১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আশুগঞ্জ কনটেইনার নদীবন্দর স্থাপন কেবল ভারতের স্বার্থে : এম সাখাওয়াত

আশুগঞ্জ কনটেইনার নদীবন্দর পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম শাখাওয়াত হোসেন : নয়া দিগন্ত -


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ দ্বিতীয় কনটেইনার নদীবন্দর স্থাপন প্রকল্পকে বিলাসবহুল প্রকল্প উল্লেখ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, এতে আমাদের দেশের কোনো লাভ দেখছি না। কেবল ভারতের স্বার্থেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে আমিতো আর এ প্রকল্প বন্ধ করতে পারব না। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ওই যে, ভাই-বোনের সম্পর্ক বলে একটা কথা আছে না?
গতকাল সকালে আশুগঞ্জ নৌবন্দরে নির্মাণাধীন কার্গো টার্মিনাল ও আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ দ্বিতীয় কনটেইনার নদীবন্দর স্থাপন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে বলেন, যারা এ ধরনের অচিন্তিত প্রকল্প চালু করেছিলেন তাদেরকে প্রশ্ন করা দরকার ছিল যে, কার স্বার্থে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে? এতে আমাদের কী লাভ হচ্ছে? ট্রানজিট আর করিডোর দুটি ভিন্ন জিনিস উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এটি কী? তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল।

পরিদর্শনকালে নৌপরিবহন উপদেষ্টার সাথে ছিলেন, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার জাবেদুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন সুলতানা, আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্যামল চন্দ্র বসাক, নির্মাণাধীন কার্গো টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক আইয়ুব আলী ও আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ দ্বিতীয় কনটেইনার নদীবন্দরের প্রকল্প পরিচালক সাজেদুর রহমান প্রমুখ।
উল্লখ্য, আশুগঞ্জ দিয়ে নদীপথে ভারতকে ট্রানজিট দিয়েছে বিগত শেখ হাসিনা সরকার। তাই বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহারের জন্য আশুগঞ্জকে একটি ট্রানশিপমেন্ট বন্দরে রূপান্তর করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণসহায়তায় বন্দরে স্থাপিত হচ্ছে ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কার্গো টার্মিনাল ও ভারতের এক্সিম ব্যাংকের ঋণসহায়তায় ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো একটি কনটেইনার টার্মিনাল। জমি অধিগ্রহণসহ দু’টি প্রকল্পের ব্যয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, কনটেইনার নদীবন্দর স্থাপিত হলে চট্টগ্রাম, মংলা ও অন্যান্য বন্দর হতে পণ্যবাহী কনটেইনার অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়া যাবে। পাশাপাশি ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় পণ্য পরিবহনে ভারতও এ বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। ফলে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্যিক সুবিধা সৃষ্টি হবে। এছাড়া কলকাতা থেকে নৌপথে আসা পণ্যবাহী কনটেইনার আশুগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে আখাউড়া হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে নেয়া যাবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর থেকে নৌপথে পরিবহন করা কনটেইনার ওঠানামা করতেও এই বন্দর ব্যবহার করা যাবে।

প্রকল্পের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে চর চার তলা ইউনিয়নের মহরমপাড়া গ্রামের নদীতীরে এই বন্দর স্থাপন করা হচ্ছে। ২০২১ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ভারতের অনুরোধে আটবার সময় বাড়ানো হয়েছে। বন্দর নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যেই মোট ১৩ হেক্টর বা ৩২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় কনটেইনার জেটি, মাল্টিপারপাস জেটি ও ইয়ার্ড, ব্রিজসহ এক্সেস রোড, তীর সংরক্ষণ, ট্রানজিট শেড, কার্গো শেড, অফিস ভবন ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও ২৫০ টিপিএইচ ক্ষমতার মোবাইল হারবার ক্রেন ক্রয়ে ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা, কনটেইনারের জন্য একটি মোবাইল হারবার ক্রেন ক্রয়ে ২৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, রেল ওয়াগন বা ট্রাক লোডার ক্রয়ে চার কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ টন লেভেল লাফিং ক্রেন ক্রয়ে ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা, জমি অধিগ্রহণে ৭৮৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা, রেললাইন সংযোগে ৫২ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
এদিকে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়কের চারলেন সড়ক প্রকল্পের কাজ চলছে। বিআইডব্লিউটিএ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা বললেও একে বিলাসবহুল ও কেবল ভারতের স্বার্থের প্রকল্প বলে অভিহিত করেছেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে থেকে এ ব্যাপারে কিছুই করতে পারবেন না এমনটাই প্রকাশ করলেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement