২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গাজায় প্রতি ৩০ মিনিটে একটি শিশুকে হত্যা ইসরাইলের

-

গাজা উপত্যকা হাজার হাজার শিশুর কবরস্থানে পরিণত হয়েছে বলে জাতিসঙ্ঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল গাজায় কমপক্ষে ১৭ হাজার ৪০০ শিশুকে হত্যা করেছে বলে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা তথ্য দিয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি ৩০ মিনিটে একজন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো হাজার হাজার শিশু নিখোঁজ রয়েছে, যাদের অধিকাংশই মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর : আলজাজিরা ও রয়টার্স।
বেঁচে থাকা শিশুদের বেশির ভাগ যুদ্ধের মারাত্মক প্রভাব সহ্য করে যাচ্ছে। হাজার হাজার শিশু আহত। তাদের জীবন ইসরাইলি হামলার ছায়ায় কাটছে। জন্ম থেকেই তাদের অস্তিত্বের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করেছে ইসরাইলি হামলা। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত নথিভুক্ত শিশুদের মধ্যে অন্তত এক বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে ৭১০ জন, এক থেকে তিন বছর বয়সী শিশু রয়েছে এক হাজার ৭৯৩ জন, চার থেকে পাঁচ বছর বয়সী রয়েছে এক হাজার ২০৫ জন, ছয় থেকে ১২ বছর বয়সী রয়েছে চার হাজার ২০৫ জন এবং ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী রয়েছে তিন হাজার ৪৪২ জন।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ১৭ হাজারের বেশি শিশু কেউ বাবা অথবা মা আবার কেউ বাবা-মা উভয়কে হারিয়েছে। ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা একটি গণহত্যা প্রত্যক্ষ করছি।’ সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, ‘ইসরাইলের অব্যাহত হামলার কারণে প্রতিদিন ১০ জন শিশু একটি বা উভয় পা হারাচ্ছে। অপারেশন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পা কেটে বাদ দেয়া হচ্ছে কোনো অ্যানাস্থেসিয়া ছাড়াই।’ ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, ‘নিরাপদ পানি না পেলে অনেক শিশু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে।’ শিশুরা পানিশূন্যতার ঝুঁকিতে বেশি রয়েছে।
প্রতিদিন গাজায় যা হচ্ছে : গাজায় প্রতিদিন গড়ে ১১৫ জন নিহত হয়েছে (গাজায় বসবাসকারী প্রতি ৫৫ জনের মধ্যে একজন)। এর মধ্যে ৪৬ জন শিশু, ৩১ জন নারী, ৩৮ জন পুরুষ। আহত হচ্ছেন ২৬৬ জন (গাজায় প্রতি ২৩ জনের মধ্যে একজন)। ধ্বংস্তূপের নিচে নিখোঁজ রয়েছে ২৭ জন। পাঁচ হাজার ৪৮০ জন তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। গাজায় একই নামের অনেক শিশু নিহত হয়েছে। আলজাজিরার প্রতিবেদনে সেগুলো ‘এ থেকে জেড’ পর্যন্ত বর্ণানুক্রমিকভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
মৃতের সংখ্যা ৪৪ হাজার ছুঁই ছুঁই : এ দিকে গাজার মৃতের সংখ্যা ৪৩ হাজার ৯৮৫-এ পৌঁছেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ইসরাইলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জন নিহত এবং আরো ৮৫ জন আহত হয়েছে। গাজার এক লাখ চার হাজার ৯২ জন যুদ্ধে আহত হয়েছে। এর মাঝে গাজার রাফাহ, নুসিরাতে ইসরাইলি হামলায় আরো দুইজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খিরবেত আল-আদাস এবং আল-জাইনা এলাকায় দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ দিকে মধ্য গাজার নুসাইরাত শরণার্থীশিবিরে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় আরো দুই ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। উত্তর গাজায় জাবালিয়ায় মারাত্মক হামলায় ১২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন।

গাজা সফরে নেতানিয়াহু : অন্য দিকে ফিলিস্তিনের গাজা সফরে গেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেখানে গত মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর হামাস আর এ ভূখণ্ড শাসন করতে পারবে না। ইসরাইল ইসলামপন্থী সংগঠনটির সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করে দিয়েছে। ইসরাইল এখনো ১০১ জন বন্দীর অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা ছাড়েনি বলেও জানান নেতানিয়াহু। তিনি প্রতিজন বন্দীকে ফেরতের বিনিময়ে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন।
ওই বন্দীরা এখনো গাজার ভেতরেই অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হয়। নেতানিয়াহু বলেন, ‘যেই আমাদের জিম্মিদের ক্ষতি করার দুঃসাহস দেখাবেন, তাকে চূড়ান্ত মূল্য দিতে হবে। আমরা আপনাকে খুঁজে বের করব ও শাস্তি দেবো। আর যিনি আমাদের কাছে একজন বন্দীকে নিয়ে আসবেন, তাকে ও তার পরিবারকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে। বেছে নিন, পছন্দ আপনার; কিন্তু ফলাফল একই থাকবে। আমরা তাদের সবাইকে ফিরিয়ে আনব।’
পতনের মুখে ইসরাইলি অর্থনীতি : ইসরাইলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ায়ির লাপিদ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভার তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ইসরাইলের অর্থনীতি পতনের মুখে রয়েছে। তিনি সম্প্রতি তেল আবিবে এক বক্তৃতায় বলেন, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলি পণবন্দীরা আটক রয়েছেন। ইসরাইলের অর্থনীতিও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। অথচ নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা বাধ্যতামূলক সামরিক দায়িত্ব পালনে অস্বীকারকারীদের শাস্তিবিষয়ক আইন অনুমোদনের কাজে ব্যস্ত রয়েছে।
পার্সটুডের রিপোর্ট অনুযায়ী, নেয়ানিয়াহু নিজের মূল দায়িত্ব অর্থাৎ পণবন্দীদের ফিরিয়ে আনার কথা ভুলে গেছেন উল্লেখ করে লাপিদ বলেন, এই ব্যক্তি ইসরাইলি নাগরিকদের আস্থা পাওয়ার যোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সোমবার রাতে ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটে দেয়া বক্তৃতায় দাবি করেন, গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি পণবন্দীদের মুক্ত করে আনার প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি। কিন্তু নেতানিয়াহুর এই দাবি খোদ নেসেট সদস্যরাই বিশ্বাস করেননি। সেই সাথে নেসেট অধিবেশনে উপস্থিত পণবন্দীদের আত্মীয়-স্বজনরাও প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন। তারা সমস্বরে নেতানিয়াহুকে কথা বলতে বাধা দেন এবং তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন।


আরো সংবাদ



premium cement