অন্তর্বর্তী সরকারের পথে সুপ্ত বিপদের আভাস দিলো ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিনে গৃহীত সংস্কার ও অন্যান্য বিষয়কে মূল্যায়ন করে ‘এ নিউ এরা ইন বাংলাদেশ : দ্য ফার্স্ট হান্ড্রেড ডেজ অব রিফর্ম’ শীর্ষক দীর্ঘ ৩৭ পৃষ্ঠার রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে। বেলজিয়ামভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি রিপোর্টে বলেছে- গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার তিন মাস পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা আরো স্পষ্ট হচ্ছে। একই সাথে তাদের সামনে এগুনোর পথে সুপ্ত বিপদেরও আভাস পাওয়া যাচ্ছে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকার আরো এক বছর, সম্ভবত এর চেয়েও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করবে বলে মনে হচ্ছে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের পর শাসনব্যবস্থার উন্নতির এবং ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এক প্রজন্মের সামনে এমন সুযোগ একবারই আসে। বাংলাদেশ এমন সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগ আরেকটি স্বৈরাচারী সরকারের উত্থানের পথ বন্ধ করতে পারে।
রিপোর্টে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার হোঁচট খেলে বাংলাদেশ আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে অথবা সামরিক শাসনের দিকে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত বাস্তবসম্মত সময়সীমার মধ্যে সংস্কার শেষ করে একটি নতুন নির্বাচন দেয়া। এ সময় ১৮ মাসের বেশি বা দেড় বছরের বেশি হওয়া উচিত নয়। নতুন পদক্ষেপের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলার তাগিদ দেয়া হয়েছে। দেশের বাইরের পক্ষগুলোকে সহায়তার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে বলা হয়েছে, ভারতের উচিত বাংলাদেশের জনগণের মাঝে তাদের ভাবমূর্তি মেরামতে কাজ করা।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ আরো বলেছে, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শেখ হাসিনা ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছিলেন। গণঅভ্যুত্থানে তার পতন হয়েছে। এখন পর্যন্ত ড. ইউনূস ও তার সহকর্মীদের প্রতি ব্যাপক সমর্থন আছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে তার সামাজিক সমর্থনের ভিতকে শক্তিশালী রাখতে দ্রুত কিছু অর্জনের দিকে নজর দেয়া উচিত- যখন এই সরকার মূল সংস্কারগুলো ঘিরে ঐকমত্য গড়ে তুলছে এবং দেশকে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করছে। জাতীয় রাজনীতিতে একটি নতুন যুগের সূচনায় সাহায্য করতে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে ড. ইউনূস প্রশাসনকে সমর্থন দেয়া উচিত আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, হাসিনার বিদায়ে যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছিল তা টিকে আছে। কিন্তু সামনের পথের রূঢ় বাস্তবতা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাজে অবস্থায় থাকা অর্থনীতি ধীরে এগোচ্ছে। এক মাসের বেশি সময়ের বিক্ষোভ এবং ক্ষমতা হস্তান্তর ঘিরে অনিশ্চয়তায় সেটি আরো ধাক্কা খেয়েছে। ইউনূসের সরকার প্রধানত বিক্ষোভ-বিরোধী দমনপীড়নে ব্যাপকভাবে জড়িত একটি পুলিশ বাহিনীর ওপর নির্ভর করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হিমশিম খাচ্ছে। সমর্থন ধরে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এর বিদ্যমান আইনে জোড়াতালি দেয়া আইনি ভিত্তির কারণে।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনও হবে অনেক বড় অর্জন। আর অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে এ যাবৎকালের সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক হলেও এর অনেক সদস্যের সরকার ও প্রশাসন পরিচালনায় তেমন অভিজ্ঞতা নেই। প্রধান রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সমর্থন ধরে রাখা ইতিমধ্যেই চ্যালেঞ্জিং প্রমাণিত হচ্ছে। কেউ কেউ আগাম নির্বাচনের সুবিধার জন্য অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি ড. ইউনূসের মিত্ররাও সাংবিধানিক সংস্কার ও হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য জবাবদিহিতার মতো বিষয়গুলো নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করে আসছেন। যদিও হাসিনার দল এখন বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে, তবু ড. ইউনূসকে আওয়ামী লীগপন্থী গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের বাধার মুখেও পড়তে হতে পারে।
এতে আরো বলা হয়, পূরণ করা তো দূরের কথা, আকাশচুম্বী জনপ্রত্যাশা সামলানোই চ্যালেঞ্জিং। অভিজ্ঞতা বলে, অন্তর্বর্তী সরকার যত বেশি ক্ষমতায় থাকতে চাইবে, আগাম নির্বাচনের দাবি তত জোরদার হবে এবং তাদের বৈধতা নিয়ে আরো বেশি সন্দেহ দেখা দেবে। ড. ইউনূস সমাজের দুর্বল গোষ্ঠীগুলোকে আঘাত করতে পারে এমন অর্থনৈতিক সংস্কার এবং হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি কতটুকু করবেন- এমন বিষয়সহ অ-জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন। অনেক বাংলাদেশী আওয়ামী লীগের নিপীড়নের প্রতিশোধ নিতে চান। এ প্ররোচনায় ড. ইউনূস সঠিকভাবেই প্রশ্রয় দিতে আগ্রহী নন।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, যদিও চ্যালেঞ্জ প্রচুর, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের সামনে অভূতপূর্ব এক সুযোগ এনে দিয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে দু’টি দল- হাসিনার আওয়ামী লীগ ও তার চরম প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। পালাক্রমে সরকার গঠন করেছে তারা। উভয়েই রাষ্ট্রীয় অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহার করেছে। দলীয় গুন্ডাবাহিনী লালন করেছে। নির্বাচনী নিয়ম-কানুনকে বিকৃত করেছে। ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে সুবিধাভোগী চক্র তৈরি করেছে। কিন্তু হাসিনা এসব কৌশলকে চরম পর্যায়ে নিয়ে যান এবং বাংলাদেশের মানুষকে অনেক দূরে ঠেলে দেন। ফলে তিনি ভবিষ্যৎ সরকারগুলোর ওপর আরো শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ আরোপ ও ভারসাম্য স্থাপনে অন্তর্বর্তী সরকারকে এক প্রজন্মে একবার মেলে- এমন এক অবাধ সুযোগ করে দিয়েছেন। আসন্ন সার্বিক সংস্কারের প্রধান লক্ষ্য হলো বিগত ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদ এবং অনুগত অযোগ্যদের দিয়ে গঠিত প্রশাসন ব্যবস্থা যাতে ফিরে আসতে না পারে তা নিশ্চিত করা।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, ড. ইউনূসের টিম লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কতটা সফল হতে পারবে যদিও তা স্পষ্ট নয়, বিকল্পগুলো সুখকর নয় বলেই মনে হচ্ছে। একটি আগাম নির্বাচন সম্ভবত ক্ষমতা কিছুটা কাটছাঁট করে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনবে। দলটির অতীত কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেরই সংশয়- আওয়ামী লীগের চেয়ে তারা তেমন ভালো কিছু করে দেখাতে পারবে? রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উল্লেখযোগ্যভাবে অবনতি হলে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে। এতে সামরিক শাসনামলের সূচনা হবে। ড. ইউনূসের সরকারকে যারা দুর্বল করতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে এই সরকার সবচেয়ে ভালো সুরক্ষা হবে অব্যাহতভাবে নিজেদের কাজের সুফল দিয়ে যাওয়া। এটি এই সরকারকে জনসমর্থন ধরে রাখতে সাহায্য করবে, যখন তারা গভীর সংস্কারে হাত দেবে। দ্রুত অর্জনগুলোর মধ্যে থাকতে পারে সরকারি সেবার ক্ষেত্রে ছোটখাটো দুর্নীতি মোকাবিলা, বিদ্যুৎ সরবরাহে উন্নতিসাধন এবং নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য কমানো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা