গাজা-লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধ দাবি সৌদির
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭
গাজা ও লেবাননে ইসরাইলি সামরিক আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। রিয়াদে আরব ও মুসলিম নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। আলজাজিরা জানায়, গতকাল সোমবার আরব লীগ ও অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন বা ওআইসির যৌথ শীর্ষ সম্মেলনে দেয়া এক ভাষণে ফিলিস্তিনি ও লেবাননের জনগণের বিরুদ্ধে সঙ্ঘটিত গণহত্যার নিন্দা করেছেন এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি ক্রাউন প্রিন্স। তিনি ইসরাইলকে ‘আর কোনো আগ্রাসন থেকে বিরত থাকার’ আহ্বান জানান এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
একইভাবে লীগ অব আরব স্টেটস বা আরব লীগের সেক্রেটারি জেনারেল আহমদ আবুল গায়ছ গাজা ও লেবাননে ইসরাইলের সামরিক অভিযানের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়; ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের গৃহীত পদক্ষেপ দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জনের প্রচেষ্টা ক্ষুণœ করছে। ন্যায়বিচারের মাধ্যমেই আমরা স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরাইলি সহিংসতার প্রতি ‘বিশ্ব চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।’
সৌদি প্রেস এজেন্সি বলেছে, গাজা এবং লেবাননে ইসরায়েলের ‘আগ্রাসন’ আরব ও ইসলামিক নেতাদের জরুরি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে আগ্রাসন বন্ধ করা, বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করা, ফিলিস্তিনি ও লেবাননের জনগণকে সহায়তা প্রদান, চলমান হামলা বন্ধ করতে এবং স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করা।
এ সম্মেলন গাজা ও লেবাননে ইসরাইলের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ বন্ধ করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত অক্টোবরের শেষ দিকে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্ঘাত নিরসনে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য চাপ প্রয়োগে একটি ‘আন্তর্জাতিক জোটের’ প্রথম বৈঠকের সময় সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকালের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল।
সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, গাজা ও লেবাননে ইসরাইলের আগ্রাসন আরব ও মুসলিম নেতাদের জরুরি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। সৌদি রাষ্ট্র পরিচালিত আল-আখবারিয়া নিউজ চ্যানেলে একটি ফুটেজ সম্প্রচার করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, সম্মেলনে যোগদানের জন্য নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা তিনুবু এবং লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি রিয়াদে পৌঁছেছেন। তা ছাড়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফও উপস্থিত হয়েছেন।
সম্মেলনে বিশেষ কিছু বিষয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিতে আলোচনা করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিন ও লেবাননে আগ্রাসন বন্ধ করা, বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান, ফিলিস্তিনি ও লেবাননের জনগণকে সহায়তা প্রদান, চলমান হামলা বন্ধ করতে এবং স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করা।
কায়রোভিত্তিক আরব লীগ ও জেদ্দাভিত্তিক অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) রিয়াদে গত বছরও এমন শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। সেখানে নেতারা গাজায় ইসরাইলি কর্মকাণ্ডকে ‘বর্বর’ বলে নিন্দা করেছিলেন। তবে তারা ইসরাইলের সাথে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একমত হতে পারেনি। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্কটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য এবারের সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।
যোগ দেননি পেজেশকিয়ান : এ দিকে অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে পারেননি ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। তবে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে ফোনে পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইরানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ সম্মেলনে যোগ দেবেন। অন্য দিকে পেজেশকিয়ানের সাথে আলাপকালে ইরানের জনগণকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)।
গত রোববার সন্ধ্যায় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সাথে এক ফোনালাপে তিনি এ সম্বোধন করেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। টেলিফোন আলাপে দুই নেতা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সঙ্কট, বিশেষত গাজা ও লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রভাব এবং সমাধানের সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে মতবিনিময় করেন। এ ছাড়া ইরানি জনগণের সমৃদ্ধি ও সাফল্য কামনা করেছেন।
ইরনা জানায়, আলোচনায় সৌদি যুবরাজ ও ইরানি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ধারাবাহিক অগ্রগতি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত নিয়ে কথা বলেন। দুই দেশের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পর এটি ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ। ফোনালাপে সৌদি যুবরাজের ‘ভাই’ সম্বোধন ইরান-সৌদি সম্পর্কের আরো উষ্ণতার প্রতীক হয়ে দেখা দিয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে আস্থা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ দিকে রিয়াদ সম্মেলন মধ্যপ্রাচ্যের ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্কট সমাধানে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং গাজা ও লেবাননের জনগণের ওপর চলমান আগ্রাসন বন্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। টেলিফোনে আলাপে একপর্যায়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ইরান সফরের আমন্ত্রণ জানান, যা সৌদি যুবরাজ সম্মানের সাথে গ্রহণ করে বলেন, ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সফর করা আমার জন্য গর্বের বিষয় হবে।’ এই আমন্ত্রণের মাধ্যমে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও সম্পর্ক আরো জোরদার করার ইঙ্গিত মিলেছে।
ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কের এই নতুন ধাপকে অনেকেই ঐতিহাসিক বাঁক হিসেবে দেখছেন। বছরের পর বছর বৈরী সম্পর্ক থাকার পর সৌদি আরব ও ইরান এখন একসাথে কাজ করতে ইচ্ছুক। গাজা ও লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এই সম্মিলিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুধু দুই দেশের জন্য নয় বরং গোটা অঞ্চলের জন্যই একটি শান্তি প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন করতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা