উচ্চ রাজনৈতিক ঝুঁকি ও নিম্ন প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় ঋণ মান কমিয়েছে মুডিস
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬
উচ্চ রাজনৈতিক ঝুঁকি ও নিম্ন প্রবৃদ্ধিকে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের ঋণমান বি-১ থেকে বি-২তে নামিয়েছে মুডিস রেটিংস। একই সাথে দেশের অর্থনীতির পূর্বাভাসে পরিবর্তন এনে ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘ঋণাত্মক’ করেছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ঋণমান যাচাইকারী কোম্পানি। সংস্থাটি জানিয়েছে, চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও দুর্বল হয়ে পড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের সরকারকে তার অর্থায়নের ঘাটতি পূরণে স্বল্পমেয়াদি অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর আরো বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে, এতে বাড়ছে তারল্য ঝুঁকি।
গতকাল সোমবার সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত রেটিংস প্রতিবেদনে মুডিস আরো জানিয়েছে, বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদি ইস্যুয়ার রেটিংস ‘নট প্রাইম’ বা শ্রেষ্ঠ গুণসম্পন্ন নয় হিসেবে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, বিশ্বের প্রধান তিনটি ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের একটি মুডিস। গত ৩১ মে প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষবার বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছিল। সেবার তারা ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে বিএ৩ থেকে বি১-এ নামায়। এর কারণ হিসেবে মুডিস জানিয়েছিল, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উঁচুমাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকি রয়েছে।
মুডিস জানিয়েছে, দেশে আসা রেমিট্যান্স প্রবাহ ও উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ ছাড় সত্ত্বেও গত কয়েক বছরে রিজার্ভের ক্ষয় হওয়ায় বাহ্যিক ঝুঁকিগুলো মোকাবেলার ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে বাংলাদেশের। সামাজিক ঝুঁকি বৃদ্ধি, নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার বিষয়টি আবারো সামনে আসায় রাজনৈতিক ঝুঁকিও অনেকটা বেড়েছে।
মুডিস সতর্ক করে বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়ে আমাদের বর্তমান প্রত্যাশার বাইরে যেসব ঝুঁকি রয়েছে তার ফলে বাংলাদেশের ইতোমধ্যেই চাপের মধ্যে থাকা আর্থিক সক্ষমতাকে আরো দুর্বল করতে পারে এবং বাহ্যিক দুর্বলতাগুলোকে তীব্র করবে।
দুর্বল স্থানীয় ভোগচাহিদা ও সরবরাহ চক্র ব্যাহত হওয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে এসব ঝুঁকি বা বাধা তৈরি হয়েছে। একই সাথে পোশাক শিল্পে চলমান শ্রম অস্থিরতাও রফতানির পূর্বাভাস নিয়ে শঙ্কার জন্ম দিয়েছে।
মুডিস বলছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বৃহত্তর সংস্কারের এজেন্ডার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, তবে এগুলো তারা বাস্তবায়ন করতে পারবেন কি না, তা অনিশ্চিত। তা ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও উচ্চ বেকারত্ব দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার মতো দ্রুত ফলাফল যদি জনগণকে না দিতে পারে, তাহলে এসব সংস্কার চালিয়ে নেয়ার মতো রাজনৈতিক পুঁজিও থাকবে না সরকারের।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক করার কারণ হিসেবে মুডিস জানিয়েছে, তাদের প্রত্যাশার চেয়েও এবার কম প্রবৃদ্ধি হবে। ফলে তা দেশটির দুর্বল রাজস্ব পরিস্থিতি ও বহিঃস্থ খাতের চাপ আরো বাড়াতে পারে। এই ঝুঁকি তৈরি হয়েছে দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও আইনশৃঙ্খলার কারণে পণ্য সরবরাহের সমস্যার কারণে। এর ফলে রফতানি ও তৈরী পোশাক খাতের সম্ভাবনা মেঘাচ্ছন্ন হয়েছে।
মুডিস বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিস্তৃত সংস্থার কর্মসূচি পরিচালনা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তা বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা রয়েছে। যদি অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরা ও উচ্চ বেকারত্ব কমানোসহ দ্রুত ফলাফল না দিতে পারে, তাহলে সংস্কারের পেছনে যে রাজনৈতিক পুঁজি রয়েছে তা দ্রুতই চলে যেতে পারে।
মুডিস আরো জানিয়েছে, ঋণমান কমানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের স্থানীয় মুদ্রা (এলসি) ও বিদেশী মুদ্রার (এফসি) ঊর্ধ্বসীমা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এলসির জন্য ঊর্ধ্বসীমা বিএ২ থেকে বিএ৩ এবং এফসির ঊর্ধ্বসীমা বি১ থেকে বি২তে নামানো হয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা সাধারণত বিশ্বের প্রধান তিনটি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি বা ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন দেখে কোনো দেশে বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। অর্থাৎ তাদের রেটিং প্রতিবেদন বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। মুডিসের মতো প্রভাবশালী বাকি দুটো প্রতিষ্ঠান হলো ফিচ রেটিংস এবং এসঅ্যান্ডপি।
আর্থিক খাতের বিশ্লেষকেরা মনে করেন, মুডিসের মতো প্রতিষ্ঠান ঋণমান কমালে তা ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ ও বিদেশী ঋণের সুদের হার বাড়তে দিতে পারে। এ ছাড়া বিদেশী বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হতে পারে, কারণ খরচ বেশি হলে বিদেশীরা এ দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন না। সাধারণত এ ধরনের ঋণমানের প্রভাব বাণিজ্যিক ঋণের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা