সিরিজ হেরেই গেল বাংলাদেশ
- জসিম উদ্দিন রানা
- ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪
শারজায় সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়া হলো না বাংলাদেশের। তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকারের ব্যাটে ভালো শুরু পেলেও দ্রুতই ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে ১৪৫ রানের জুটি গড়ে সফরকারীদের টেনে তোলেন মেহেদী হাসান মিরাজ (৬৬) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৯৮)। তাদের দুজনের ব্যাটে শেষ পর্যন্ত ২৪৪ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। জবাবে ১৩৬ বলে প্রথম শতরান এবং ১২৪ বলে দ্বিতীয় শতরান করে আফগানরা। ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজের ১০১ এবং ওমরজাইয়ের ৭০ রানের সুবাদে ৯ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌছে যায় আফগানিস্তান। ৫ উইকেটের এই জয়ে তিন ম্যাচের মাঝে ২-১ এ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিলো গুরবাজ বাহিনী। আর বাংলাদেশ হারল টানা তিন সিরিজ।
বাংলাদেশের দেয়া মাঝারি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রানের চাকা ঘোরাতে থাকেন দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও সেদিকউল্লাহ অটল। ইনিংসের অষ্টম ওভারে সেদিকউল্লাহকে (১৪) বোল্ড করে নিজের প্রথম উইকেট তুলে নেন নাহিদ। এরপর অল্পের জন্য গুরবাজ জীবন পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমানের বলে। ১২তম ওভারে তার করা পঞ্চম বলটি লেগে খেলার চেষ্টা করলেও বল ব্যাটের কানায় লেগে পয়েন্টের দিকে গেলে রিশাদ হোসেন ডাইভ দিয়েও মুঠোয় জমাতে পারেননি। অবশ্য মোস্তাফিজ সেই আক্ষেপ পূরণ করেছেন রহমত শাহকে ফিরিয়ে। পুল করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে নিজেই ক্যাচ তুলে দেন রহমত (৮)।
এরপর গুরবাজ ৬০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিলেও হাশমতুল্লাহ শাহিদীকে (৬) থিতু হতে দেননি মোস্তাফিজ। এরপরই মিরাজের বলে কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলেন গুরবাজ। তবে বলটি ওয়াইড হলেও স্টাম্পিং করতে পারেননি জাকের আলী। ১১৭ বলে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন গুরবাজ। এটি ওয়ানডেতে তার তৃতীয় সেঞ্চুরি। অবশ্য সেঞ্চুরির পর গুরবাজকে নিজের প্রথম শিকার বানান মিরাজ। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ নেন জাকির হাসান। ১২০ বলে ৫ চার ও ৭ ছক্কায় ১০১ রানে ফিরেন এ ওপেনার। ৩৮.৪ ওভারে ৫ উইকেটে আফগানদের রান ১৮৮।
এরপর গুলবাদিন নাইব ১ রানে আউট হন নাহিদ রানার বলে টপ এজ হয়ে উইকেটের পেছনে জাকের আলীকে ক্যাচ দিয়ে। অন্যপ্রান্তে ওমরজাই। তিনি ৫৭ বলে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন মোহাম্মদ নবি। শেষ পর্যন্ত ৪৮.২ ওভার ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান করে সিরিজ নিজেদের করে নেয় আফগানিস্তান। ওমরজাই ৭৭ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ৭০ রানে এবং মোহাম্মদ নবী ২৭ বলে ৫ চারে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন। মোস্তাফিজ ও নাহিদ রানা দুটি করে এবং মিরাজ একটি উইকেট নেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই উইকেট হারাতে পারতো বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ফজলহক ফারুকির অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে চেয়েছিলেন তানজিদ। গুলবাদিনের হাতে ক্যাচ গেলেও সেটা লুফে নিতে পারেননি। চতুর্থ ওভারেও বাঁহাতি ওপেনারকে ফেরানোর সুযোগ ছিল আফগানিস্তানের সামনে। গাজানফারের বলে সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে ক্যাচ দিলেও শর্ট মিড উইকেট ক্যাচ ছেড়েছেন হাশমতউল্লাহ। জীবন পাওয়ার পর সৌম্যকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন তানজিদ। তাদের দুজনের ব্যাটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশ পার করে বাংলাদেশ। যদিও ওমরজাইয়ের বলে চার মেরে জুটির পঞ্চাশ ছোঁয়ার ওভারে সাজঘরে ফিরেছেন সৌম্য (২৪)। আরেক ওপেনার তানজিদ জীবন পেয়েও সেটাকে কাজে লাগাতে পারেননি (১৯)।
নাজমুল হোসেন শান্তর চোটে একাদশে সুযোগ পাওয়া জাকিরও ফিরেছেন দ্রুতই (৪)। একটু পর আউট হয়েছেন হৃদয়ও। পুরো সিরিজে ব্যাট হাতে রানের দেখা না পাওয়া হৃদয় ফিরেছেন ৭ রান। ৭২ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মিরাজ ও মাহমুদুল্লাহ। তাদের দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে বিপদ কাটে বাংলাদেশের। মিরাজ একেবারে ধীরগতিতে খেললেও মাহমুদুল্লাহ ছিলেন ওয়ানডে মেজাজেই। দুজনে মিলে এদিন পেছনে ফেলেছেন ১৯৯৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমিনুল ইসলাম ও আকরাম খানের ৭২ রানের জুটিকে।
সবশেষ চার ম্যাচে ব্যাট হাতে রানের দেখা না পাওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মাহমুদুল্লাহকে। ৬৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ব্যাট হাতে সমালোচনার জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। একটু পর পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন মিরাজও। ১০৬ বলে নিজের একশত ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। যদিও হাফ সেঞ্চুরির একটু পরই ফিরেছেন সাজঘরে। ওমরজাইয়ের অফ স্টাম্পের বাইরের স্লোয়ার ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় গুলবাদিনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। ৬৬ রানের ইনিংস খেলে আউট হন মিরাজ। তার বিদায়ে ভাঙে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে ১৪৫ রানের জুটি।
ডানহাতি ব্যাটার ফেরার পর দ্রুতই সাজঘরের পথে হেঁটেছেন জাকের আলী অনিক (১)। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্যামিও ইনিংস খেলা নাসুম আউট হয়েছেন ৫ রানে। শেষ ওভারে এসে সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল মাহমুদুল্লাহর সামনে। তবে সুযোগটা লুফে নিতে পারেননি তিনি। শেষ বলে যখন ৯৭ রানে দাঁড়িয়ে তখন দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়েছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। ৯৭ বওে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় মাহমুদুল্লাহকে থামতে হয় ৯৮ রানে। চার উইকেট নেন ওমরজাই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ২৪৪/৮ (তানজিদ ১৯, সৌম্য ২৪, জাকির হাসান ৪, মিরাজ ৬৬, তৌহিদ ৭, মাহমুদুল্লাহ ৯৮, জাকের আলী ১, নাসুম ৫, শরিফুল ২*, ওমরজাই ৪/৩৭, নবি ১/২৭)।
আফগানিস্তান : ৪৮.৩ ওভারে ২৪৬/৫ (গুরবাজ ১০১, সেদিকুল্লাহ ১৪, ওমরজাই ৭০*, নবী ৩৪, মোস্তাফিজ ২/৫২০, নাহিদ রানা ২/৪০, মিরাজ ১/৫৬)।
ফল : আফগানিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : ২-১ আফগানিস্তান জয়ী।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা