উপদেষ্টা নিয়োগের পূর্ণ এখতিয়ার প্রধান উপদেষ্টার : ফখরুল
- ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
- ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৩
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা আর একটা বিপর্যয় এফোর্ট করতে পারি না এ মুহূর্তে, কারণ আমাদের মাথার ওপর কিন্তু সবচেয়ে বড় বিপদ আছে। ফ্যাসিবাদের যিনি মূল হোতা (শেখ হাসিনা) তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। আর ভারত আমাদের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটা প্রচারণা চালিয়েই যাচ্ছে। এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। আমাদেরকে সতর্ক থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। না হলে জাতি হিসেবে আমরা অনেক বড় বিপদের মুখে পড়তে পারি। গতকাল বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়িস্থ নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার যে কাজটা সফলভাবে করেছে তা হলো তারা জাতিকে বিভক্ত করেছে। এ বিভক্তিটা দূর করে আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি চাই। আমাদের মতামত ভিন্ন থাকতেই পারে, গণতান্ত্রিক দেশে এমন থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঐক্যটা জরুরি। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে আমরা ৬৩টি রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলন করেছি, ডান বাম মধ্যপন্থী সব একসাথে। সে দিক থেকে আমরা বলব অনেকটা কাজ হয়েছে। একটা চূড়ান্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয় অর্জিত হয়েছে। এখন আমাদের যেটা দরকার তা হলো এ সরকার একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, একটা লেভেলে প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে যেন সবাই সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে। সংস্কারের নামে সব সেক্টরে হাত দেয়ার দরকার নেই। সেটা নির্বাচিত পার্লামেন্টই করবে। আওয়ামী লীগ যেসব লোকগুলোকে নিয়োগ দিয়েছিল তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ লোক নিয়োগ করা, বিচার বিভাগকে নিরপেক্ষ করা দরকার। তা হলেই নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব। বিগত সরকার ১৭ বছরে দেশে যে পরিমাণ জঞ্জাল তৈরি করে গেছে তা সরানো সতেরো দিনে সম্ভব না, সতেরো মাসেও সম্ভব না। এ জন্য সময় প্রয়োজন। জাতি হিসাবে আমাদের অসহিষ্ণু হলে চলবে না, আরো সহনশীল হতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করছে, তাদের সে সময়টুকু দিতে হবে।
সাম্প্রতিক ৩ উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত বিচক্ষণ, মেধাবী এবং যোগ্য মানুষ। তিনি যাকে প্রয়োজন মনে করবেন তাকেই উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করবেন। তবে বিএনপির পরামর্শ থাকবে, এ ব্যাপারে যেন তারা সতর্ক থাকেন, নিয়োগে যেন বিতর্কিত কাউকে না নেয়া হয় বা কোনো বৈষম্য না রাখা হয়। এ ব্যাপারে ভুল হয়ে থাকলে তারাই সেটা সংশোধন করবেন বলে আমরা আশা করি।’
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করেছি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি সম্ভব না। থানায় কাজে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা বিএনপি নেতাদের দিয়ে ফোন করাতে বলেন, এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, সারা দেশে আমাদের পরিষ্কার নির্দেশ দেয়া আছে, কখনোই কোনো নিয়ন্ত্রণ করা বা প্রশাসনের কারো ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করার মধ্যে আমরা নেই। এমন কথা যদি কোনো অফিসার বলে থাকে তাহলে এটা তার অন্যায়।
নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষ কী চায় তা সরকারকে জানতে হবে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বিষয়টিতে সরকারের কাজ করা উচিত। অনেকেই অনেক কথা বলছে, কেউ সরকারকে না করে দিচ্ছে। কেউ কেউ সরকারকে ফ্যাসিস্টদের দালাল দোসর বলছে। এতো অধৈর্য হলে তো চলবে না, আমাদেরকে আরো সহনশীল হতে হবে।
এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সহসভাপতি আল মামুন আলম, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, অর্থ সম্পাদক ও পৌর সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, সেক্রেটারি তারিক আদনান, সদর থানা সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন তুহিনসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি কার্যালয়ের নির্মিতব্য ভবনের কাজের উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল।