গৌরীপুরে সাবেক এমপিসহ ১৩৬ জনের নামে মামলা

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় আরো দু’টি মামলা হয়েছে। মামলায় সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নিলুফার আঞ্জুম পপিকে প্রধান আসামি রেখে স্থানীয় সাংবাদিকসহ ১৩৬ জনকে এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়ও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরো তিন শ’ জনকে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মীর্জা মাজহারুল আনোয়ার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওই মামলায় বৃহস্পতিবার গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাওহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো: শফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও অপর একটি মামলায় বোকাইনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হেলিমকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ সাহা, পৌর সভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, সবেক প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সঞ্জিত দাস, সাবেক পৌর মেয়র মো: শফিকুল ইসলাম হবি, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন মনোজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গৌরীপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন জুয়েল, যুবলীগ নেতা ও গৌরীপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু কাউছার চৌধুরী রন্টি, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য সাংবাদিক এইচ এম খায়রুল বাসার, সাংবদিক শামীম খান, ময়মনসিংহ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তানজির আহমেদ রাজিব, পৌর যুবলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান মিথুন, গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাওহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো: শফিকুল ইসলাম শফিক, সহনাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন কাদের রুবেল, বোকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল মুক্তাদির শাহীন, বোকাইনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হেলিম, গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহদফতর সম্পাদক মো: এনামুল হক সরকার, গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌস, তার স্ত্রী রোজী আক্তার, ডৌহাখলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল হক সরকার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নাজিমুল ইসলাম শুভ ও বুলেট সোহাগ।

থানা সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার গোয়ালাকান্দা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক ফকির ছায়েদ আল শহিদ বাদি হয়ে গত ৪ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলা দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) গৌরীপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি রুজু করা হয়। এ মামলায় ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। অপর দিকে গৌরীপুর ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব ও চান্দেরসাটিয়া গ্রামের আমিনুল ইসলামের পুত্র আরিফুজ্জামান বাদি হয়ে গত ৬ অক্টোবর জেলা দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র স্পেশাল জজ মমতাজ পারভীনের আদালতে অভিযোগটি দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে গত ৯ নভেম্বর বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি রুজুু করা হয়। মামলয় ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
মামলায় এজাহার সূত্রে জানা যায়, এজাহারে উল্লিখিত আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পরের যোগসাজশে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গত ৪ আগস্ট গৌরীপুর পৌর শহরের পাটবাজার মোড়ে ও শ্যামগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন প্রতিহত করতে হামলা-ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মীর্জা মাজহারুল আনোয়ার জানান, মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি শফিকুল ইসলাম ও আব্দুল হেলিমকে গ্রেফতার করে পৃথক মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।