সৌদি, কাতারে কর্মী যাওয়া বাড়লেও কমেছে আরব আমিরাত ও কুয়েতে
ইউরোপগামী শ্রমিকের খরচ হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা- মনির হোসেন
- ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৮, আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯
বিদেশে জনশক্তি রফতানিতে ফিরেছে গতি। চলতি বছরের আগষ্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে সৌদি আরব, কাতার ও জর্ডানে শ্রমিক যাওয়া বেড়েছে। অপর দিকে একই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবান্ধব দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েতসহ কয়েকটি দেশে শ্রমিক যাওয়ার হার তুলনামূলকভাবে কমেছে। তবে ইউরোপের দেশ ইতালীসহ অন্যান্য দেশে কর্মী যাওয়া কিছুটা বাড়লেও এসব দেশে যেতে টাকা লাগছে অনেক। আবার অনেকে প্রতারিতও হচ্ছেন।
এদিকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারের মধ্যে ওমানসহ কয়েকটি দেশে এখনো শ্রমিক যাওয়া বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় নতুন করে কর্মী যাওয়া শুরু না হওয়ায় শ্রমবাজারে তেমন গতি ফেরেনি বলে মনে করছেন অভিবাসন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা।
ইউরোপের দেশ ইতালী, হাঙ্গেরীসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসা কর্মীদের চাহিদাপত্রগুলো জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে বহির্গমন ছাড়পত্র সম্পন্ন করা হলেও সেখানেও নানা কৌশলে চলছে অনিয়ম দুর্নীতি আর হয়রানির ঘটনা। এই ক্ষেত্রে জনশক্তি ব্যুরোর ভেতরে গড়ে উঠা শক্তিশালী একটি প্রসেসিং চক্র বহির্গমন ছাড়পত্র করে দিয়ে অনিয়ম করার সাথে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এদের মাধ্যমে বহির্গমন শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ‘বাইরে বসে’ ভিসাপ্রতি ছাড়পত্র দেয়ার নামে সরকার নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত আদায় করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বিদেশগামীদের ও তাদের বিদেশে পাঠানোয় সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের দাবি, ‘আমি প্রবাসী এ্যাপস’-এর সাথে জড়িত কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরেই বহির্গমন শাখায় ছাড়পত্র দেয়ার নামে অনিয়ম দুর্নীতি চলছে। বিদেশগামীদের জিম্মি করে চক্রটি অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে অভিবাসন ব্যয় কমানো যাবে না। অথচ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর ডিজি এসব অনিয়ম দেখেও না দেখার ভান করছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে আসছেন।
গত সপ্তাহে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর লিফটের ৬ তলায় খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায় পাসপোর্ট ও বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস হাতে নিয়ে শত শত শ্রমিক লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের অনেকের গন্তব্য ইতালী, হাঙ্গেরী, রোমানিয়া, কাতার, কুয়েত, দুবাই, জাপানসহ নানা দেশ। কেউ কেউ আবার আছেন সিঙ্গাপুরের। তাদেরই একজন সৈকত (ছদ্মনাম। তিনি লিফটে নিচে নামছিলেন। প্রতিবেদকও লিফটে। কোন দেশে যাচ্ছেন জানতে চাইলে সৈকত বলেন, হাঙ্গেরী। কত টাকা খরচ হচ্ছে জানতে চাইলে অকপটে বলেন, ১৫-১৬ লাখ টাকার মতো। এত টাকা কেন লাগছে এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সৈকত চুপ হয়ে যান। এ সময় লিফটে থাকা আরো কয়েকজন বেশি টাকা লাগার কারণ জানতে চান। কিন্তু ওই যুবক কোনো উত্তর না দিয়ে লিফট থেকে নেমে চলে যান।
শুধু সৈকত নন, তার মতো শত শত বিদেশগামী রিক্র্যুটিং এজেন্সি, তাদের মনোনীত দালালদের হাতে জেনে হোক, না জেনে হোক লাখ লাখ টাকা বিদেশ যাওয়ার আগেই তুলে দিচ্ছেন। আর ইউরোপগামী প্রতিটি ভিসায় বহির্গমন ছাড়পত্র করাতে দেশভেদে ২৫-৩০ হাজার টাকা কিছু কর্মকর্তাকে (সিন্ডিকেট) টাকা দিতে হয়। আর এই টাকার মধ্যস্থতা করেন রিক্র্যুটিং এজেন্সির মালিকদের মধ্যে গড়ে উঠা চিহ্নিত সিন্ডিকেটের সদস্য। এ ছাড়া ইউরোপগামী প্রতি শ্রমিকের যেতে কেন ১৫ লাখ টাকা লাগছে সেটি নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
ভুক্তভোগীদের দাবি, ভিসা ক্রয়সহ যারা প্রসেসিংয়ের সাথে জড়িত তাদের মনিটরিং করা উচিত।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফরের সাথে এসব বিষয়ে কথা বলতে তার দফতরে গেলে তার অফিসের সহকারী পরিচালক মো: ফখরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, স্যার কিছুক্ষণ আগেও দফতরে ছিলেন, এখন বের হয়ে গেছেন। পরে তার মোবাইলে কল দিয়েও এই প্রসঙ্গে বক্তব্য নেয়া যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, বিএমইটির ডিজি সালেহ আহমদ মোজাফ্ফর (গ্রেড-১) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদের (বর্তমানে জেলে) পছন্দের একজন কর্মকর্তা হিসেবে বিএমইটিতে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন।
বিএমইটির পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে কতজন শ্রমিক বিদেশে গেছে সেই তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে গতকাল শনিবার পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। তবে সেপ্টেম্বর মাসের হিসাবে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক গেছে মোট ছয় লাখ ৯৮ হাজার ৫৫৮ জন। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে মোট শ্রমিক গেছে ৬৪ হাজার ৬৭৭ জন। তার মধ্যে সৌদি আরবে সর্বোচ্চসংখ্যক শ্রমিক ৪৪ হাজার ২৪৯ জন গেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগষ্ট মাসে কর্মী গিয়েছিল ৫৩ হাজার ৪৬২ জন। তার মধ্যে সৌদি আরবে গিয়েছিল ২৮ হাজার ২৫১ জন। এক মাসের ব্যবধানে ২০ হাজার শ্রমিক দেশটিতে বেশি গেছে। অপর দিকে একইভাবে সেপ্টেম্বর মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬৭৬ জন কর্মী গেলেও আগষ্ট মাসে গিয়েছিল ৫ হাজার ৯৯৯ জন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কর্মী যাওয়ার হার কমেছে পাঁচ হাজারেরও বেশি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা