হাইকোর্টে পঞ্চদশ সংশোধনীর শুনানি বুধবার পর্যন্ত মুলতবি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানি বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রুলের ওপর শুনানি চতুর্থ দিনের মতো ওঠে।
এ বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে যে কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা। আর এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল আপিল বিভাগের একটি রায়ের মাধ্যমে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে তিনটি রিভিউ আবেদন দায়ের করা হয়েছে। এই তিনটি রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তির জন্য আগামী ১৭ নভেম্বর আপিল বিভাগে সময় নির্ধারণ করা আছে। একই সাথে হাইকোর্টে পঞ্চদশ সংশোধনীর শুনানি করতে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার সাংবিধানিকতা নিয়ে একই ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অতীতের রীতি অনুযাায়ী সুপ্রিম কোর্টে যেটা নিষ্পত্তির জন্য থাকে এই বিষয়টি হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করা যায় না, সমীচীনও নয়। এই প্রশ্নটি আজ আদালতে উত্থাপিত হয়েছে। একপর্যায়ে আদালত বলেছেন, এই বিষয়ে বিবদমান পক্ষ যারা আছেন সবাই মিলে আলোচনা করবে- করণীয় কী। এই প্রেক্ষাপটে আদালত শুনানি আগামী বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন। আগামী বুধবার শুনানির বাকি অংশ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, আপিল বিভাগে রিভিউ নিষ্পত্তি হলে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তি করতে সহজতর হবে।
তিনি বলেন, আপিল বিভাগে যে মামলা নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষমাণ সেখানে মূল বিষয় হলো শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আর পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ আরো অন্যান্য বিষয় রয়েছে। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিলুপ্তি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে। এটাকেই বাদ দিয়ে যদি আলোচনা করতে হয়, তা হলে আলোচনা যথার্থ হবে বলে আমি মনে করি না।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিএনপির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন শুনানি করেন। শুনানির বিষয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর সংবিধান অনুযায়ী করা হয়নি। এখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়নি। জনগণ যাতে ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে না পারে সে জন্য পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত ১৩তম সংশোধনী মামলায় আপিল বিভাগের রায়ের সময় প্রধান বিচারপতি নিজের মুখে বলেছিলেন আগামী দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। পরবর্তী সময়ে এ মামলার লিখিত রায় প্রকাশের আগেই মাত্র সাত দিন পরে সংবিধান সংশোধন হয়ে গেল। অপর দিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পরে লিখিত রায় দিলেন। তখন আমি সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি হিসেবে বলেছিলাম, এই রায়কে কোনো রায় বলা যায় না এবং যে পঞ্চদশ সংশোধনী হয়েছে সেটি সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। তবে কিছু কিছু বিধান রয়েছে যেগুলো থাকা দরকার। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আমরা লিস্ট করে আদালতে উপস্থাপন করব। এখানে মূল বিষয় হলো- পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধান মোতাবেক হয়নি। এটা সংবিধানবিরোধী হয়েছে।
আদালতে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে ছিলেন- সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তামিম খান।
এর আগে গত ৩০ অক্টোবর প্রথম দিন এবং ৬ নভেম্বর দ্বিতীয় দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ দুই দিন শুনানি করেছেন ড. শরিফ ভূঁইয়া।
গত ১৯ আগস্ট জনস্বার্থে পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তির করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রুল জারি করেন। পরে আবেদনকারী পক্ষ রুলটি শুনানির জন্য বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন কোর্টে উপস্থাপন করেন। এরপর আদালত রুল শুনানির জন্য ৩০ অক্টোবর দিন রেখেছিলেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান রিট করেন। এরপর এ রুলের ওপর মতামত দিতে বিএনপি, জামায়াত, গণফোরাম ও আইনজীবী মোস্তফা আসগর শরিফী প্রমুখ যুক্ত হন।
পঞ্চদশ সংশোধনী আইনে (২০১১) বিভিন্ন বিষয়ের সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা