১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভারতে শেখ হাসিনার ১০০ দিন সামনেই বা কী?

ভারতে শেখ হাসিনার ১০০ দিন সামনেই বা কী? -


ভারতের ভিভিআইপিদের মতো সর্বোচ্চ ‘জেড প্লাস প্লাস’ ধরনের নিরাপত্তা পাচ্ছেন হাসিনা। তবে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে হয় বলে তার নিরাপত্তার আয়োজনও কিছুটা ভিন্ন ধাঁচের। ‘অপ্রত্যাশিত অথচ অতি গুরুত্বপূর্ণ’ অতিথি শেখ হাসিনার জন্য ভারত নিরাপত্তায় তিনটি মূলনীতি অনুসরণ করছে। এক. ‘বেয়ার মিনিমাম, প্লেইন ক্লোদস, নো প্যারাফারনেলিয়া!’ যার অর্থ হলো যেটুকু না-হলে নয়, শেখ হাসিনাকে সেটুকু নিরাপত্তাই দেয়া হয়েছে, সাদা পোশাকের রক্ষীরাই তার চার পাশে ঘিরে রয়েছেন (জলপাই-রঙা উর্দির কমান্ডো বা সেনা সদস্যরা নন), আর গোটা বিষয়টির মধ্যে কোনো আতিশয্যের বালাই রাখা হয়নি! মানে ঢাকঢোল পিটিয়ে বা ঘটা করে তাকে কোনো নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে না, বরং পুরো জিনিসটাকে খুব নিচু তারে বেঁধে রাখা হয়েছে। দুই. ‘ইন হার কেস, সিক্রেসি ইজ দ্য সিকিওরিটি!’ সোজা কথায়, তার বেলায় গোপনীয়তাই হলো নিরাপত্তা! এটারও অর্থ খুব সহজ- শেখ হাসিনার অবস্থানের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষার ওপর, কারণ তিনি কোথায়, কিভাবে আছেন এটি যত গোপন রাখা সম্ভব হবে, ততই তার নিরাপত্তা নি-িদ্র করা সহজ হবে।
তিন. ‘মুভমেন্টস অ্যান্ড ভিজিটস অ্যাজ লিটল অ্যাজ পসিবল!’ শেখ হাসিনাকে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া, কিংবা তার সাথে অন্যদের দেখা করানোর ব্যবস্থা- এটাও যতটা সম্ভব এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে শেখ হাসিনার মুভমেন্টস বা ভিজিটস যে পুরোপুরি বন্ধ নয়, ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা থাকে তার সাথে সেটি মাত্রায় তুলনীয় হলেও আয়োজনে একেবারেই অন্য রকম!

শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে, এর অর্থ হলো তার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্বও কিন্তু এখন ভারতেরই কাঁধে। সেখানে সামান্য কোনো ভুলচুক হলেও তার দায় ভারতের কাঁধেই আসবে এবং সেটা দিল্লির জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর হবে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দিল্লিতে এসে নেমেই, সে দিনই সন্ধ্যায় কংগ্রেসের একদা মুখপাত্র শর্মিষ্ঠা মুখার্জি নিজের এক্স হ্যান্ডল থেকে একটি টুইট করেন। তাতে তিনি লিখেন, ‘স্টে সেফ অ্যান্ড স্ট্রং, হাসিনা আন্টি। টুমরো ইজ অ্যানাদার ডে, মাই প্রেয়ার্স আর উইথ ইউ!’ আসলে শর্মিষ্ঠা মুখার্জির আর একটা পরিচয় হলো, তিনি ভারতের মৃত সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কন্যা। খুব ছোটবেলায় শেখ হাসিনার পরিবারের সাথে তার যে নিবিড় ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল, তা আজও এতটুকু ম্লান হয়নি।
আমরা জানতে পেরেছে, গত এক শ’ দিনের ভেতর তার পুরনো পরিচিত এই ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে কেউ কেউ শেখ হাসিনার সাতে সামনাসামনি দেখা করারও সুযোগ পেয়েছেন; যাতে তাদের ভিভিআইপি অতিথি মানসিকভাবেও চাঙ্গা থাকেন!
গত মাসতিনেকে শেখ হাসিনার সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কথিত ফোনালাপের বেশ কিছু অডিও ‘ভাইরাল’ হয়েছে, যাতে একপক্ষের কণ্ঠস্বর হুবহু শেখ হাসিনার মতোই শোনাচ্ছে। ভারত যদিও এসব ‘ফাঁস’ হওয়া অডিও নিয়ে সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে একাধিক পদস্থ সূত্র একান্ত আলোচনায় স্বীকার করেছেন এগুলো বাস্তবিকই শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর!

দিল্লির নর্থ ব্লকের একজন কর্মকর্তা আবার বলছেন, ‘আমি জানি না এটি এআই দিয়ে বানানো হয়েছে নাকি শেখ হাসিনার নিজেরই গলা, তবে তার তো পরিচিতদের সাথে কথাবার্তা বলায় কোনো বিধিনিষেধ নেই, এখন কেউ যদি সেই আলাপ রেকর্ড করে লিক করে দেয়, তাতে আমাদের কী করার আছে?’
ভারতে কোনো কোনো পর্যবেক্ষকের ধারণা, হাসিনা যাতে নিজের দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে তাদের মনোবল ধরে রাখতে পারেন, সে জন্য দিল্লিই এসব কথাবার্তা হতে দিচ্ছে এবং পরে সুযোগ বুঝে তা ‘লিক’ও করে দিচ্ছে, যাতে তা যত বেশি সম্ভব লোকের কাছে পৌঁছাতে পারে!
এর আসল কারণটা যা-ই হোক, বাস্তবতা হলো শেখ হাসিনা ভারতে কোনো গৃহবন্দীও নন বা রাজনৈতিক বন্দীও নন। ফলে দেশ-বিদেশে তার পরিচিতদের সাথে কথাবার্তা বলার সুযোগ তিনি পাচ্ছেন। তবে ভারতে যখন কোনো রাজনৈতিক নেতা গৃহবন্দী হন, তার বাইরের দুনিয়ার সাথে যোগাযোগের অধিকারও কার্যত কেড়ে নেয়া হয়! পাঁচ বছর আগে কাশ্মিরে ৩৭০ ধারা বিলোপ করার পর ওমর আবদুল্লাহ বা মেহবুবা মুফতিদের যখন গৃহবন্দী করা হয়, তারা কিন্তু দলের নেতাকর্মীদের সাথে দেখা করা তো দূরস্থান; মোবাইল বা ইন্টারনেট সংযোগও পাননি!
দিল্লিতে থাকা মেয়ে সাইমা ওয়াজেদ বা ভার্জিনিয়াতে থাকা ছেলে সজীব ওয়াজেদের সাথেও হাসিনার প্রায় রোজই যোগাযোগ হচ্ছে। নিউজ চ্যানেল, খবরের কাগজ বা ইন্টারনেটেও তার সম্পূর্ণ অ্যাকসেস আছে। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের যে নেতাকর্মীরা পালিয়ে ভারতে চলে এসেছেন তাদের কারো কারো সাথে শেখ হাসিনার যোগাযোগ হলেও এরা কেউই সশরীরে (ইন পারসন) দলনেত্রীর সাথে দেখা করার সুযোগ পাননি। শেখ হাসিনা যাতে এখনই নিজের বয়ানে কোনো প্রকাশ্য রাজনৈতিক বিবৃতি না দেন, সে জন্যও তাকে ভারতের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তার মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উসকানি দিতে চাইছে এটি যাতে কেউ বলতে না পারে, সে জন্যই দিল্লির এই সতর্ক অবস্থান! আর যেহেতু শেখ হাসিনার নিজস্ব কোনো ভেরিফায়েড ফেসবুক বা এক্স অ্যাকাউন্টও নেই, ফলে এটাও দিল্লির স্বস্তির একটি কারণ, যে সেখানেও তার কোনো পোস্ট আসছে না!

কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পুনর্বাসন কি আদৌ সম্ভব? এই অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে দিল্লি কী ভাবছে? ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী মনে করেন, এ কাজটি শুধু কঠিন নয়, খুবই কঠিন! এখনো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সে দেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে, তাদের দলীয় সংগঠনও ছত্রভঙ্গ! শেখ হাসিনার বয়স আজকের চেয়ে ১০টি বছর কম হলে তবু হয়তো মনে করা যেত তিনি দেশে ফিরে দলের হাল ধরবেন কিন্তু এ মুহূর্তে সেটি প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।
কিছু দিন আগে ফাঁস হওয়া একটি অডিওতে শেখ হাসিনার মতো কণ্ঠস্বরে একজনকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমি (বাংলাদেশের) খুব কাছাকাছিই আছি, যাতে চট করে ঢুকে পড়তে পারি!’ গত সপ্তাহে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীও হয়তো ভাবছেন, তাদের নেত্রীর দেশে ফেরা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা! দিল্লির সাউথ ব্লকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার কথায়, ‘পিচ এখনো প্রতিকূল, বল উল্টোপাল্টা লাফাচ্ছে। এরকম সময় চালিয়ে খেলতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে! এখন বরং ধৈর্য দেখানোর সময়, ফলে প্রতিপক্ষের লুজ বলের জন্য অপেক্ষা করাটাই শ্রেয়,’ক্রিকেটের উপমা দিয়ে হাসতে হাসতে যোগ করেন তিনি! রাজনীতির উইকেটে পোড় খাওয়া ব্যাটার শেখ হাসিনাও নিশ্চয় এটি জানেন এবং সেই অনুযায়ী উপযুক্ত সুযোগ এলে তবেই সেটি কাজে লাগাবেন। এক শ’ দিনের মাথায় ভারতও আপাতত এটুকুতেই তাদের ভাবনা সীমিত রাখছে!


আরো সংবাদ



premium cement
ইন্দুরকানীতে তাফসির মাহফিলে সাঈদীর মামলার স্বাক্ষী সুখরঞ্জন বালি কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে ইরানে জাতিসঙ্ঘের পরমাণু প্রধান সরিষাবাড়ীতে গোসল করতে নেমে আনসার সদস্যের মৃত্যু বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালের উদ্বোধন ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের ভাষা বুঝতে হবে’ চলমান সংস্কারের সাথে বিএনপির ৩১ দফার মিল আছে : মির্জা ফখরুল খাগড়াছড়ির উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা কারাগারে সাংবাদিকদের ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশে বাধা ইউএনও ইলোরার পেশাদার সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার : এম আব্দুল্লাহ কার বুদ্ধিতে ফারুকী-বশিরউদ্দীনকে উপদেষ্টা বানালেন, প্রশ্ন মান্নার পাকিস্তানে পৃথক সেনা অভিযানে ১২ উগ্রবাদী নিহত

সকল