শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারে রেড নোটিশ জারির জন্য ইন্টারপোলকে চিঠি
আহত তরুণের বুকে গুলি করে হত্যা : ৪ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১১
গণ-অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারে রেড নোটিশ জারির জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পুলিশিং সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিস। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গত পরশু দিন রেড নোটিশ পাঠানোর জন্য বা রেড অ্যালার্ট জারি করার জন্য ইন্টারপোলকে অনুরোধ করেছি। এক সময়কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন মামলার আসামি, তিনি পলাতক আছেন দেশের বাইরে। তাকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইন্টারপোলের যে নিয়ম আছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা চিফ প্রসিকিউটরের অফিস থেকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। তিনি (শেখ হাসিনা) যেহেতু মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত, তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা পেন্ডিং আছে। বাংলাদেশের সীমানার বাইরে তিনি চলে গেছেন, সে কারণে আন্তর্জাতিক পুলিশিং সংস্থা হিসেবে ইন্টারপোল যাতে তাকে গ্রেফতার করার ব্যবস্থা করে, অন্তত তার ব্যাপারে রেড অ্যালার্ট জারি করে, সে ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়েছে।
কিভাবে পাঠিয়েছেন এমন প্রশ্নে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এটি যোগাযোগ করার দায়িত্ব পুলিশের আইজিপির। আমরা সরাসরি লিখেছি ইন্টারপোলের কাছে- এটিই যাবে। এর আগে গত রোববার পলাতকদের ধরতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ‘রেড নোটিশ’ জারি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। ওই দিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কার কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব পলাতক আসামিকে বিচারের মুখোমুখি করতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করতে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শতাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত সব গুমের অভিযোগ তদন্ত চেয়ে ট্রাইব্যুনালে অর্ধ শতাধিক আবেদন করা হয়েছে। অন্য দিকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ছাত্র আন্দোলনে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য ভুক্তভোগীদের পরিবারের পক্ষে আড়াই শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রথমে ৪৬ জন এবং পরে ১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এ দিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ সাবেক ১০ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, একজন বিচারপতি, একজন সচিব, পাঁচজন পুলিশ ও এক সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ২০ জনকে গ্রেফতার দেখাতে বলেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব, বিচারপতিসহ ১৪ জনকে আগামী ১৮ নভেম্বর এবং ছয়জন সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাকে ২০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া গ্রেফতার সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, সাবেক ঢাকা জেলা এসপি আবদুল্লাহ হিল কাফী, সাভারের ওসি আবুল হাসান এবং পুলিশ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম, আরাফাত হোসেনকে ২০ নভেম্বর আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে।
গত ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান হাইকোর্টের বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার। আর সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান হাইকোর্টের বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এর আগে চিফ প্রসিকিউটরসহ প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা নিয়োগ দেয়া হয়।
আহত তরুণের বুকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৪ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় গণহত্যার অভিযোগে তৎকালীন ওসিসহ (তদন্ত) চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, চার পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছিলাম। আদালত সেটি মঞ্জুর করেছেন। এ চারজনের মধ্যে একজন হলেন যাত্রাবাড়ী থানার ওসি-তদন্ত জাকির হোসেন। ক্যামেরায় একটা দৃশ্য ধরা পড়েছিল যে, একজন তরুণকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখনো সে বেঁচে ছিল। তার পায়ে গুলি লেগেছিল। সেই ছেলেটিকে কাছ থেকে যিনি বুকে গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করে এবং পরবর্তীতে তার লাশকেও নানাভাবে বিকৃত করেন, সেটি হচ্ছে যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি-তদন্ত জাকির হোসেন। এখন তিনি পলাতক আছেন। এই জাকির হোসেনসহ আরো তিনজন পুলিশ অফিসার যারা যাত্রাবাড়ীর ঘটনায় জড়িত বলে অকাট্য প্রমাণ পেয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছিলাম। আদালত সেটি মঞ্জুর করেছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা