মুজিববর্ষ উদযাপনে ব্যয় ১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা
- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬
- খরচের শীর্ষে স্থানীয় সরকার বিভাগ ২৮৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা
- ব্যয় নিয়ে অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতি ও অনিয়মের
ছয় অর্থবছরে মুজিববর্ষ উদযাপনের জন্য বিভিন্নœ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করেছে। এই খরচের পরিমাণ এক হাজার ২৬১ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। মোট ১০টি খাতে তারা এই অর্থ খরচ করেছে। ব্যয়ের দিক থেকে ছয়টি মন্ত্রণালয়ই খরচ করেছে ৮৪ ভাগ অর্থ, যার পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৬০ কোটি টাকা। খরচের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আছে- স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্থানীয় সরকার বিভাগ। এই বিভাগ একাই ব্যয় করেছে ২৮৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এরপরই রয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। মুজিববর্ষ উদযাপনের জন্য এই মন্ত্রণালয় ব্যয় দেখিয়েছে ২৭৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। শিল্প মন্ত্রণালয় খরচ করেছে ১৯৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের খরচ ১৩৮ কোটি তিন লাখ টাকা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণায়ের ব্যয় ১৩৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা। জননিরাপত্তা বিভাগ খরচ দেখিয়েছে ৪২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, মুজিববর্ষ উদযাপনের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মোট ১০টি খাতে অর্থ ব্যয় করেছে। ব্যয়ের এই খাতের মধ্যে রয়েছে- ভবনে ও করিডরে ড্রপডাউন পিভিসি ব্যানার, ডিজিটাল বিলবোর্ড ও স্টিল বিলবোর্ড স্থাপন। এ ছাড়া ডকুমেন্টারি ভিডিও প্রস্তুত ও স্মরক গ্রন্থ প্রকাশ, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। কোটপিন মুদ্রণ, আলোকসজ্জা, মুজিব কর্নার স্থাপন, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চিকিৎসাসেবা দেয়া। এর বাইরে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য নির্মিত ঘরে নলকূপ স্থাপন ইত্যাদিও ছিল।
অর্থ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খরচের এই হিসাব দিয়েছে। তবে অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এখন পর্যন্ত পাঠায়নি বলে জানা গেছে। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের খরচের হিসাব পাওয়া গেলে মুজিব বর্ষ উদযাপনের ব্যয় আরো বাড়বে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। যেমন- ৬৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কত অর্থ ব্যয় করেছে তার কোনো বিবরণী অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এর আগে প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে তার একটি চিত্র যেন তাদের দফতরে পাঠানো হয়। এই নির্দেশনার পর অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে মুজিববর্ষ উদযাপন করতে গিয়ে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে তার হিসাব জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ব্যয়ের একটি হিসাব অর্থ বিভাগের কাছে পাঠিয়েছে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের খরচ বিবরণীতে দেখা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয় মুজিববর্ষ উদযাপনে কত অর্থ ব্যয় হয়েছে তার কোনো হিসাব দেখায়নি। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ খাতে ব্যয় দেখিয়েছে মোট সাত কোটি ১২ লাখ টাকা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় তিন কোটি ২৩ লাখ টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ৪২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। একই মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ ব্যয় করেছে পাঁচ কোটি ১৩ লাখ টাকা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ১৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছয় কোটি টাকা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ১২ কোটি ৩০ লাখ টাকা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় খরচ করেছে ১২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, গত ১২ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট-১ অনুবিভাগ থেকে ‘মুজিববর্ষ উযাপন উপলক্ষে ব্যয়িত অর্থের হিসাব প্রণয়ন’ শীর্ষক একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। এই বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব শাহরিয়ার জামিল স্বাক্ষরিত চিঠিটি সরকারের ৫৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিবসহ রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের আপন বিভাগের সামরিক সচিব, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবসহ (প্রশাসন ও টিডিএম) মোট ৬৩ জনকে পাঠানো হয়েছিল। এতে মুজিববর্ষের কাজের বিবরণ ও প্রকৃত ব্যয় জানানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত ১২ নভেম্বর ইস্যু করা চিঠিতে একই দিন বিকেল ৪টার মধ্যে বিবরণ পাঠানোর কথা উল্লেখ ছিল।
সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য পুরো বছরকে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ তার ১০০ বছর পূরণ হয়। আর এই সময়কে স্মরণীয় করে রাখতে ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা দেয় সরকার। মুজিববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচি কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব না হওয়ায় মুজিববর্ষের সময়কাল ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। সেটি পরে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর এমনকি ইউনিয়ন পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করা হয়। সরকারি কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও দিবসটি পালন করা হয়। এতে যে ব্যয় হয়, তাতে বিভিন্ন জায়গায় অনিয়ম, দুর্নীতির পাশাপাশি অধিক অর্থ অপচয়ের অভিযোগ ওঠে। এই অর্থ লোপাটের সাথে আওয়ামী লীগ দলীয় লোক, মন্ত্রী ও একশ্রেণীর আমলারা জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা