রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত পুলিশ বাহিনী গঠন সময়ের দাবি : নৌউপদেষ্টা
- বাসস
- ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৫
পুলিশকে মানবিক হিসেবে গড়ে তুলতে একটি ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠন অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। গতকাল শনিবার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) সিন্ডিকেট হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্সের (এসআইপিজি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘জনমুখী পুলিশ সেবা নিশ্চিতকল্পে পুলিশ কমিশন গঠন ও অন্যান্য সংস্কারের প্রস্তাব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের পুলিশ কমিশন গঠন করা জরুরি, ৮ আগস্টের পর পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের সাথে কথা বলি, এই পুলিশ কমিশন গঠন তাদের সে সময়ের দাবি ছিল। তারা আর রাজনীতিকরণের অংশ হতে চায় না। এক ‘দানবিক পুলিশ’ থেকে ‘মানবিক পুলিশ’ গঠনের ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন অপরিহার্য। জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের পরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত পুলিশ বাহিনী গঠন এখন সময়ের দাবি। যেকোনো উপায়ে পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য পুলিশের সাথে জনগণের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, পুলিশের নিচের দিকের সদস্যদের সুযোগ সুবিধা অত্যন্ত কম। তাদের পদোন্নতির সুযোগ নেই। তারা যে পদে কনস্টেবল যোগদান করে সেই পদে থেকেই অবসরে যায়, যা কাম্য নয়। একজন বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট যখন আর পদোন্নতির কোনো আশা দেখেন না, তখন হতাশ হয়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জানা উচিত কিভাবে তার অধস্তন পুলিশ ডিউটি করে। এ জন্য বিসিএস ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের সারদায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষে এক বছরের জন্য থানায় সংযুক্ত করা যেতে পারে।
পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে জেলাভিত্তিক নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণ না করে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্নে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমার মতে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বাধীন পুলিশ কমিশনের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।
সেমিনার সঞ্চালনা করেন এনএসইউর এসআইপিজি পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হক। আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: রিজওয়ানুল ইসলাম, পলিটিক্যাল সাইন্স এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতানা এ সেমিনারে দেশের পুলিশ সংস্কারের সম্ভাব্য রোডম্যাপ এবং একটি সম্ভাব্য পুলিশ কমিশন গঠনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম জহিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের একজন কনস্টেবল যদি যোগ্য, মেধাবী এবং বিশ্বস্ত হন, তাহলে তাকে সর্বোচ্চ পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ কেন দেয়া হবে না? আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। জনগণের জন্য যা ভালো, তা আমরা বিএনপি থেকে স্বাগত জানাই।
বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন বলেন, মনোবল ভেঙে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের বিষয়টি আমাদের সংস্কারের একটি অংশ হিসেবে গুরুত্ব দিতে হবে।
অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মো: মাহবুবুল করিম বলেন, আমরা পুলিশ কমিশন গঠনের পথে যেতে পারি, তবে পুলিশ সংস্কারকে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। সব সংস্কার প্রচেষ্টাকে একই ধারায় বিবেচনা করা জরুরি, কারণ পুলিশ আমাদের সমাজেরই অংশ। আমাদের একটি জাতীয় শুদ্ধি প্রক্রিয়ার প্রয়োজন।
সেশনের সমাপনী বক্তব্যে ভিসি অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে গবেষণা ও সংলাপ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এনএসইউর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা