দল নিষিদ্ধের বিধান থাকছে না আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে ব্রিফিং- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৭
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে থাকছে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। গতকাল বুধবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, আসিফ মাহমুদ সজিব ভুইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ায় বিভিন্ন হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন, সাংবাদিক, দেশী-বিদেশী আইনজীবীর মতামত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও জাতিসঙ্ঘের হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সকল মতামতের ভিত্তিতে আমরা একটা খসড়া করেছি। এটা উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করা হলে তা গৃহীত হয়েছে। তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়েছে সংশোধনী দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। আমরা যে আইনের সংশোধনীটা করেছিলাম সেখানে রাজনৈতিক দলকে শাস্তি দেয়ার বিধান ছিল। খসড়ায় বলা ছিল, আদালত যদি মনে করেন তারা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কনসার্নড অথোরিটির (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ) কাছে সুপারিশ করতে পারেন।
তিনি বলেন, আইনের সংশোধনীতে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি তিন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিচারের বিধান রাখা হয়েছে। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হয়েছে। ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো পরিবর্তন করে স্বচ্ছ উপায়ে বিচারের জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে। রোম স্ট্যাটিউট অবলম্বন করে জেনোসাইড, মানবাধিকারবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞা পরিবির্তন করা হয়েছে সংশোধনীতে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তিন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থারও বিচারের বিধান রাখা হয়েছে সংশোধনীতে।
আসিফ নজরুল বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনায় বলা হয়েছে, আমার এই বিচারকে অন্য কোনো বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত করতে চাই না। রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্ন এলে এই আইনকে অযথাই প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমরা সেই সুযোগ দিতে চাই না। আমরা ডিসেন্টওয়েতে/ফেয়ারওয়েতে বিচারটা করতে চাই। এজন্য প্রভিশনটা বাতিল করা হয়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে আমরা অনুভব করেছি যদি কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি সমাজে উঠে তাহলে আমাদের অন্যান্য আইন আছে বলেও জানান তিনি। আসিফ নজরুল আরো বলেন, এই আইনে অভিযুক্ত পক্ষকে সমান সুযোগ দেয়া হয়েছে। সাক্ষীর নিরাপত্তার যথেষ্ট সুযোগ থাকবে। সাক্ষ্য-প্রমাণের অডিও-ভিডিও প্রয়োজনে প্রচার করতে পারবে.. সবার সম্মান বজায় রেখে। আন্তর্জাতিক বা দেশীয় মানবাধিকার সংগঠন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত থেকে বিচার পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাদেশে সংরক্ষণের প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বিচার প্রক্রিয়ার অডিও ও ভিডিও করার বিধান রাখা হয়েছে। সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
জেনেভায় হামলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, এটা পুরনো ইস্যু। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা দেখছে। যেহেতু এটা তারা তদন্ত করবে, তাই ব্যক্তিগতভাবে কিছু বলতে চাই না। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তো ব্যক্তির ওপর হামলা না। হামলাটা হয়েছে সরকারের একজন উপদেষ্টার ওপরে। ব্যক্তি আসিফ নজরুলের ওপর তো জীবনেও কোনো দিন হামলা হয়নি। কাজেই এটিকে ব্যক্তি ইস্যু বলছি না।
ছাত্ররা যেন যেকোনো উসকানিতে না পড়ে : তিতুমীরসহ সাত কলেজের আন্দোলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুইয়া বলেন, এ বিষয়গুলো দুঃখজনক। যখন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করছিল তখন প্রতিনিধি দলের সাথে শিক্ষা উপদেষ্টাসহ আমি বসেছিলাম। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলো সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। সমাধানের পথটা দেখানো হয়েছিল। এত দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন সম্ভব না। সেখান থেকে তাদের সাথে আলোচনা হয়েছিল।
তিনি বলেন, তিতুমীর কলেজকেন্দ্রিক যে ঘটনাটা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আপনারা দেখেছেন যে, উনারা বলছিল অনুপ্রবেশকারীরা। কিভাবে ট্রেনের ভেতর পাথর ছুড়ে শিশুর পর্যন্ত মাথা ফেটে গেছে। এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। আজকেও ঢাকা ও সিটি কলেজের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে, এখনো স্পষ্ট না যে আসলে তাদের মধ্যে কী বিষয়ে এ সংঘর্ষ হয়েছে। এই অঞ্চলটায় প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা দেখে থাকি। ছাত্রদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে যেকোনো প্রকার উসকানির মধ্যে যেন না পড়ে। যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে আমাদের যে নাগরিক দায়িত্ব সেটা যেন বজায় রাখি।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, আমাদের যেটা দৃষ্টিভঙ্গি সেটা হচ্ছে ছাত্ররা এই আন্দোলনে (বৈষম্যবিরোধী) নেতৃত্ব দিয়েছে এবং সাধারণ জনগণ সবাই মিলে একটা গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। ছাত্রদের ভেতরে এখনো অনেক ধরনের আকাক্সক্ষা ও দাবি-দাওয়া আছে। দাবি-দাওয়াগুলোর ক্ষেত্রে সরকার খুবই আন্তরিক। আপনারা আসেন, কথা বলেন। কথা বলে আমরা চাই সমাধান করতে।
তিনি বলেন, আমরা বারবার বলেছি যে, কোনো উসকানি কিংবা যে নেগেটিভ এলার্জি আছে সেগুলো না করে সরকারের সাথে প্রপার চ্যানেলে আসেন, কথা বলেন, সরকার আপনাদের কথা শুনতে ইচ্ছুক এবং সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে চায়। ছাত্ররা যেহেতু একটা গণ-অভ্যুত্থান সফল করতে পেরেছে, আমার মনে হয় তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।
আন্দোলনত ছাত্রদের উদ্দেশে আসিফ নজরুল বলেন, আপনারা তো আলোচনা করে একটা প্রস্তাব সরকারকে জানানোর কথা। সেটা তো কার্যকর করা গেল না। আরেকটা আহ্বান ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে সমাবেশ করবেন, যাতে জনগণের ভোগান্তি না হয়। সেটাও শোনা হচ্ছে না। এখন যেকোনো দাবিতে জনমানুষকে জিম্মি করে অসহনীয় যানজট সৃষ্টি করে মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাবিতে; উনাদের কাছে বড় কিন্তু, দেশের পরিপ্রেক্ষিতে একটা কলেজকে রাতারাতি বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে ফেলা..., এজন্য সারা রাজধানীর মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা এটা কতটুকু সমীচীন তা, উনারা যাতে ভেবে দেখেন।
প্রবাসীদের পাসপোর্ট সমস্যা প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, শুধু মালয়েশিয়া না, অনেক দেশেও পাসপোর্টের জন্য অনেক ঝামেলা হচ্ছে, প্রবাসীরা আমাকে অনেক মেসেজ লেখেন। উনারা হয়তো ভাবেন আমি পড়ি না। আমি সবই পড়ি। অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আরব আমিরাতে আটক থাকা আরো কিছু বাংলাদেশীকে ফেরত আনার জন্য সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে।
দুর্বল কারখানা বন্ধ হবে, হচ্ছে কমিটি : এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুইয়া বলেন, শুরুর দিকে শ্রম অঞ্চলে অনেক বেশি অসন্তোষ ছিল। প্রায় প্রত্যেকটা দাবি অ্যাড্রেস করার মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে এসেছি। কিন্তু মালিক পক্ষ থেকে বেতন না দেয়া হলে তো শ্রমিক বসে থাকবে না, এটা স্বাভাবিক। বেক্সিমকো গ্রুপের গত দুই মাসের বেতন সরকার ব্যাংকের মাধ্যমে ম্যানেজ করে দিয়েছে। এটা এভাবেই চলতে থাকবে, সেটা আমরা চাই না। স্থায়ী সমাধানে যেতে চাই, সেজন্য একটা হাই পাওয়ার (উচ্চ পর্যায়ের) কমিটি করা হবে। তারা একটা প্রস্তাবনা দেবে, কারণ- অনেক কারখানা আছে। যেগুলোর আর চলমান রাখার বাস্তবতা নেই। কাজের অর্ডার নেই, এক্সপোর্ট নেই, সেখানে শ্রমিকদের রেখে কন্টিনিউ করা সম্ভব না। যেসব (কারখানা) সম্ভব না, সেগুলো অ্যাড্রেস করে শ্রমিকদের পাওনা ও বেতন দিয়ে বন্ধ করার ব্যাপারে বিবেচনা করা হবে। ওই কমিটি সরকারকে এ বিষয়ে একটা প্রস্তাবনা দেবে।
নতুন আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, সার্বিক যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো জোরদার করার জন্য পুলিশের এই পরিবর্তনটা এনেছে সরকার। এ ছাড়াও প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থবিরতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সেসব ক্ষেত্রেও সরকার আরো পরিবর্তন নিয়ে আসবে। যাতে আমরা জনকল্যাণে আরো গতিশীলতার সাথে কাজ করতে পারি এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারি।
বিচারকাজের অডিও-ভিডিও ধারণ করা যাবে : আইন ও বিচার বিভাগ আন্তর্জাতিক অপরাধগুলোর সংজ্ঞা যুগোপযোগী করেছে। এছাড়া অপরাধের দায় নির্ধারণ, অডিও ও ভিডিওর মাধ্যমে বিচারকাজ ধারণ ও সম্প্রচার, বিদেশী কাউন্সেলের বিধান, বিচারকালে অভিযুক্তের অধিকার, অন্তর্বর্তীকালীন আপিল, সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রাসঙ্গিকতা সংক্রান্ত বিধান, তদন্তকারী কর্মকর্তার তল্লাশি ও জব্দ করার বিধান, বিচার চলাকালে পর্যবেক্ষকের উপস্থিতি, সাক্ষীর সুরক্ষা, ভিকটিমের অংশগ্রহণ ও সুরক্ষার বিধান সংযোজন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩ সংশোধনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করে প্রস্তুত করা হয়।
গতকাল বুধবার উপদেষ্টা পরিষদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যনাল অর্ডিনেন্স-২০২৪-এর খসড়া-ভেটিং সাপেক্ষে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ প্রণয়ন করা হয়। আইনটি রোম স্ট্যাটিটিউ অব ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের সাথে সামঞ্জস্যতা আনা এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রচলিত বিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ থাকা জরুরি। এই আইনের অধীনে বিচার নিয়ে দেশী ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের কিছু সুপারিশ ছিল। সেই সুপারিশগুলোর আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আইন ১৯৭৩ সংশোধন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অর্ডিনেন্স ২০২৪-এর খসড়া নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ, দফতর, বিশ্ববিদ্যালয়, মানবাধিকারকর্মী ও সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক আইনে বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনের সাথে একাধিক সভা করে তাদের মতামত ও পরামর্শ পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর পর আইন ও বিচার বিভাগ উল্লিখিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ ও মতামত খসড়ায় সংযোজন করে তা পরিমার্জন করেছে।
এক দিকে সংসদ কার্যকর নেই। অপরদিকে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন সংঘটিত অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার সময়ের দাবি। এমন বাস্তবতায় বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করা জরুরি মনে করা হচ্ছে। সে কারণে উপদেষ্টা পরিষদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংশোধনী অধ্যাদেশ-২০২৪ এর খসড়া ভেটিং সাপেক্ষে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
এদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৪, মানবাধিকার সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার যথাযথভাবে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়। ওই আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান, একজন সার্বক্ষণিক সদস্য এবং পাঁচজন অবৈতনিক সদস্য সমন্বয়ে মানবাধিকার কমিশন গঠনের বিধান রয়েছে। গত ৭ নভেম্বর মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, একজন সার্বক্ষণিক সদস্য ও চারজন অবৈতনিক সদস্য তাদের স্বীয় পদ হতে পদত্যাগ করেন। মানবাধিকার কমিশনের অপর একজন অবৈতনিক সদস্য গত ২২ আগস্ট পদত্যাগ করেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ পদত্যাগ করায় মানবাধিকার কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রদানের জন্য ওই আইনের ধারা ৭ এর অধীন জাতীয় সংসদের স্পিকারের সভাপতিত্বে একটি বাছাই কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। বাছাই কমিটিতে জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং অন্য একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য মনোনয়নের বিধান রয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে যাওয়ায় এবং ওই সংসদের স্পিকার পদত্যাগ করায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের জন্য বাছাই কমিটি সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করা প্রয়োজন। এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের জন্য বাছাই কমিটির সভাপতির অবর্তমানে বা অনুপস্থিতিতে কমিটির সভায় উপস্থিত সদস্যদের সম্মতিতে যেকোনো সদস্য যাতে সভায় সভাপতিত্ব করতে পারেন এবং কেবল কোনো সদস্য পদে শূন্যতা বা বাছাই কমিটি গঠনে ত্রুটি থাকার কারণে যাতে এর কোনো কার্য বা কার্যধারা অবৈধ না হয়, এর কার্যধারা নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা না যায়, সে সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর খসড়া উপদেষ্টা পরিষদ চূড়ান্ত অনুমোদন করে।
অপরদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ এর ধারা-৬ এর অধীন বিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তি সম্পাদন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জনমনে প্রবল বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে এবং গত ১৪ নভেম্বর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০ এর ৬(২) ও ৯ ধারা হাইকোর্ট থেকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।
উপরিউক্ত বাস্তবতায় জনস্বার্থে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্রয় ও সরবরাহ নিশ্চিতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উপদেষ্টা পরিষদ বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ রহিতকরণের নীতিগত ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। ভেটিং সাপেক্ষে উপরিউক্ত প্রস্তাবটির খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও আওতাধীন দফতর/সংস্থা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় সংসদ, বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মোট প্রায় এক হাজার ২৬১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এ ব্যয় সম্পর্কে উপদেষ্টা পরিষদ অবহিত হয়েছে এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছর হতে এ সংক্রান্ত বাজেট বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস এবং ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় প্রবাসী দিবস এক সাথে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা। প্রতি বছর এই দিবস দুটি পৃথকভাবে উদ্যাপন করা হয়। দিবস দু’টি উদ্যাপনের উদ্দেশ্য একই ধরনের এবং ব্যবধান মাত্র ১২ দিন। তাই দিবস দু’টি একসাথে উদ্যাপন করা হলে শ্রমঘণ্টা সাশ্রয়সহ সরকারি অর্থের ব্যয় সংকোচন করা সম্ভব হবে। এখন থেকে দু’টি দিবস একই দিনে অর্থাৎ প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেইসাথে, সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে সমধর্মী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসগুলো পালনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপনকে প্রাধান্য দিয়ে সমধর্মী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসগুলো একই তারিখে একত্রে পালন করার বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ নির্দেশনা প্রদান করে।
অপরদিকে, বাংলাদেশ আইন কর্মকর্তা (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। অভিজ্ঞ, দক্ষ ও যোগ্য অতিরিক্ত অ্যাটর্নি-জেনারেল ও ডেপুটি অ্যাটর্নি-জেনারেল নিয়োগের জন্য ১৯৭২ সালের দি ল অফিসার অর্ডিনেন্সে এ সংশোধনী আনা হয়েছে। এই সংশোধনীর ফলে বিদ্যমান অ্যাটর্নি সার্ভিস শক্তিশালী হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা