যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বিশ্বে ঈর্ষা সৃষ্টি করলেও মার্কিনিরা হতাশ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২০
আমেরিকানরা মার্কিন অর্থনীতির বিকাশের সুবিধা পাচ্ছে না। যদিও কেউ কেউ খরচ স্থিতিশীল করার বিষয়ে আশাবাদী, অন্যরা বলেছে যে উচ্চ মূল্য আর্থিকভাবে তাদের ওপর চেপে বসছে। নতুন চাকরির তরঙ্গ, শক্তিশালী ভোক্তা ব্যয়, নিম্ন সুদের হার, মূল্যস্ফীতি হ্রাস, ব্যবসায়িক বিনিয়োগের চিত্তাকর্ষক স্তর এবং পুঁজিবাজারে রেকর্ড ওয়াল স্ট্রিট মুনাফার উচ্চতা মার্কিন অর্থনীতি বিশ্বে ‘ঈর্ষা’ সৃষ্টি করলেও অনেক আমেরিকান এটা খুব কমই অনুভব করে।
বরং আমেরিকানরা মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে কিভাবে ইউরোপে চলে যাওয়া যায়। অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় জয়ের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্ভাব্য ট্রান্সআটলান্টিক ব্রেন ড্রেনকে পুঁজি করা উচিত। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন অর্থনীতির আরো ১২টা বাজাবে বলে অনেক নাগরিকের দৃঢ় বিশ্বাস।
প্রাক্তন ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী এনরিকো লেটা ফরাসি রেডিওতে বলেছেন, প্রতি বছর ইউরোপীয় সঞ্চয়কারীরা মার্কিন স্টক মার্কেটে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ইউরো পাঠায়, কারণ সেখানেই তাদের ব্যাংকগুলো তাদের কার্যক্রমকে কেন্দ্রীভূত করে। এই অর্থ মার্কিন কোম্পানিগুলোর মূল্যায়ন বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে তারা ইউরোপীয় সংস্থাগুলোকে কেনার জন্য অর্থায়ন করতে সক্ষম হতে পারে।
ইলন মাস্ক, যিনি ট্রাম্পকে নির্বাচন করতে সাহায্য করার জন্য কমপক্ষে ১৩০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন, এরইমধ্যে তিনি তার বিনিয়োগের রিটার্ন দেখতে পাচ্ছেন। নির্বাচিত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স পরামর্শ দিয়েছেন যে, ইইউ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো থেকে বের হয়ে আসতে পারে। এনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে হোক, কিছু নতুন ধরনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা এক্স-এর উপর ভবিষ্যৎ নিষেধাজ্ঞা, এটি এমন কোনো লড়াই নয় যা থেকে ইইউ পিছিয়ে যেতে পারে। কারণ ইউরোপীয় গণতন্ত্রের অস্তিত্ব নিজেই ঝুঁকিতে রয়েছে।
ট্রাম্প তার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার আকাক্সক্ষার কোনো কথা গোপন রাখেননি, হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী; বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক এবং ছাত্র। তিনি সাংবাদিক, প্রতিবাদকারী, বিচারক, অভিবাসী এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সহিংসতা উৎসাহিত করেছেন এবং বিচার বিভাগ এমনকি সামরিক বাহিনীকে তাদের উপর বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নর্থ ক্যারোলাইনার একজন জলজ বিশেষজ্ঞ, জিম হোয়াইট (৬২) বাইরে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেছেন, আমি কখনই বাড়ির মালিক হবো না। একটি নতুন গাড়ি অচিন্তনীয়, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ধনীকে আরো ধনী করে তুলছে। বাকি সবাই ডুবে যাচ্ছে।
অধিকাংশ মার্কিনির ধারণা মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে, তাদের আয় আবাসন, খাদ্য, শিশু যতœ, বীমা, স্বাস্থ্যসেবা, জ্বালানি, সাবস্ক্রিপশনের জন্য ক্রমবর্ধমান খরচের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে না। মুদ্রাস্ফীতি কমানোর বিষয়ে কয়েক মাসের ইতিবাচক শিরোনাম দেখে খুব কম লোকই মুগ্ধ বলে মনে হয়েছে। অ্যারিজোনার ৭০-এর দশকের একজন মহিলা, যিনি এখনো পার্টটাইম কাজ করেন, তিনি বলেন, এটি এমন নয় যে দাম কমেছে, তারা আগের মতোই বেড়ে চলেছে। সল্ট লেক সিটির একজন ৩৬ বছর বয়সী মহিলা যিনি গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন, তিনি বলেন, প্রাক-মহামারীর তুলনায় আমাদের মজুরির জন্য দাম এখনো অনেক বেশি। এমনকি যারা অনুভব করেছিলেন যে অর্থনীতি খুব ভালো করছে তারা জীবনযাত্রার অত্যধিক উচ্চ ব্যয়ের অভিযোগ করেছে।
তবে মিসৌরি থেকে ৪০ বছর বয়সী রোক্সান ওশ বলেছেন, ‘ভালো চাকরি পাওয়া যাচ্ছে, সুদের হার কমেছে এবং আরো নিচে নামবে এবং মুদ্রাস্ফীতি কমে গেছে। মনে হচ্ছে অনেক ভালো খবর আছে। কিন্তু তার পরও বেশির ভাগ মানুষ এখনো একই স্তরের আর্থিক নিরাপত্তা উপভোগ করতে পারে না যা তারা প্রকাণ্ড কোভিড মহামারীতে পেয়েছে।
বিভিন্ন তরুণের পাশাপাশি যারা তাদের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিল তাদের মধ্যে ছিল কয়েক ডজন পেনশনভোগী এবং সামাজিক নিরাপত্তায় বেঁচে থাকা মানুষ, যাদের জন্য নতুন নিম্ন সুদের হার খারাপ খবর। নিউ ইয়র্ক থেকে অবসরপ্রাপ্ত ৭১ বছর বয়সী পল আমেস বলেন, সঞ্চয়ের ওপর সুদ কমছে, যা স্থায়ী আয়ের ওপর অবসরপ্রাপ্তদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। উত্তর ফ্লোরিডার একজন অবসরপ্রাপ্ত মহিলা টনি, যিনি অর্থনীতি সম্পর্কে খুব ইতিবাচক বোধ করেন কারণ স্টক মার্কেটে তার বিনিয়োগ ভালোই মুনাফা করছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য উন্নত অর্থনীতির তুলনায় অনেক ভালো করছে। গ্যাস এখনও ইউরোপের তুলনায় অনেক সস্তা। হনলুলু থেকে ৬৯ বছর বয়সী টিমোথি ক্রাউলি বলেন, এটি দুর্দান্ত। বিনিয়োগ আয় বাড়ছে। এটি পৃথিবীর সেরা অর্থনীতি।
নিউইয়র্ক সিটি, মিয়ামি এবং মিলওয়াকিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে উত্তরদাতারা তাদের সম্প্রদায়ের গৃহহীনতার ক্রমবর্ধমান মাত্রার দিকে নির্দেশ করেছেন এবং অনুভব করেছেন যে, মার্কিন অর্থনৈতিক ট্রিকল-ডাউন মডেলটি ভেঙে গেছে। স্থপতি, আইনজীবী, প্রকৌশলী এবং চিকিৎসক, এরা আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে চিন্তিত, তারা অবসরের জন্য সঞ্চয় করতে অক্ষম। ওয়াশিংটনের একজন বিপণন পেশাদার ৩৪ বছর বয়সী জুলিয়া বলেন, ‘এটি ভয়াবহ। মৌলিক প্রয়োজনের জন্য এতটা খরচ করা উচিত নয়। আমি কাজ ছাড়া আর কিছু করতে পারি না এবং এখন জিমে যেতে পারি, কোনো সামাজিক জীবন নেই, কোনো পরিকল্পনা নেই, কোনো সঞ্চয় নেই।’
আইডাহোর একজন বুককিপার কারিনা ইউটজ, ৫৪ বলেছেন, ‘ইউএস অর্থনীতি’ বেশির ভাগ আমেরিকানদের জন্য একটি অর্থবহ বা দরকারি ধারণা নয়, মুদ্রাস্ফীতি ভয়াবহ। আইডাহোর প্রায় ৪০ শতাংশ লোক বসবাসের খরচ বহন করতে অক্ষম। বরং এখন তা বেড়েছে। উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার অবসরপ্রাপ্ত প্রতিবন্ধী মেলিসা বলেন, ‘সবকিছুই খুব দামি, আমার ভাড়া আমার সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধার চেয়ে দ্রুত বাড়ছে এবং খাবারের দামও অনেক বেশি। আমার গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎসাসেবা খুবই কম এবং অত্যন্ত নিম্নমানের।’