২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আমরা মানুষের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে সম্মান করি

আনন্দবাজার পত্রিকাকে জামায়াতের আমির
আমরা মানুষের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে সম্মান করি -


বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানের একটি সাক্ষাৎকার ভারতের কলকাতাভিত্তিক বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা প্রকাশ করেছে। সেখান থেকে সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ করেছে। সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আমির বলেছেন যে, কোনো সংগঠন বা দলকে সরানোর জন্য আমাদের কোনো ভূমিকা পালনের প্রয়োজন নেই। মানুষ সব জানেন। তাদের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে আমরা সম্মান করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার দল ভারতের বিরোধী নয়। জামায়াত চায় সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে ভারতসহ সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে।
এখানে অনলাইন থেকে সাক্ষাৎকারটি নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য এখানে তুলে দেয়া হলো।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামীর ভারতবিরোধিতা সর্বজন পরিচিত। কী বলবেন?

উত্তর : সম্পূর্ণ অস্বীকার করছি। এই ধারণা ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের নিশানা করে এই মতবাদ ছড়ানো হয়েছে যাতে জামায়াতের রাজনীতির মিথ্যা ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। সমান মর্যাদা ও সম্মানের ভিত্তিতে আমরা ভারতসহ সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আমাদের আন্তর্জাতিক নীতি, সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়। আমরা চাই ভারতও একই রকম সাড়া দিক, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সহাবস্থানের ভিত্তিতে।
প্রশ্ন : কিন্তু জামায়াতে ইসলামীকে দেখা হয় কট্টর ইসলামী সংস্থা হিসেবে, অন্যান্য ইসলামী রাষ্ট্রে যে ‘ইসলামিক ব্রাদারহুড’ রয়েছে তার অংশ হিসেবে। নিজেদের সংগঠনকে কিভাবে দেখেন?
উত্তর : আবারো! আপনি ধরেই নিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন। এটা একেবারেই অসত্য। জামায়াত একটি আধুনিক, উদার ও গণতান্ত্রিক দল, যার ভিত্তি ইসলামিক আদর্শ। আরো একটি কথা মনে করিয়ে দিই, আমরা একটি স্বাধীন রাজনৈতিক দল। বিশ্বের কোনো রাজনৈতিক সংস্থায় আমাদের প্রতিনিধিত্ব নেই।

প্রশ্ন : কিন্তু বিএনপির একটি অংশ আপনাদের কট্টরপন্থী মনোভাব নিয়ে অস্বস্তিতে। কী বলবেন?
উত্তর : কট্টরপন্থী মনোভাব বলতে কী বোঝাতে চাইছেন, তা অস্পষ্ট। আপনাদের কাগজের মাধ্যমে জোরালোভাবে আবারো বলতে চাই, জামায়াত একটি আধুনিক, উদারপন্থী, গণতান্ত্রিক দল, যার আদর্শ ইসলামের। আমরা সর্বদাই যুক্তিগ্রাহ্য, বাস্তবসম্মত ও মধ্যপন্থা নিয়ে রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণ করি। বিএনপি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী, তারা আমাদের আধুনিক মনোভঙ্গি সম্পর্কে সচেতন।
প্রশ্ন : অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর থেকেই সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় তাদের বিরুদ্ধে হিংসার প্রতিবাদে সরব। কী ভরসা দেবেন?
উত্তর : জামায়াতে ইসলামীর সাথে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অসামান্য সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া রয়েছে। প্রতিটি নাগরিককে সমদৃষ্টিতে দেখা হয় এবং রাষ্ট্রের সমস্ত নাগরিককে সমান অধিকার এবং মর্যাদার ভিত্তিতে সম্মান করা হয়। জামায়াত সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরুর তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়। আমরা মনে করি ধর্মের ভিত্তিতে দেশবাসীর বিভাজন অপরাধ। হিন্দু বা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসার ইতিহাস জামায়াতের নেই। বরং বিভিন্ন সময়ে জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিন্দু নেতাদের সাথে আলোচনাও করেছে।
প্রশ্ন : শেখ হাসিনা সরকারের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আপনারা সরকারে এলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোন দিকে যাবে?

উত্তর : আমার মনে হয় না পুরনো আওয়ামী লীগ জমানার সাথে ভারতের নিছকই ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছিল। আমরা সবাই জানি, ওই সম্পর্কে কার কী স্বার্থ ছিল। তবে নিজেদের কথা বলতে পারি, আমরা চাই ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সৃষ্টি করতে, তবে তা হতে হবে পারস্পরিক সম্মান ও সমতার মাধ্যমে। পড়শিদের সাথে কার্যকরী এবং বাস্তবোচিত সম্পর্ক উভয় রাষ্ট্রের পক্ষেই সুবিধাজনক। সরকারে এলে সেটাই করতে চাইব।
প্রশ্ন : একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এবং জামায়াত মিলিমিশে আওয়ামী লীগের পর এবার বিএনপিকেও সরিয়ে দিতে চাইছে। দুই বড় রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে নতুন শক্তির উত্থান হবে। কতটা ঠিক?
উত্তর : সবিনয়ে বলতে চাই এই তত্ত্বের কোনো ভিত্তি নেই। আওয়ামী লীগের প্রতি জনতার সম্মিলিত ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছিল দুর্নীতি এবং ফ্যাসিবাদী নীতির কারণে। তারা নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে এনেছে। কোনো সংগঠন বা দলকে সরানোর জন্য আমাদের কোনো ভূমিকা পালনের প্রয়োজন নেই। মানুষ সব জানেন। তাদের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে আমরা সম্মান করি। এইটুকু বলতে পারি, কোনো রাজনৈতিক দলকে খারিজ করা বা সরিয়ে দেয়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement