অশান্ত মনিপুরে কারফিউ
নিহত ১১ : শিক্ষা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঊহৃ- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৩
নতুন করে অশান্ত ভারতের মনিপুর রাজ্য। দেশটির কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফের গুলিতে ১১ কুকি বিদ্রোহী নিহত হওয়ার পর সোমবার রাত থেকেই কারফিউ জারি করা হয় রাজ্যটির জিরিবাম জেলায়। রাতে পার্শ্ববর্তী পশ্চিম ইম্ফল জেলায় সশস্ত্র কুকিরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনায় দু’জন সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সেই সাথে মঙ্গলবার জিরিবামে একটি দগ্ধ বাড়ি থেকে দুই বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার হয়েছে। আনন্দবাজার ও এনডিটিভি।
গতকাল মঙ্গলবারও কারফিউ ছিল জিরিবাম জেলার বেশ কিছু এলাকায়। গোটা জেলাজুড়েই থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছিল। আসামের সীমান্তবর্তী এই জেলাতেই সোমবার দুপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফের শিবিরে হামলা চালায় একদল ব্যক্তি। সিআরপিএফ পাল্টা গুলি চালালে হামলাকারীদের ১১ জন নিহত হন। ভারতের কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি, নিহতরা সবাই কুকি যোদ্ধা। তাদের ছোড়া গুলিতে সিআরপিএফের এক জওয়ানও গুরুতর আহত হয়েছে। তিনি আসামের শিলচর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি।
সোমবার রাতেও বন্দুকযুদ্ধ চলেছে পশ্চিম ইম্ফলেও। সেখানে কুকি বিদ্রোহীদের গুলিতে আহত হন দু’জন। পাশাপাশি, মঙ্গলবার সকালে জিরিবামের একটি বাড়ির ভেতর থেকে দুই বৃদ্ধের দগ্ধ লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানায় স্থানীয় পুলিশ। এর পরই জিরিবাম জেলাজুড়ে জারি হয়েছে কারফিউ। অন্য দিকে, ১১ জন ‘গ্রাম স্বেচ্ছাসেবক’-এর মৃত্যুতে একাধিক জায়গায় বন্ধ ঘোষণা করে কুকি গোষ্ঠীগুলো।
এক বিবৃতিতে পুলিশ বলেছে, আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশ হামলাকারীদের তীব্রভাবে বাধা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে, এর আগে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। হামলাকারীরা জিরিবাম জেলা শহরের নিকটবর্তী ওই থানায় হামলা চালানোর পর গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় হামলাকারীদের গুলিতে এক সেনা আহত হন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের দেয়া বিবৃতিতে পুলিশ বলেছে, ‘গোলাগুলি থামার পর ওই এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে কথিত সশস্ত্র জঙ্গিদের ১০ জনের লাশ ও অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।’ এরপর রাতে পাহাড়ি এলাকায় ও ইম্ফল উপত্যকায় ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তবে এই ১০ জনের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মঙ্গলবার মনিপুরের জাতিগত সংগঠনগুলো স্কুল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে প্রতিবাদ জানায়। তারা মনিপুরের পাহাড়ি জেলাগুলোতে স্থানীয় সময় ভোর ৫টা থেকে পরবর্তী ১১ ঘণ্টার জন্য বনধের ডাক দেয়। রাস্তায় কোনো যানবাহন না চলায় পাহাড়ি জেলাগুলোর জনজীবন স্তব্ধ হয়ে পড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। কুকি সম্প্রদায়ের নেতারা জানিয়েছেন, যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা স্থানীয় গ্রামগুলোর স্বেচ্ছাসেবক, তারা হামার নৃগোষ্ঠীর সদস্য। সম্প্রতি এক সশস্ত্র হামলায় একজন নারী নিহত হওয়ার পর থেকে পাহাড়িদের গ্রামগুলো রক্ষার জন্য তারা ওই এলাকায় টহল দিচ্ছিল।
সম্প্রতি ভারতের মনিপুরে মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে মনিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে প্রচুর গোলাবারুদ ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করার কথা জানায় পুলিশ ও আধাসেনার যৌথবাহিনী। এর মাঝে গত মাসের শুরুতেই মনিপুরে আরো ছয় মাসের জন্য বর্ধিত হয়েছে ‘সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন’ (‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ বা আফস্পা)-এর মেয়াদ। ইম্ফল, বিষ্ণুপুর, জিরিবাম এবং লামফেল-সহ ১৯টি থানা এলাকা ছাড়া গোটা রাজ্যেই এই আইনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে মনিপুরের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে এখনো রাজনৈতিক উত্তেজনা চলছেই।
২০২৩ সালের মে থেকে মনিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই ও সংখ্যালঘু কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা চলছে। অর্থনৈতিক সুবিধা ও কোটা নিয়ে বিরোধ থেকে এ দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। মনিপুরের মেইতেই জনগোষ্ঠী প্রধানত উপত্যকাগুলোতে বসবাস করে আর কুকিরা বাস করে পাহাড়ে। দুই জনগোষ্ঠীর আবাসভূমিকে একটি ‘বসতিহীন ভূখণ্ড’ দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী এই ভূখণ্ডটি পাহারা দিয়ে রাখে। গত বছরের মে মাস থেকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ৩২ লাখ জনসংখ্যার মনিপুরের ৬০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
শান্তি ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বিরেন সিং। সেই সাথেই তিনি জানিয়েছেন যে, চুপ করে বসে নেই মনিপুর সরকারও। সোমবার মনিপুরের রাজধানী ইম্ফলে একাধিক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটে। এর রেশ কাটার আগেই ফের অশান্তির ঘটনা ঘটেছে বিষ্ণুপুর এলাকায়। তার ফলে সেখানে কারফিউ শিথিল করার যে কথা ঘোষণা করা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। গত ৩ তারিখ থেকেই অশান্ত মনিপুর। হিংসা এবং বিক্ষোভ ঠেকাতে সেখানে ইন্টারনেট সাসপেন্ড করার সাথে কারফিউ জারি করাও হয়। পরে কারফিউতে শিথিল করা হলেও এখনো সাসপেন্ড করা আছে ইন্টারনেট।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা