঞদেরকে (আন্তঃসরকারি প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) এনডিসির পর্যালোচনায় যুক্ত হওয়ার জন্য এবং পরবর্তী গ্লোবাল স্টকটেকের সাথে কপ-৩০ এজেন্ডাকে কিভাবে সর্বোত্তমভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যায় তা বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি কপ-২৯ সমঝোতা থেকে নতুন জলবায়ু অর্থায়নের ওপর সুস্পষ্ট কর্ম-কাঠামোর দাবি করেন।

এছাড়া বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, আমরা দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছি যা উপকূলীয় মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য করছে। অথচ কপ-২৯ এই মানুষগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিশ্রুতি ছাড়াই শেষ হচ্ছে। তিনি সমালোচনা করে বলেন, অভিযোজনের জন্য জলবায়ু অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় সমুদ্রের একটি ফোঁটা মাত্র। আমরা পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের দাবি করছি, তবে সেটা হতে হবে ঋণবহির্ভূত এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রক্রিয়ায়।
অর্জুন কারকি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন (জিজিএ) নিয়ে আলোচনার গতি স্থবির হয়ে পড়েছে তহবিল বরাদ্দে উন্নত দেশগুলোর অনীহার পাশাপাশি অগ্রগতি পরিমাপের সূচকে স্বচ্ছতার অভাবের কারণে। অভিযোজন আমাদের মতো উচ্চ জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য লাইফলাইন, কিভাবে অভিযোজন তহবিল ও চাহিদার মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনা যায় তা নিয়ে আমরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। তিনি উন্নত দেশগুলোকে ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন তহবিলে বরাদ্দ দ্বিগুণ নয় তিনগুণ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
এদিকে জলবায়ু সঙ্কটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দের প্রস্তাবে সমর্থন জানাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার বাকুতে কপ-২৯ এর চূড়ান্ত ফলাফলের বিষয়ে এলডিসি মন্ত্রী এবং ইইউ মন্ত্রীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এই আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে অবশিষ্ট সমস্যাগুলোর সমাধানে উভয়পক্ষের সহযোগিতার মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও সমতাভিত্তিক চুক্তি অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি বলেন, অনেক সমস্যা এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তিনি উভয় পক্ষকে একযোগে কাজ করার মাধ্যমে কপ২৯-এ একটি অর্থবহ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

এ ছাড়াও বৈঠকে এলডিসি মন্ত্রীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তাদের মূল অবস্থান তুলে ধরেন।
ইইউ মন্ত্রীরা এলডিসি দেশগুলোর উদ্বেগের বিষয়গুলো স্বীকার করেন এবং জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে জলবায়ু অর্থায়ন, অভিযোজন, নির্গমন হ্রাস এবং গ্লোবাল স্টকটেক প্রক্রিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। কপ২৯-এর চূড়ান্ত আলোচনায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার এ বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement