ফ্যাসিবাদে সমর্থন ও শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া গণমাধ্যম চিহ্নিত হবে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬
ফ্যাসিবাদে সমর্থন ও জুলাই অভ্যুত্থানে যেসব গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া হয়েছে, সেসব গণমাধ্যম চিহ্নিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে গত ১৬ বছর কার কী ভূমিকা ছিল তা নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। গত নির্বাচনগুলোকে কারা বৈধতা দিয়েছে দেখতে হবে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, পয়লা জুলাই থেকে ৫ আগস্ট কোন কোন গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া হয়েছে, কোন কোন গণমাধ্যমে ফ্যাসিবাদী বয়ান তৈরি হয়েছে তা চিহ্নিত করা হবে। কারণ গণমাধ্যমগুলো ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী দোসর মুক্ত না হলে ছাত্র-জনতার নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অনেক সাংবাদিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাদেরকে আমি অভিবাদন জানাই। তবে গত ১৬ বছরে যারা ফ্যাসিবাদ তৈরিতে সমর্থন দিয়েছেন, তাদের দেখা হবে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে কিছু গণমাধ্যম ছাত্র-জনতাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছিল মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব বলেন, দেশে যে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ তৈরি হলো, তাদের পেছনেও কাজ করেছেন কিছু কিছু সাংবাদিক। কারা করেছেন, কিভাবে করেছেন সেগুলো দেখতে হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস কনফারেন্সে কী ধরনের ফ্যাসিবাদী বক্তব্য দেয়া হয়েছে, সেখানে কার কী ভূমিকা ছিল সেগুলো খুঁজে বের করা হবে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বলা হতো ওরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী। তাদেরকে নির্বাচন করতে দেয়া যাবে না। এসব গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব বলেন, আমাদের মধ্যে যেন ফ্যাসিবাদী আচরণ তৈরি না হয়। ওরা যেভাবে শিবির ট্যাগ দিয়ে ক্রিটিসাইজ করতো আমরাও যেন সেটি না করি। যেভাবে ওরা মুক্ত সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে, আমরা যেন সেটি না করি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, ছাত্র-জনতার নতুন বাংলাদেশ গড়া তত দিন সম্ভব হবে না, যত দিন দেশের গণমাধ্যমগুলো ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী দোসর মুক্ত না হবে। আমরা গণতন্ত্রপরায়ণ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ পেয়েছি, এ বাংলাদেশ থেকে শক্ত হাতে গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে হবে। মূলত, ১৯৭১ সালে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে ছিল তারাও যেমন রাজাকার, ২৪ এর এ গণহত্যার সময় যারা ছাত্র-জনতার বিপক্ষে ছিল এরাও রাজাকার। এসব রাজাকারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
সভায় গণমাধ্যম সংস্কারে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো, স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার গণমাধ্যমের জন্য অনেকগুলো নীতি ও আইন প্রণয়ন করে গেছে। কিন্তু সবই করেছে নিয়ন্ত্রণের আকাক্সক্ষা থেকে। তাই বিদ্যমান সব নীতি-আইন থেকে নিয়ন্ত্রণমূলক ধারা পরিমার্জনা করে একটি স্বাধীন গণমাধ্যম ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সঠিক তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের যেসব মালিক ও নির্বাহীরা গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করেছে, তদন্তসাপেক্ষ তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে, স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ তৈরি।
মিডিয়ার মালিকানা ও অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যাতে রাজনৈতিক প্রভাব বা স্বার্থপরায়ণতা এড়ানো যায়। বড় করপোরেট ও রাজনৈতিক দলের মালিকানাধীন মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনি কাঠামো নিশ্চিত করা।
যেকোনো সময় যেকোনো টেলিভিশন ও পত্রিকা সরকার বন্ধ করে দিতে পারার যে ভয়ঙ্কর পদ্ধতি বা নীতি রয়েছে, তা চিরতরে বন্ধ করা। ভবিষ্যতে আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টিভির মতো কোনো গণমাধ্যম যাতে বন্ধ না হয় তা নিশ্চিত করা।
সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন ও পেশাগত সুরক্ষার জন্য টেকসই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে একটি গণমাধ্যম কমিশন ও নীতিমালা প্রণয়ন। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য অভিন্ন ওয়েজবোর্ড প্রণয়ন করতে হবে। অবিলম্বে নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন। শ্রম আইন অনুযায়ী সংবাদকর্মীদের মাঝে লভ্যাংশ বণ্টন করার ব্যবস্থা।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাসহ সব হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের বিচার নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের গুম, নির্যাতন ও হয়রানির সাথে জড়িতদের বিচার নিশ্চিতে কমিটি গঠন। এবং স্বতন্ত্র মিডিয়া কমিশন গঠন করা। যা সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই মিডিয়ার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করবে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের চাকরির সুরক্ষা, বেতনসহ নানা সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা