অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দেয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৩
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আমরা অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করব। গতকাল সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা এ কথা বলেন। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন : আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদক আইন উপদেষ্টার কাছে জানতে চান অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে সর্বত্রই একটি প্রশ্ন শোনা যায়, সেটি হলো এই সরকার কত দিন থাকবে, তাদের মেয়াদ কত দিন হবে, নির্বাচন কবে হবে?
জবাবে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন ‘এটি আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তবে আপনাকে একটি বিষয় বলি, আমরা মোস্ট এসেনশিয়াল কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেবো। আমরা জাস্ট এই জিনিসটা চাই না যে আগের মতো কোনো ভুয়া নির্বাচন হোক। আর এটা চাই না নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কেউ আবার ভুয়া নির্বাচন করার সুযোগ পাক। এটা ছাড়া আর কোনো স্বার্থ নাই। তিনি আরও বলেন, আপনারা একটি বিষয় বিশ্বাস করেন, অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন, উনাদের অধিকাংশই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের পেশায় ফিরে যাওয়ার জন্য আগ্রহী।
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চার বছর এ ধরনের কোনো কথাই বলা হয় নাই।
শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আইন উপদেষ্ট বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, এ প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ট্রইব্যুনালের মতামতের ভিত্তিতে আমাদের (এক্সট্রাডিশনট্রিটি) ভারতের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি আছে। ট্রাইব্যুনালের মতামতের ভিত্তিতে আমরা এই চুক্তি অনুযায়ী তাকে ফেরত চাইব। মন্ত্রণালয় থেকে আমরা এ বিষয়ে স্বাধীন ট্রাইব্যুনালের কাজে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করব না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায়ের যে কোনো পর্যায়ে তাকে চাওয়া যাবে।
শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের ফেলে নিজে পালিয়েছেন : শেখ হাসিনার ফোন আলাপ ফাঁস হওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি যদি সত্যি উনার কনভারসেশন হয়ে থাকে, তাহলে বলবো, এগুলো হলো দেশকে অস্থিতিশীল করা, ষড়যন্ত্র করা, মানুষকে প্ররোচিত করা। মানুষকে উত্তেজিত করা এবং বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে করা হয়। আমি আগেও বলেছি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে মনে হয়, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের জিজ্ঞাসা করা উচিত আপনি আপনি অপনার বৃহত্তর পরিবারকে নিয়ে কাউকে না জানিয়ে যেভাবে পালিয়ে গেলেন। আর আমাদের প্রতিনিয়ত বিক্ষোভ করার জন্য, উসকানিমূলক কাজ করার জন্য। সন্ত্রাসমূলক কাজ করার জন্য বলছেন। এটা ঠিক নয়। এ ব্যাপারে আপনার নিজের ব্যাখ্যা কি? উনি উনার ভাগনে টাগনেদের এনে এই সরকার পতনের দুই তিন দিন আগে তাদেরকে আবার নিরাপদে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কেন? তিনি আরো বলেন, উনার যারা নেতাকর্মী আছে তাদের উচিত, উনার পারসন্যাল জবাবদিহিতা চাওয়া উচিত। আজকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যদি কোনো নিরীহ নেতাকর্মী থাকেন, প্রত্যেকে বিপদে পড়ছেন। শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শাসন আমল এবং এই রকম নিপীড়ন নির্যাতন বাংলাদেশের মানুষকে করার জন্য তাদের উচিত শেখ হাসিনার সাথে টেলিফোন কনভারসেশন হলে একজন যাতে প্রশ্নটা করেন। যে আপনি আমাদের কাউকে না জানিয়ে পালিয়ে গেলেন কেন? আমাদের বিপদের মধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা নেতা কর্মীদের ফেলে রেখে নিজে পালিয়েছেন। নিজে পালানোর তিন দিন আগে তার স্বজনদের বিদেশে পাঠিয়েছেন। নেতাকর্মীদের তাকে প্রশ্ন করা উচিত, তাদের ফেলে রেখে কেন পালিয়েছেন তিনি?’
রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করতে পারবেন ট্রাইব্যুনাল: অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থাকলে ও আদালত মনে করলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই সুপারিশ করা যাবে। তিনি বলেন, এমন বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়াটি অনুমোদনের জন্য আজ বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’- এ কিছু মারাত্মক বিচ্যুতির কথা দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠন বলেছিল। সুশীল সমাজও বিভিন্ন সময় বলেছিল। সরকার যখন এটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নিলো তখন সরকার চেয়েছে বিচারটি যেন দেশীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হয়। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে যেন সুবিচার সুনিশ্চিত করা হয়। এ জন্য ব্যাপক পরামর্শ করা হয়েছে। একটি অসাধারণ সংশোধনী করার জন্য চেষ্টা হয়েছে; যেটি এর বিচারের গুরুত্ব, যৌক্তিকতা এবং গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে দেবে।
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সেই সংশোধনীর খসড়া তোলা হবে। উপদেষ্টা পরিষদ এটি গ্রহণ করলে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এটি আইনে পরিণত হবে। তারপর প্রক্রিয়াগত কারণে যত দিন লাগে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়ায় রাজনৈতিক দলের বিচারের ধারা যুক্ত হচ্ছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি দিন অপেক্ষা করেন, দেখবেন।’ তখন এ বিষয়ে সাংবাদিকরা আবার প্রশ্ন করলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সংশোধনী তো উপদেষ্টা পরিষদকে গ্রহণ করতে হবে।’
তখন সাংবাদিকরা আবারও জানতে চান, খসড়ায় কী আছে সেটি যদি বলেন। তখন আসিফ নজরুল বলেন, প্রস্তাবে যেটি আছে, সেখানে আদালতকে সেভাবে সরাসরি ক্ষমতা দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে, আদালত যদি মনে করেন তাহলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তারা সুপারিশ করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট যেসব কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক দলের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার অনুমোদন রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে, নির্বাচন কমিশন আছে, এগুলোর কথা খসড়ায় উল্লেখ করা নেই। কিন্তু যদি মনে করে তাহলে করতে পারে। এটা এমনটা যে আদালত শাস্তি দেবেই। আদালত যদি মনে করে শাস্তি দেয়ার সুপারিশ করবে শুধু। এটা খসড়ায় রাখা হয়েছে। তবে এটি উপদেষ্টা পরিষদের ওপর নির্ভর করে, পরিষদ এটি রাখবে কি না বা কি ফর্মে রাখবে।’
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, যে কেউ ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন। কিন্তু এভাবে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া, সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলা, মানুষকে জিম্মি করা, অসহনীয় ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করা; আন্দোলনকারীরা এইসব জিনিস যদি অব্যাহত রাখেন, আমি মনে করি সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। আপনি আন্দোলন করবেন, কিন্তু সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে পারেন না। কালকে ট্রেনে ইট মেরে নারী-শিশুকে আহত করা হয়েছে। এটা কী ধরনের আন্দোলন?
গণ-আন্দোলন দমনে দায়েরকৃত প্রায় সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে: গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলন দমনে দায়েরকৃত প্রায় সব ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি জানান, সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিলক্রমে কম্পিউটার সম্পর্কিত অপরাধগুলো প্রতিরোধের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সাথে সমন্বয় করে নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ,২০২৪’ প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইন রহিত হলে উক্ত আইনের অধীনে দায়েরকৃত সব স্পিচ-অফেন্সের মামলা প্রত্যাহার করা হবে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে এই আইন প্রত্যাহারে আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করেছি। তবে হ্যাকিং বা কম্পিউটার অপরাধ সংক্রান্ত মামলাগুলো চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি। আইন উপদেষ্টা জানান, এই ক’দিনে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে ৫ জন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি এবং অধঃস্তন আদালতে ১০৯ জন বিচারক নিয়োগে সাচিবিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ৬১টি জেলায় ৪ হাজার ৩০০ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর ফলে দ্রুততম সময়ে সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন সহায়তা করেছে আইন মন্ত্রণালয়। চিফ প্রসিকিউটরসহ ১১ জন প্রসিকিউটর নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
তা ছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে ২৩৯ জন আইন কর্মকর্তা তথা সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা