সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে ঘিরে উচ্ছ্বাস
পাশাপাশি বসলেন ড. ইউনূস- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০৫
শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই দীর্ঘ এক যুগ পর গতকাল সেনাকুঞ্জে গেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ দিন পর রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে বেগম জিয়ার এই আগমন অনেককেই আপ্লুত করেছে। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তার সাথে কুশল বিনিময় করেছেন সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেগম জিয়ার সাথে পাশাপাশি চেয়ারে বসে কুশল বিনিময় করেছেন, তার সাথে কথা বলেছেন। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্ররাও বেগম জিয়ার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তার সাথে হাস্যোজ্জ্বল ছবি তোলেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড. ইউনূস তার বক্তৃতার শুরুতেই বেগম জিয়াকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ এখানে আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন। এক যুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মিলনীতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান নাই। আজকে সুযোগ পেয়েছেন। আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত যে এই সুযোগ দিতে পেরেছি আপনাকে।’ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বেগম জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও এই বিশেষ দিবসে সবার সাথে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’ খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা। এর আগে বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে পৌঁছান বেগম খালেদা জিয়া। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান তাকে অভ্যর্থনা জানান। বেগম জিয়া অনুষ্ঠানস্থলে তার নির্ধারিত চেয়ারে বসার পর তার সাথে কুশল বিনিময় করেন আগত অতিথিরা।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বেগম খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছে তার আসনে বসার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সাথে কুশল বিনিময় করেন। আগেই অনুষ্ঠানে পৌঁছান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ম্যাডামকে অনুষ্ঠানে দেখে তিনি কেঁদে ফেলেন।
বেগম জিয়ার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সরকারের তিন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াসহ অন্যান্য উপদেষ্টারাও।
গোটা জাতি আজ আনন্দিত : মির্জা ফখরুল
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে যে সম্মান জানানো হয়েছে, তাতে গোটা জাতি আনন্দিত। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এ দেশের জন্য তার জীবনের সবচেয়ে বড় সময়টা দিয়েছেন গণতন্ত্রের জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য। তাকে ১২ বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে সবচেয়ে দেশপ্রেমিক বাহিনী সেনাবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী থেকে দূরে করে রাখা হয়েছিল। আমি আজকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এবং বিশেষ করে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যে, তিনি আজকে ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) যে সম্মান দেখিয়েছেন এতে আমরা যেমন কৃতজ্ঞ, একই সাথে গোটা জাতি আজকে আনন্দিত হয়েছে।
এর আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা হন বলে জানান প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার। ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান এ সময় বেগম জিয়ার সাথে ছিলেন।
সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মহাসচিব ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।
এবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির ২৬ নেতাকে সেনাকুঞ্জে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
দেখা করলেন তরুণ উপদেষ্টারা : খালেদা জিয়ার সাথে কুশল বিনিময় করেছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের তরুণ দায়িত্বশীলরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াসহ অনেকে। কুশল বিনিময়কালে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করেন মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম আপনার শরীর কেমন?’ এ সময় খালেদা জিয়া জানান, ‘না, বেশি ভালো না।’ মাহফুজ আলম তখন বলেন, ‘আপনাকে ভালো থাকতে হবে। সামনে আসলে একটা কনফিডেন্স বের হয়।’
এ ছাড়া ২৪ এর অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতা সারজিস আলম, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, উপদেষ্টা আসিফ নজরুলসহ অনেকে খালেদা জিয়ার সাথে কুশল বিনিময়ের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার সাথে কুশল বিনিময় করেন গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা