১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ক্যান্সার প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করে পরিচালকের বিদেশ পাড়ি

-

‘ইলেকট্রনিক ড্যাটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় কর্মসূচি’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাতিল ঘোষণা করে পরিচালক চলে গেছেন বিদেশে। প্রকল্পটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এ ব্লকের তিনটি ফ্লোরভিত্তিক পরিচালিত হতো। গতকাল সকাল ১০টার ফ্লাইটে তিনি ব্রিটেন পাড়ি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্য দিকে গতকাল সকালে বিএসএমএমইউ’র এফ ব্লকে অফিস করতে গিয়ে প্রকল্পের কর্মীরা ‘প্রকল্প বাতিল ঘোষণা এবং প্রকল্পের অধীন ৬৯ জন জনবলের চাকরি নেই’ জানার পর তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা হয়। ২৭০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ৬৯ জন জনবল চলতি বছরের গত জুলাই থেকে কোনো বেতন পাননি। এমনকি প্রকল্পটি সরকারের কাছে বুঝিয়ে না দিয়েই প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা: আশরাফুন্নেসা চলে গেলেন।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন তাদের সন্দেহ হচ্ছে যে, অধ্যাপক আশরাফুন্নেসা আর কখনো দেশে ফিরে আসবেন না। কারণ খোঁজাখুঁজি করে তাদের দুর্নীতির যে কিছু প্রমাণ পেয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে প্রকল্পটির অর্ধেক অর্থই তিনি নানাভাবে আত্মসাৎ করে থাকতে পারেন। কারণ তিনি প্রকল্পের বুয়াকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে বুয়ার নামেও বিপুল টাকা ভাউচার করে হাতিয়ে নিয়েছেন। অন্য কর্মকর্তাদের নামে তা আরো অনেক বেশি টাকা তুলে থাকতে পারেন।

প্রকল্পের কল্পোস্কপিস্ট ডা: সাদিয়া মাহবুবা জানান, বুয়ার নামেও প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক আশরাফুন্নেসা প্রতিদিন প্রায় এক হাজার টাকার ভাউচার করেছেন। অফিসে রক্ষিত ভাউচারের কপি থেকে জানা যায়, প্রকল্পের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নামে অনেক টাকা উত্তোলন করেছেন ।

অধ্যাপক আশরাফুন্নেসা জনবলের সবাইকে বলতেন, জনবলের জন্য সরকার থেকে বেতন ছাড়া কোনো ধরনের ভাতা বা সম্মানী নেই, তবে প্রকল্প সমাপ্তির পর একটি ইনস্টিটিউট স্থাপন করে বর্তমান জনবলকে আত্তীকৃত করা হবে। কিন্তু প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাগজপত্র সংগ্রহ করে দেখতে পান যে, মূল বেতন ছাড়াও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য ক্যাম্পে সম্মানী বাবদ প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর জন্য বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ ছিল। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যে নথি ও ভাউচার পেয়েছেন তাতে তারা সম্মিলিতভাবে সাত কোটি টাকার বেশি পাবেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন। এই পুরোটাই প্রকল্প পরিচালক নিজে তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। গত ৭ অক্টোবর এ বিষয়ে এই প্রকল্পের সব জনবল অধ্যাপক আশরাফুন্নেসার সাথে দেখা করে এই বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন মর্মে অভিযোগ করলে তিনি তাদের সাথে আত্মসাতের ঘটনাটি স্বীকার করেন এবং সাথে সাথে এই টাকা তাদের ফেরত দিতেও অস্বীকার করেন। ‘কেন ফেরত দেবেন না’ এই সম্পর্কে আশরাফুন্নেসা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বলেন যে, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ডেস্কের কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ করা’ অডিট সামলানো, গাড়িভাড়া ইত্যাদি কার্যক্রমে ব্যয়ের এই টাকাটা দিতে হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কোন ডেস্কের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে হয়েছে প্রকল্পের জনবলের টাকা দিয়ে তা জানা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিএসএমএমইউ’র অনেকে। এ ব্যাপারে তদন্ত করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন প্রকল্পের ডা: সাদিয়া মাহবুবা।

এ দিকে গত ১০ অক্টোবর থেকে প্রকল্প পরিচালকের কাছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাতা ও সম্মানীর টাকা দাবি করলে বিএসএমএমইউ’র উচ্চপদস্থ কিছু ব্যক্তি প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দেখে নেবেন বলে ‘হুমকি’ দিয়েছেন। এর মধ্যে বিএসএমএমইউ’র গাইনকোলজিক্যাল অনকোলজির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিরিন আক্তার বেগম অন্যতম। এসব বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা: মো: সায়েদুর রহমানকে জানালে তিনি তাদের জানান, এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে দেবেন; কিন্তু গত এক মাসেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। এই প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে নয়া দিগন্তকে জানান, ‘এখন আমরা বুঝতে পারছি বিএসএমএমইউ’রই একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী প্রকল্প পরিচালককে রক্ষায় মাঠে নেমেছেন, যে কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।’

এ ব্যাপারে ভিসি অধ্যাপক সায়েদুর রহমান অথবা গাইনকোলজিক্যাল অনকোলজির অধ্যাপক শিরিন আক্তার বেগমের সাথে চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য জানা যায়নি। তাদের দু’জনের কাউকেই গতকাল সোমবার তাদের অফিস কক্ষে পাওয়া যায়নি। পরে ফোন করা হলে কেউ ফোন ধরেননি। এই প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলছেন, তারা এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement