২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভারতকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে হাসিনাকে

দি হিন্দুর সাথে সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস
ভারতকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে হাসিনাকে -


ভারতে পালিয়ে গিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, বিচারের মুখোমুখি করতে হাসিনাকে অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিতে হবে ভারতকে। হাসিনাকে ফিরিয়ে না দিলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে খুব একটা সুখের সম্পর্ক তৈরি হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। ঢাকায় নিজ বাসভবনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি হিন্দুর সাথে একান্ত ওই সাক্ষাৎকারে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস ভারতের সাথে সম্পর্ক এবং সংস্কারের পরিকল্পনার বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। দ্য হিন্দুর পক্ষে সাক্ষাৎকারটি নেন সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার। ড. ইউনূস তার সরকার গঠনের ১০০ দিনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন এবং উগ্রপন্থার উত্থান ও হিন্দু এবং অন্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বলে অভিহিত করেছেন।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা এবং অর্থনীতি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করে যাচ্ছি, তবে আমি বলব না যে আমরা এখনই ‘এ’ গ্রেড পেয়েছি। অন্য ইস্যুতে বলব, অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন ‘এ-প্লাস’ কারণ আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে ছিন্নভিন্ন অর্থনীতি পেয়েছিলাম। সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছিল। দেশে উন্মত্ত ব্যাংকিং সিস্টেম ছিল। খারাপ ঋণ ছিল, ৬০ শতাংশ অপরিশোধিত ঋণ। বহু ব্যাংক একে অপরের সাথে কীভাবে লেনদেন করতে হয়, গ্রাহকদের সাথে কীভাবে আচরণ করতে হয়- ইত্যাদি যেন জানেই না। আমাদের প্রায় অকার্যকর একটি আর্থিক ব্যবস্থা ছিল। তাই সেখান থেকে, আমরা ব্যাংকিং সিস্টেমকে আবার কার্যকর করে এই পর্যায়ে এসেছি।

তিনি বলেন, যদিও অবস্থা এখনো নিখুঁত নয়, তবে অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দায়িত্ব নেয়ার সাথে সাথে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে, কিন্তু এখন গত ১০০ দিন ধরে মাসে মাসে এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আমাদের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছি এবং এটি আমাদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নত করেছে। আমরা মুদ্রাস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সর্বোপরি, আমরা ব্যাপক বৈশ্বিক সমর্থন পেয়েছি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সাথে ব্যবসা করছে, আমাদের আরো সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছে যাতে বিনিয়োগ আসে। আমি জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধানসহ অনেক সরকার প্রধানের সাথে দেখা করেছি। আরো অনেকের সাথে কথা হয়েছে যারা আমাদের আর্থিক সহায়তা এবং রাজনৈতিক সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমাদের এমন কর্মকর্তারা আছেন যারা বিনিয়োগকারীদের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে প্রস্তুত যাতে তারা বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকা না পড়েন, ওয়ান-স্টপ পরিষেবা আছে যেখানে বিনিয়োগকারীরা তাদের কাজগুলো করতে পারেন। তাই আমি বলব বাংলাদেশ খুবই ইতিবাচক পথে এগোচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া এবং তিনি বাংলাদেশের সমালোচনা করে অত্যন্ত কড়া বিবৃতি দিয়েছেন উল্লেখ করে নতুন মার্কিন প্রশাসনের সাথে আন্তর্জাতিক সমর্থন অব্যাহত থাকবে কি না দি হিন্দুর এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমার মনে হয় না ট্রাম্প বাংলাদেশ নিয়ে কোনো বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে এবং সংখ্যালঘুদের বিষয়ে তিনি (ট্রাম্প) সম্ভবত ভালোভাবে অবহিত নন। এটা একটা প্রোপাগান্ডা যা সারা বিশ্বে চলছে। কিন্তু যখন তিনি বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের বাস্তবতায় আসবেন, তখন ট্রাম্প অবাক হবেন যে, তাকে যে ধারণা দেয়া হয়েছে তার থেকে বাংলাদেশ কতটা আলাদা। আমি মনে করি না, যুক্তরাষ্ট্রে একজন নতুন প্রেসিডেন্ট এসেছেন মানে সব কিছু বদলে যাবে। প্রেসিডেন্টের পরিবর্তনের কারণে পররাষ্ট্রনীতি এবং দেশ অনুযায়ী সম্পর্ক সাধারণত পরিবর্তিত হয় না। এ ছাড়াও ট্রাম্প ২.০-তে যদি কোনো পরিবর্তন হয়, তাহলে আমাদের মনে রাখবেন এখনকার বাংলাদেশ ২.০-তে আছে, যাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলি। সুতরাং আমরা অপেক্ষা করব এবং যদি মার্কিন প্রতিনিধিরা এসে আমাদের দেখে; পরীক্ষা করে যদি দেখতে পায় যে, আমাদের অর্থনীতি ভালো চলছে, তারা খুব আগ্রহী হবে। তারা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সরকারি ক্রেতা, তাই আমাদের দিক থেকে এটি খুব ভালো সম্পর্ক যা আমরা বছরের পর বছর ধরে গড়ে তুলেছি। আমাদের আশা এটা আরো জোরদার হবে।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত সরকারের বেশ কয়েকটি বিবৃতির বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে আমার প্রথম ফোন কলে (১৬ আগস্ট) তিনি ঠিক এটাই বলেছিলেন যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে ইত্যাদি। আমি তাকে খুব স্পষ্টভাবে বলেছি, এটা প্রোপাগান্ডা। অনেক সাংবাদিক এখানে আসার পর, কিছু উত্তেজনা সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন এসেছে, তবে মিডিয়াতে যেভাবে বলা হয়েছে পরিস্থিতি তেমন নয়। এই প্রচার-প্রোপাগান্ডা বাস্তবতার সাথে যায় না।

সংখ্যালঘুদের অধিকার কমিশন নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মানবাধিকার কমিশন আছে এবং কেন সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদাভাবে করতে হবে? আমি (সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে) বলেছি, আপনারা দেশের নাগরিক। আপনাদের সব অধিকার সংবিধান দ্বারাই নিশ্চিত করা আছে। আমরা সবাই চাই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক এবং সংবিধান আমাদের যেসব অধিকার দিয়েছে সেগুলোও প্রতিষ্ঠিত হোক। আমাদের সংবিধান কমিশনে কে আছে এবং কে এর প্রধান (যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিক্ষাবিদ আলী রিয়াজ) আছেন সেটি আগে দেখুন এবং তারপর আপনি যা বলছেন তার সাথে সমন্বয় করার চেষ্টা করুন...অন্যথায় এটি পুরোটাই প্রোপাগান্ডা। এ ধরনের প্রোপাগান্ডার নেপথ্যে কারা আছে জানতে চাইলে ইউনূস বলেন, আমি জানি না। তবে এই অপপ্রচার বাস্তবতার সাথে খাপ খায় না। সব মামলায় একের পর এক খুব সিরিয়াস গ্রুপের একদল মানুষ ঢুকে পড়ছেন।

ভারতের মতো যুক্তরাষ্ট্র যদি মনে করে অপপ্রচারের বিষয়টি জনগণকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে? জবাবে ইউনূস বলেন, হতে পারে বিশ্বকে বোঝানোর মতো শক্তি বা আর্থিক অবস্থা আমাদের নেই।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভীতসন্ত্রস্ত বোধ করছেন। সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বদলে দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে... এ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা (ভাবমূর্তি) কি আমাকে মানাবে? আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা প্রতিজন ব্যক্তি এক একজন মানবাধিকারকর্মী। তারা নিজেরা ভুগেছেন অথবা তাদের কেউ পরিবেশবাদী কর্মী, লিঙ্গগত কর্মী এবং অন্য ধরনের অধিকারকর্মী। সুতরাং তারা সবাই অধিকারবাদী। তাদের সামনে যদি এ কথাগুলো আপনি বলেন, তাহলে তারা আপনার প্রতি চিৎকার করবেন, উপদেষ্টা পরিষদের প্রতিজন সদস্যের জীবন সম্পর্কে জানুন।

উপদেষ্টা পরিষদের কারো ইসলামপন্থী এজেন্ডা আছে কি না জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, তাদের প্রত্যেকের জীবনের গল্পগুলোর দিকে তাকান। তারা উৎসর্গকৃত মানুষ, তারা নারী অধিকারকর্মী।
রাজনৈতিক সহিংসতা, সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল ও অতীতের সরকারের মতো বর্তমান সরকারও একই আচরণ করছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জনগণকে বিচার এবং তুলনা করতে দিন এই সরকার কী (কাজ) করেছে এবং অন্য সরকার কী করেছে। আমি বিতর্কে যাচ্ছি না। আমরা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছি। এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। অ্যাক্রেডিটেশন বিষয়ক যে আইন সেটা আমরা তৈরি করিনি। আমরা শুধু সেটা প্রয়োগ করেছি। এটা নিয়ে আপনি বিতর্ক করতে পারেন যে, এটা সঠিক প্রয়োগ হয়েছে কি না। এই আইন পরিবর্তন করতে চাই আমি। ওটা এমন আইন, যা অন্য রকম শাসকগোষ্ঠীর অধীনে ছিল।
রাজনৈতিক প্রতিশোধ প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, আমি বলব আইনের শাসনের জয় হোক। এটাই...।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দেখা না হওয়া নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, হ্যাঁ, এটি এখনো ঘটেনি। আমি যখন জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে গিয়েছি, তখন মোদি সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন। আমি বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু মোদি সেখানে ছিলেন না, বিমসটেক (থাইল্যান্ডে) বাতিল করা হয়েছে এবং আমরা কেউই কমনওয়েলথ বৈঠকে যাইনি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা দেখা করব না। আমরা শুধু প্রতিবেশী নই, ইতিহাস আমাদের একত্র করেছে; ভূগোল আমাদের একত্রিত করেছে; ভাষাগত সম্পর্ক আমাদের একত্রিত করেছে এবং সাংস্কৃতিক যোগসূত্র আমাদের একত্রিত করে। প্রথম দিন থেকেই আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব দিয়েছি। অকার্যকর গোষ্ঠী হতে হবে কেন? এমনকি আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম যে, সার্ক নেতারা নিউ ইয়র্কে মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও যেন বৈঠক করতে পারেন।

ভারত ও বাংলাদেশ এখন বিমসটেক, বিবিআইএন-এ সহযোগিতা করছে। তাহলে সার্ক কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সার্ক নয় কেন? আমরা যত বেশি বন্ধু এবং সম্পর্ক তৈরি করতে পারি, ততো ভালো। সার্ককে চলতেই হবে... এমন হওয়া উচিত নয় যে, শুধু দুই দেশের (ভারত ও পাকিস্তান) মধ্যে সম্পর্কের কারণে পুরো গোষ্ঠীটি অদৃশ্য হয়ে যায়। আমরা একটি রেজুলেশন পাস করতে পারি, ভারত-পাকিস্তানের যেকোনো ইস্যুকে এজেন্ডা থেকে স্থগিত করতে পারি, কিন্তু সার্ককে শেষ করতে পারি না। সন্ত্রাসবাদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সার্কের কর্মকাণ্ড স্থগিত করতে ২০১৬ সালে ভারতকে সমর্থন করা কি বাংলাদেশের জন্য ভুল ছিল? এমন প্রশ্নে জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা যদি এমন শর্ত সামনে রাখি, তাহলে কোনো সম্পর্কই চলবে না। দুই সদস্য দেশের সম্পর্কের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব দেশকে কেন ভুগতে হবে?
ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ৫ আগস্টের ঘটনা কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, কেন এটা (ভারতের জন্য ধাক্কা) হবে? বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে ভারতেরও ওই দিনটি উদযাপন করা উচিত যে, বাংলাদেশ এমন একটি শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে যেখানে মানুষ কষ্ট পেয়েছে, অনেককে হত্যা করা হয়েছে, অনেককে গুম করা হয়েছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। ভারতের উচিত আমাদের তরুণদের সাথে যোগদান করা এবং একসাথে উদযাপন করা, যেমনটা অন্যান্য অনেক দেশ করে থাকে।

দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি উভয় দেশের সম্পর্কের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করছে কি না? এর জবাবে ড. ইউনূস বলেন, হাসিনার ভারতে বসবাস করা, অন্তত আপাতত কোনো সমস্যা নয়। তবে তিনি বাংলাদেশের বিষয়ে কথা বললে সমস্যা। তিনি বাংলাদেশীদের সাথে কথা বলছেন এবং এটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন, এটাই সমস্যা। তিনি আরো বলেন, হাসিনা এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ঢাকা ও অন্যান্য শহরের রাস্তায় বের হয়ে তার কর্মীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে বলছেন এবং তার সেই অডিও রেকর্ডও প্রচার করা হচ্ছে, তাদের তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে (ঢাল হিসেবে) ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছেন, যাতে পুলিশ তাদের বাধা দিলে তারা বলতে পারে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু করছে।

প্রত্যার্পণ চুক্তি অনুযায়ী যদি ভারত হাসিনাকে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান গ্রহণ না করে তখন কী হবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আপনি বলতে চাচ্ছেন ভারত চুক্তি লঙ্ঘন করবে? হ্যাঁ, এ ধরনের ধারা আছে, কিন্তু হাসিনাকে রাখতে যদি ভারত সরকার সেগুলোকে ব্যবহার করে তাহলে আমাদের (বাংলাদেশ ও ভারত) মধ্যে খুব একটা সুখের সম্পর্ক তৈরি হবে না। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার খুবই স্বল্পস্থায়ী। তাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সব কিছু আমরা মীমাংসা করতে পারব না। কিন্তু এটা (হাসিনাকে ফেরত না দেয়ার বিষয়টি) আমাদের পরে আসা কোনো সরকারও উপেক্ষা করবে না।
অন্যান্য ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক মসৃণভাবে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের স্বপ্ন হলো (চলাচল ও বাণিজ্যের স্বাধীনতাসহ) ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি সম্পর্ক কল্পনা করা। সেই দিকেই আমরা যেতে চাই। আপনি যা (জ্বালানি সংযোগ, বাণিজ্য সংযোগ) উল্লেখ করেছেন তা ভালো লক্ষণ এবং আমরা সেই দিকেই এগিয়ে যেতে চাই, তবে আমরা যা অর্জন করতে চাই তা থেকে এখনো অনেক দূরে আছি। আমরা একসাথে থাকার জন্য জন্মেছি; আমরা যমজ।

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, যখন আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তখন আমাদের কাছে স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছিল যে আমরা শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবো না, যে সরকার গঠন হবে, নির্বাচন আয়োজন করবে এবং নতুন সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে। আমাদের বলা হয়েছিল, আমাদের প্রধান দায়িত্ব বাংলাদেশের সংস্কার। আমরা বেশি দিন থাকতে চাইনি, তাই আমরা এই ফর্মুলেশন নিয়ে এসেছি। নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রথম দিন থেকে শুরু হয়েছে, তবে পৃথক প্রক্রিয়া হিসেবে সংস্কারের অন্যান্য প্রক্রিয়াও সমান্তরালভাবে চলবে। এখন, প্রথমত, আমরা নির্বাচন কমিশন তৈরি করছি, যা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং আমরা আগামী সপ্তাহের মধ্যে এটি ঘোষণা করব। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্বাধীন সংস্থা গঠন করবেন। কিন্তু অন্য বেশ কিছু সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত তারা নির্বাচন করতে পারবেন না। আমাদের দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ থাকবে কি না, বাংলাদেশে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব থাকবে কি না, মেয়াদের সীমা কী হবে, ইত্যাদি বিষয়ে সাংবিধানিক সংস্কার কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি বলব নির্বাচনের ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেছে, কিন্তু পথ চলতে চলতে কিছুটা থামতে হবে, কারণ এটি কোন দিকে যাবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সেজন্য আমাদের সংস্কার কমিশনের কাছে যেতে হবে। এই কাজে কয়েক বছর লাগতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমার কোনো ধারণা নেই। জনগণ একটি নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়, তাই আমরা যত দ্রুত সম্ভব ঐকমত্য তৈরি করতে কাজ করব।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি এবং বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) বলেছে, সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দিতে হবে। তারা ইতোমধ্যেই তাদের রায় দিয়েছে এবং আমরা দেশের একটি বড় দলের মতামতকে অস্বীকার করতে পারি না।
তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নিতে আপনার কোনো আপত্তি নেই? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমি রাজনীতিবিদ নই যে, একটি দল বা অন্য দল বেছে নেব। আমি রাজনীতিবিদদের ইচ্ছা পূরণ করছি। আমি নিজেকে কখনো রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখি না।

হাসিনাকে ফেরত আনার অনুরোধ জানিয়ে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ইউনূস বলেন, তাকে (হাসিনা) ফেরত আনতে সবরকম আইনি ব্যবস্থা ব্যবহার করব আমরা।
কয়েক বছর আগে (২০০৭ সালে) একটি রাজনৈতিক দল চালুর চেষ্টা প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ওটা ছিল মাত্র ১০ সপ্তাহের। তারপর আমি সংবাদ সম্মেলন করেছি এবং সব বন্ধ করে দিয়েছি। অনেক মানুষ আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, জনগণের জন্য একটি পরিবর্তন প্রয়োজন। এমনকি আমরা পার্টির নামও দিয়েছিলাম এবং ওই পর্যন্তই। তারপর থেকে বাকি জীবনভর একটি রাজনৈতিক দল করার জন্য আমাকে অভিযোগ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভারত-চীন কূটনীতিতে নতুন সমীকরণ! বেক্সিমকোর শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধে অর্থঋণ প্রদানের সিদ্ধান্ত জরুরি অবস্থা জারি করে আমেরিকা থেকে শরণার্থী তাড়াবেন ট্রাম্প! শেষ ম্যাচে হেরে টেনিসকে বিদায় রাফার ২৯ বছরের দাম্পত্য ভেঙে বিচ্ছেদের পথে এ আর রহমান-সায়রা বানু হিজবুল্লাহ-ইসরাইল সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি পর্যালোচনা করছে লেবানন আদানির বিদ্যুৎ নিয়ে অনুসন্ধান কমিটির নির্দেশ হাইকোর্টের ভারতকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে হাসিনাকে নির্বাচন বিলম্বিত করার শঙ্কা বাড়ছে বিএনপিতে নর্থ মেসিডোনিয়ায় ২০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁড়িয়ে চললেও কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না : অর্থ উপদেষ্টা

সকল