১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ঢাকায় ক্যাথেরিন ওয়েস্ট

গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সমর্থন দেবে ব্রিটেন

-


জবাবদিহিতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে ব্রিটেন।
ঢাকায় এক দিনের সফরে এসে গতকাল এক বিবৃতিতে ইন্দো-প্যাসিফিকবিষয়ক ব্রিটিশ মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট এ কথা জানান। সফরের সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী তৌহিদ হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ এবং রাজনৈতিক, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ব্রিটিশ কোনো মন্ত্রী এই প্রথমবার ঢাকা সফর করলেন।
ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে জানানো হয়েছে, ক্যাথরিন ওয়েস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার, নিরাপত্তা, বাণিজ্য সহযোগিতা এবং অভিবাসনের জন্য ব্রিটেনের চলমান সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি ছাত্রনেতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ব্রিটেনের সমর্থন ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদারের উপায় নিয়ে আলাপ করেন। আর ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।
বিবৃতিতে ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের জন্য আরো সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাজকে সমর্থন করে ব্রিটেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় বাংলাদেশী সম্প্রদায়গুলোকে সমর্থন করার জন্য নতুন তহবিল ঘোষণা করতে পেরে আমি গর্বিত। এ তহবিল তাদের প্রয়োজনীয় পরিষেবা এবং সহায়তা দিতে পারবে বলে আমি প্রত্যাশা করছি।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিনের বন্ধু হিসেবে ব্রিটেন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারকে সমর্থন দেবে, যা বাংলাদেশকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সহায়তা করবে।
ক্যাথরিন ওয়েস্ট রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ব্রিটেনের এক কোটি পাউন্ড নতুন সহায়তা ঘোষণা করেন। ২০১৭ সাল থেকে ব্রিটেন রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা ও সেবা দেয়ার জন্য এ পর্যন্ত মোট ৪০ কোটি পাউন্ডের তহবিল দিয়েছে। এ ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা দিতে ব্রিটেনের একটি বিশেষায়িত মেডিক্যাল টিম বাংলাদেশে কাজ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এই টিমকে পাঠিয়েছে ব্রিটেন। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত টিমের সদস্যদের বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সঙ্ঘাতে আহত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে।
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে প্রত্যাশার চেয়ে কম সহযোগিতা পেয়েছি : রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে গত আট বছরে বাংলাদেশের বড় প্রতিবেশীদের কাছ থেকে প্রত্যাশার চেয়ে কম সহযোগিতা পাওয়া গেছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, অন্যান্য নানা ইস্যুর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের আলাদা আলাদা স্বার্থ রয়েছে।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন-২০২৪’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর নিজেদের স্বার্থ রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে চীনের কাছে মিয়ানমার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে ভারত চিন্তা করেছে রাখাইনের কালাদান প্রকল্প তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর প্রবেশাধিকারের জন্য জরুরি। তাই এই প্রকল্পের জন্য ভারতের কাছে মিয়ানমারের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখার কোনো বিকল্প নেই। এমন এক প্রেক্ষাপটে আমরা পরিস্থিতির বলি হয়েছি। কাউকে দায়ী না করেই বলতে পারি, সবাই নিজের স্বার্থ দেখবে। এতে করে রোহিঙ্গা সঙ্কট দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, শিগগিরই এবং খুব সহজে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান হবে বলে মনে হচ্ছে না। অর্থাৎ সুরঙ্গের শেষ প্রান্তে আলো দেখা যাচ্ছে না। এই সমস্যা আমাদের জন্য বড় ধরনের বোঝা তৈরি করেছে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্যই হুমকি হয়ে থাকবে না, তা ছড়িয়ে পড়বে অন্যখানেও। রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান না হলে এটা বাকি বিশ্বের জন্য ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা অনেক উঁচুতে, কিন্তু ধৈর্য একেবারেই কম মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি পরিবর্তনে ফল আসতে সময় লাগে। আমি বিশ্বাস করি, নানা সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের আরো কিছুটা ধৈর্য ধরা প্রয়োজন। রাজনীতিবিদ, তরুণ প্রজন্মসহ সমাজের সব অংশের জন্য এই ধৈর্যের প্রয়োজন রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল