১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক গভীর করতে আগ্রহী আজারবাইজান

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজারবাইজানের বাকুতে প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সাথে বৈঠক করেন : পিআইডি -

- প্রধান উপদেষ্টার সাথে আজারবাইজান প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক আরো গভীর ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আগ্রহী। অন্য দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, তেলসমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে আরো বেশি বাংলাদেশীর কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকা উচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের শিপবিল্ডিং শিল্পে শত শত বাংলাদেশি কাজের সুযোগ পেয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট জানান, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক আরো গভীর করার ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করতে তার সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল আগামী বছরের প্রথম দিকে বাংলাদেশ সফর করবে। তিনি উল্লেখ করেন, তার সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উভয় দেশের জন্য বাড়তি সম্ভাবনা দেখতে পাওয়ায় ঢাকায় একটি আবাসিক দূতাবাস খোলার সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে।
প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ জুলাই-আগস্ট মাসের ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের প্রশংসা করে বলেন, তিনি কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি জানান, আজারবাইজানে একটি যুব স্বনির্ভর কর্মসূচি চলছে, যা অধ্যাপক ইউনূসের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত। তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে বলেন, ‘আপনার কাজটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তবে আমি জানি আপনি এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে পারবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা দুই দেশের মধ্যে আরো দৃঢ় সম্পর্কের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেলে উভয় দেশই সমৃদ্ধ হবে। ড. ইউনূস বলেন, আজারবাইজান ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। তিনি বাংলাদেশের সাথে তাদের ডিজিটালাইজেশনের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং তুরস্ক ও আজারবাইজানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আমানুল হক উপস্থিত ছিলেন।
শ্রম খাত সংস্কার করার প্রত্যয়
বাসস জানায়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তার সরকার দেশের তৈরি খাতে আরো বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করার প্রয়াসে শ্রম খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করবে। আজারবাইজানের বাকুতে কপ-২৯ বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সাথে বৈঠককালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করার সময় অধ্যাপক ইউনূস তাকে বলেন, ‘শ্রম ইস্যুটি আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের অন্যতম এবং আমরা সব শ্রম সমস্যার সমাধান করতে চাই।’
থেরেসা মে বাংলাদেশের সাথে শ্রম ইস্যুতে কাজ করার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সাথে মানবপাচার ও অভিবাসন ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেন। অধ্যাপক ইউনূস আইনি মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অভিবাসন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি ঝুঁকি ও অনিয়মিত অভিবাসন কমিয়ে দেবে এবং মানবপাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে।
অধ্যাপক ইউনূস থেরেসা মে’কে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় বাংলাদেশী তরুণদের আঁকা গ্রাফিতি ও ম্যুরাল-বিষয়ক বই আর্ট অব ট্রায়াম্ফের একটি অনুলিপি উপহার দেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজিবিষয়ক সিনিয়র সচিব ও মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, তুরস্ক ও আজারবাইজানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আনামুল হক উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে ব্রাজিলের সেকেন্ড লেডির বৈঠক : বাসস জানায়, ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরালদো আলকমিনের স্ত্রী লু আলকমিন গতকাল বৃহস্পতিবার কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকে তারা দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ব্রাজিলের সেকেন্ড লেডি ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসকে নিয়ে রচিত তার লেখা একটি বই প্রধান উপদেষ্টাকে উপহার দেন। তিনি জানান, অধ্যাপক ইউনূসের কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তার বইগুলো অনুবাদ করেছেন এবং সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগ চালু করেছেন। অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement