বিশ্বে জলবায়ু সঙ্কট ও সঙ্ঘাতে ১২ কোটি শরণার্থী সতর্ক করল জাতিসঙ্ঘ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৯
সারা বিশ্বে জলবায়ু বিপত্তিতে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ মিলিয়ন বা ১২ কোটিতে। জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, এক দিকে জলবায়ু পরিবর্তন ক্রমবর্ধমান শরণার্থী সঙ্কট সৃষ্টি করছে আবার এ সঙ্কটের সাথে যোগ হয়েছে সঙ্ঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া বিপুল মানুষের সংখ্যা। বিষয়টি নিয়ে আলজাজিরার এক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের জোরপূর্বক গৃহহীন মানুষের তিন-চতুর্থাংশ জলবায়ু ঝুঁকিতে আছে এমন দেশগুলোতে বাস করে।
গত এক দশকে সঙ্ঘাত থেকে পালিয়ে আসা লোকের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ১২০ মিলিয়নেরও বেশি হয়েছে, তাদের মধ্যে ৯০ মিলিয়ন জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপদের উচ্চ থেকে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে এমন দেশগুলোতে বাস করছে। বাস্তুচ্যুত লোকের অর্ধেকই মিয়ানমার, সোমালিয়া, সুদান এবং সিরিয়ার মতো দ্বন্দ্ব এবং গুরুতর জলবায়ু বিপত্তি দ্বারা প্রভাবিত অবস্থানে রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে ১০ লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশে।
জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য, জলবায়ু পরিবর্তন একটি কঠোর বাস্তবতা যা তাদের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। জলবায়ু সঙ্কট এমন অঞ্চলে বাস্তুচ্যুতকে চালিত করছে যেখানে ইতোমধ্যে সঙ্ঘাত ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষকে আশ্রয় নিতে হয়েছে, তাদের দুর্দশা আরো জটিল করে তুলছে এবং তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে হচ্ছে।’
প্রায় সাত লাখ মানুষ সুদানের যুদ্ধ থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী চাদে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশটি বছরের পর বছর ধরে শরণার্থীদের আতিথেয়তা করেছে; কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নিজেই অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভয়াবহ বন্যার কারণে যারা সুদানে রয়েছেন তারা আরো বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
মিয়ানমার থেকে আসা ৭০ শতাংশেরও বেশি শরণার্থী বাংলাদেশে নিরাপত্তা চেয়েছে, যেখানে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাকে চরম ঝুঁকি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। দক্ষিণ সুদানে বসবাসকারী প্রাক্তন শরণার্থী ও জলবায়ু কর্মী গ্রেস ডোরং বলেছেন, আমাদের অঞ্চলে, যেখানে এত বছর ধরে বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, আমরা আমাদের চোখের সামনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। এই প্রতিবেদনে জনগণের কণ্ঠস্বর সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, যদি সুরাহা না করা হয়, তাহলে জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বহুবিধ প্রভাব আরো খারাপ হবে। কিন্তু তারা যদি আমাদের কথা শোনে, আমরাও সমাধানের অংশ হতে পারি।
আজারবাইজানে কপ২৯ জলবায়ু সভায় জাতিসঙ্ঘের এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধি সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করছেন, যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মতো বড় দেশগুলো সেখানে উচ্চ-স্তরের প্রতিনিধি পাঠায়নি। এ সম্মেলন এমন একসময় হচ্ছে যখন চলতি বছরে তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙার পথে রয়েছে, জলবায়ু তহবিল নিয়ে একটি খণ্ডিত বিতর্ক জরুরি হয়ে উঠেছে। কারণ দরিদ্র দেশগুলো ফোরামে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক তহবিলের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি চাচ্ছে।
আলজাজিরার সাথে একটি সাক্ষাৎকারে, টেকসই শক্তিবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ প্রতিনিধি দামিলোলা ওগুনবিই বলেছেন, তার মূল প্রত্যাশাগুলোর মধ্যে একটি হলো জলবায়ু অর্থায়নের ভূমিকা। পরিচ্ছন্ন পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে আমাদের বিনিয়োগের একটি রেকর্ড-ব্রেকিং বছর রয়েছে। যা-ই হোক এ ধরনের বিনিয়োগের মাত্র ১৫ শতাংশ গ্লোবাল সাউথ বা দরিদ্র দেশগুলোতে যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নির্বাচন এই ইভেন্টে নতুন করে জরুরি অনুভূতি যোগ করেছে। কেননা গ্লোবাল ওয়ার্মিং সীমিত করার লক্ষ্যে প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা