সমতায় ফিরে স্বস্তিতে বাংলাদেশ
- জসিম উদ্দিন রানা
- ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৭
সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং একেবারে মন্দ হয়নি। যদিও ইনিংসের বড় একটা সময় প্রচণ্ড ধীরগতিতে ব্যাট চালিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তবে শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক নাজমুল শান্তর ফিফটি এবং নাসুম-জাকেরদের ক্যামিওতে লড়াকু পুঁজি পায় টাইগাররা। নির্ধারিত ৫০ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে ২৫২ রান পর্যন্ত পৌঁছেছে বাংলাদেশ। জবাবে আফগানিস্তান খেলতে নামলে টাইগার বোলাররা বরাবরের মতো ছেড়ে কথা বলেনি। পেসার এবং স্পিনারদের দাপটে ৪৩.৩ ওভারে ১৮৫ রানে গুটিয়ে যায় আফগান প্রাচীর। ফলে ৬৮ রানে জয়ে স্বস্তিতে ফেরে বাংলাদেশ। তাতে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতায় ফেরে শান্ত বাহিনী। আগামীকাল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে উভয় দল।
ইনিংসের চতুর্থ ওভার। তৃতীয় বল। তাসকিনের লেন্থ বল বেরিয়ে যাচ্ছিল আউটসাইড অফ দিয়ে। ব্যাট চালিয়ে বসেন গুরবাজ। কানায় লেগে ওয়াইড সিøপ দিয়ে বের হওয়া বল দারুণ ক্যাচে সৌম্য তালুবন্দী করেন। ৮ বলে দুই রান করেন গুরবাজ। প্রথম পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভার। মিরাজের ঘূর্ণিতে খোঁচা দিয়ে বসেন রহমত কিন্তু তালুবন্দী করতে পারলেন না জাকের আলী। ১১ রানে জীবন পান এই ডান হাতি ব্যাটার। পাওয়ার প্লে শেষে এক উইকেটে ৪২ রান আফগানদের।
বোলিংয়ে এসেই নাসুমের উইকেট! লেন্থ বলে সুইপ করেন সেদিকুল্লাহ (৩৯), শর্ট ফাইন লেগে দাঁড়ানো মিরাজ লাফিয়ে উঠে বল তালুবন্দী করেন। রহমত-সেদিকুল্লাহ জুটি ভোগাচ্ছিল বাংলাদেশকে। ৭০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় আফগানিস্তান। এরপর আবার জুটি গড়েছেন রহমত-হাশমতুল্লাহ। রহমতকে আউটের সুযোগ আবার হাতছাড়া করেন জাকের। এবার মিস করেন স্ট্যাম্পিং। ২৪.৫ ওভারে দলটি শতরান পার করে।
২৯তম ওভারের শেষ বলে হাশমতুল্লাহকে সাজঘরে পাঠান মোস্তাফিজ। শর্ট বলে পুল করেন হাশমতুল্লাহ, বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন শরিফুলের হাতে। ১৭ রানে হাশমতুল্লাহর আউটে ভাঙে ৪৮ রানের জুটি। পরের ওভারে ফের আঘাত নাসুমের। ক্রিজে এসে প্রথম বলেই ফেরেন আজমতুল্লাহ। গোল্ডেন ডাক। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা নাসুমের ড্রিফটে পরাস্ত হয়ে সরাসরি বোল্ড। টানা দুই ম্যাচে শূন্যরানে আউট হন এই আফগান ব্যাটার।
একই ওভারে রানআউট হন রহমত। নতুন ব্যাটার নাইব ড্রাইভ করে দৌড় দেন। অপর প্রান্ত থেকে রহমতও যখন দৌড় শুরু করেন তখন নাইব আবার ফেরেন ব্যাটিং প্রান্তে। দু’জনই যখন একই প্রান্ত তখন উইকেটরক্ষক জাকের বল পাঠান বোলিং প্রান্তে। বাংলাদেশের হুমকি হয়ে দাঁড়ানো রহমত ফেরেন ৫২ রানে।
ছয় বলের ব্যবধানে এক রানে তিন উইকেট হারানোর পর চোখ-রাঙানি দিচ্ছিল নবি-নাইবের জুটি। অবশেষে শরিফুলকে ড্রাইভ করতে গিয়ে নাইব ধরা পড়েন কাভারে হৃদয়ের হাতে। নাইবের আউটে ভাঙে ৪১ বলে ৪৪ রানের জুটি। চারটি চার ও একটি ছয়ের মারে ২৬ রান করেন নাইব। জয়ের জন্য আফগানদের তখন প্রয়োজন ৭৮ বলে ৯০ রান। আর বাংলাদেশের চার উইকেট।
শরিফুলের পর মিরাজের আঘাত। নাইবের পর নবির বিদায়। মিরাজের ঘূর্ণি জাদুতে বোল্ড হন নবী (১৭)। তার আউটের পর ক্রিজে আসেন খারোটে। ৪০ ওভার শেষে দলটির রান সাত উইকেটে ১৭৮। ৪২তম ওভারের প্রথম বলে মিরাজকে এগিয়ে এসে মারতে চেয়েছিলেন খারোটি (৪)। বল ফাঁকি দিয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। এবার আর ভুল করেননি জাকের। দ্রুত স্ট্যাম্পিং করেন। রশিদ খানকে মোস্তাফিজ চার রানে এবং নাসুম এক রানে গাজানফারকে ফেরালে ৪৩.৩ ওভারে ১৮৪ রানে থামে আফগানিস্তান। নাসুম তিনটি, মোস্তাফিজ ও মিরাজ দু’টি করে, শরিফুল ও তাসকিন একটি করে উইকেট পান।
এর আগে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটাররা দেখেশোনে খেলার চেষ্টা করেন। তবে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ওপেনার তানজিদকে হারায় বাংলাদেশ। ২২ রানে তাকে ফেরান প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের জয়ের নায়ক স্পিনার গাজানফার। দ্বিতীয় উইকেটে শান্তকে নিয়ে ৭১ রানের দারুণ জুটি গড়েন সৌম্য সরকার। তবে ব্যক্তিগত ৩৫ রানে রশিদ খানের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। যদিও রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন। কারণ রশিদের বল পিচ করেছিল লেগ স্ট্যাম্প লাইনের বাইরে। রিভিউ না নেয়ায় দারুণ সেই জুটির পরিসমাপ্তি ঘটে।
শান্ত দেখেশুনে খেলে ৭৫ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন। তবে তাকে সঙ্গ দিতে নেমে ২২ রানের বেশি নিতে পারেননি সহ-অধিনায়ক মিরাজ। রশিদ খানের বলে স্ট্যাম্প উড়ে গেছে তার। তৌহিদ হৃদয়কে ১১ রানে থামিয়েছেন নানগেয়ালিয়া খারোটে। এ দিকে পঞ্চাশ পেরোনোর পর রান তোলার গতি বাড়ানোর অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন শান্ত। আফগান স্পিনারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান তুলতে বেগ পেতে হয়েছে তার। শেষ পর্যন্ত খারোটের বল শূন্যে ভাসিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন নবিকে। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১১৯ বলে ছয় চার ও এক ছক্কায় ৭৬ রান। একই বোলারের বলে উচ্চাভিলাষী শট খেলে ৯ বলে তিন রানে থামতে হয়েছে মাহমুদুল্লাহকেও।
তবে শেষদিকে নাসুম আহমেদ ও জাকের আলীর জোড়া ক্যামিওতে আড়াই শ’ ছাড়ায় বাংলাদেশের স্কোর। অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নামা জাকের ২৭ বলে ৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। ইনিংসে ছয়ের মার ছিল তিনটি। দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে অভিষেকে তিনটি ছয়ের মারের কীর্তি গড়েন জাকের। তার সঙ্গী তাসকিন অপরাজিত থাকেন দুই রানে। অন্য দিকে গাজানফারের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরার আগে ২৫ রান করেন স্পিনার নাসুম। আফগানিস্তানের খারোটে তিনটি, রশিদ খান ও গাজানফার দু’টি করে উইকট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২৫২/৭ (তানজিদ ২২, সৌম্য ৩৫, শান্ত ৭৫, মিরাজ ২২, তৌহিদ ১১, মাহমুদুল্লাহ ৩, জাকের ৩৭*, নাসুম ২৫, তাসকিন ২*, খারোটে ৩/২৮, রশিদ ২/৩২, গাজানফার ২/৩৫)।
আফগানিস্তান : ৪৩.৩ ওভার ১৮৪/১০ ( সেদিকুল্লাহ ৩৯, রহমত ৫২, গুলবদিন ২৬, নবি ১৭, নাসুম ৩/২৮, মোস্তাফিজ ২/৩৭, মিরাজ ২/৩৭, তাসকিন ১/২৯, শরিফুল ১/৪৫)।
ফল : বাংলাদেশ ৬৮ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : নাজমুল হোসেন শান্ত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা