এক মাসের মধ্যে হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্তকাজ শেষ করার নির্দেশ
আনিসুল, সালমানসহ ১৩ জনকে গণহত্যার মামলায় ট্রাইব্যুনালে হাজির- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪০
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল সোমবার ট্রাইব্যুনালে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ ১৩ জনকে হাজির করার পর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদার ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার একমাত্র আসামি শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের আদেশ প্রতিপালনের বিষয়টি জানতে চান। আদালত বলেন, শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের বিষয়ে কী হলো। জবাবে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, তিনি ভারতে আছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত চাওয়া হবে।
পরে এ বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রিপোর্ট এসেছে যে তিনি দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন। ভারতে অবস্থান করছেন। সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে ফরমাল রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি ইন্টারপোলের কাছে। তাকে পেলে যেন গ্রেফতার করা হয়। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বলেছে যে এর বাইরেও পদক্ষেপ আছে। যেহেতু তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের অভিযোগ আছে এবং তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি আছে। ভারতের সাথে সম্পাদিত অপরাধী সমর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত চাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার চিন্তা করছে বলে রোববার প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেছেন। সুতরাং সেই প্রক্রিয়াতেও বাংলাদেশ যাচ্ছে। এটা আমরা আদালতে জানিয়েছি। এরপর ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলায় এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে চিফ প্রসিকিউটর এ মামলার তদন্ত শেষ করার জন্য আরো দুই মাস সময় চান। আদালত একমাস সময় মঞ্জুর করে আগামী ১৭ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। একই সাথে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের আদেশ প্রতিপালন করার নির্দেশ দেন।
এক ব্যক্তিকে ক্ষমতায় রাখতে গোটা জাতিকে হত্যায় তাদের দ্বিধা ছিল না : শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ, জুলাই-আগস্ট গণহত্যা অভিযুক্তদের সক্রিয় অংশগ্রহণে সংগঠিত হয়। তিনি জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও নির্যাতনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, একজন ব্যক্তিকে ক্ষমতায় রাখতে গোটা জাতিকে হত্যা করতে তাদের দ্বিধা ছিল না। গত সাড়ে ১৫ বছরের সব অপরাধের কেন্দ্রে ছিলেন শেখ হাসিনা, আর মন্ত্রী-এমপিরা ছিলেন তার সহযোগী। শুধু জুলাই-আগস্ট নয়, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে দেশে অসংখ্য অপরাধ করেছেন। তিনি বলেন, ক্ষমতায় এসে পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ। ব্ল্যাকআউট করে শাপলা চত্বরে হেফাজতের ওপর গণহত্যাসহ আওয়ামী লীগের শাসনামলে সব মানবতাবিরোধী অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন শেখ হাসিনা। আর এই ১৩ আসামি ছিলেন তার সহযোগী। তাজুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছরের শাসনামলে এমন কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই যেটা শেখ হাসিনা করেননি। আর উপস্থিত এই আসামিরা এসব অপরাধ সংগঠনে সহযোগিতা করে গেছেন। সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা, অঙ্গহানিসহ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
জাতিকে বিভক্ত রাখতে রাজাকার শব্দ ব্যবহার : চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনার আমলে দুই লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাতিকে বিভক্ত রাখতে রাজাকার শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বিরোধীদের রাজাকার হিসেবে অখ্যায়িত করা হয়। এমনকি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রদেরও রাজাকারের বাচ্চা বলা হয়।
আ’লীগ সরকারের সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জন গণহত্যার মামলায় গ্রেফতার, কারাগারে : ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এই ১৩ জনের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ৯ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি ও সাবেক এক সচিব।
গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো: শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) ফারুক খান, ডা: দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, জুনাইদ আহমেদ পলক, শাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সালমান এফ রহমান, সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
এই আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে জানিয়ে তাদের আটক রাখা এবং এ মামলার তদন্ত শেষ করতে দুই মাস সময় চান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। আদালত এক মাস সময় মঞ্জুর করে আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া ধার্য তারিখে গ্রেফতার আসামি ও ওয়ারেন্টভুক্ত অন্য আসামিদের গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেন।
আসামিপক্ষে আইনজীবীরা ছিলেন, আবেদন না থাকায় শুনানি করতে পারেননি : এদিন পাঁচ আসামির পক্ষে শুনানি করতে এসে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হচ্ছেন এমন খবরে শুনানি থেকে বিরত থাকেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। এ সময় তার জুনিয়র আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু শুনানি করতে এলে তার কাছে যথাযথ আবেদন না থাকায় আদালতে তিনি শুনানি করতে পারেননি। তাই ১৩ আসামির পক্ষে কোনো শুনানি হয়নি। এ দিন বেলা সাড়ে ১১টায় ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের শুনানি শেষ হওয়ার পর আসামি পক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু শুনানি করতে যান তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও ফারুক খানের। এ সময় শুনানি করার আগে বিচারকদের কাছে শুনানি করতে যে আবেদন দেয়া হয়, সেটা না থাকায় চিফ প্রসিকিউটর আদালতের নজরে আবেদন না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তখন আবেদন না আনার বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী ক্ষমা চান।
এ দিকে আইনজীবীরা আসামিদের সাথে কথা বলতে আদালতের অনুমতি চাইলে আদালত আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করার অনুমতি দেন।
এর আগে কড়া নিরাপত্তায় সকাল ১০টার দিকে প্রিজন ভ্যানে করে আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে ১৩ আসামিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার দেখানো হয়। ট্রাইব্যুনালের আদেশের পর বেলা দেড়টার দিকে আসামিদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা